বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, যারা আগে আন্দোলনের ডাক দিয়ে মাঠ থেকে সরে যেত, তারাই এখন আঁতাতের রাজনীতি ও ভারতনির্ভর কূটনীতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চায়। বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় কার সাথে কে ব্যবসা করেছে এবং গ্রেপ্তারের পর কে কার জন্য তদবির করেছে, সেই খবর আমাদের কাছে রয়েছে।
অপর এক পোস্টে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি লেখেন, বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা আওয়ামী লীগের সাথে দলটির কোনো দ্বন্দ্ব না থাকার কথা অকপটে বললেন। অথচ তিনি ভুলে গেলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফ্যাসিজম কায়েম করেছে। গুম, খুন ও গণহত্যা করে দেশকে অরাজকতার শীর্ষ চূড়ায় নিয়ে গিয়েছে। এসব অন্যায়-অনাচার ও জুলুম-নিপীড়নের দায় এড়িয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক ব্ল্যাঙ্ক চেক দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাও করলেন না।
আবার তিনিই বললেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করলে বিএনপির কিছু আসে যায় না। অথচ উনি ভুলে গেলেন, এই আওয়ামী লীগই বিগত তিন নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। এই আওয়ামী লীগের কারণেই বিএনপি বিগত সময়ের নির্বাচনগুলো বর্জন করতে বাধ্য হয়েছে।
পোস্টে তিনি আরও লেখেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে দেশের কাঠামোগত পরিবর্তন করার সুযোগ এলেও বিএনপি তা অবমূল্যায়ন করে ১/১১ সরকারের ফর্মুলার আলাপ নিয়ে হাজির হলো। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু করলে দলটি বললো, এই সংস্কার করার ম্যান্ডেট তাদের নেই। অথচ বিএনপি এ কথা ভুলে গেলো যে গণঅভ্যুত্থানের ফলে গঠিত হওয়া সরকারের ম্যান্ডেট ষাট-সত্তরভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়া রাজনৈতিক দলের চেয়েও বেশি।
নতুন রাজনৈতিক দল প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে গণঅভ্যুত্থানের পরে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা জনসমক্ষে উপস্থিত হলো। ঠিক এ কারণেই ফ্যাসিবাদবিরোধী ও জুলাই স্পিরিটকে ধারণকারী ছাত্র-জনতার সম্মিলনে নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান হওয়ার আভাস পেয়ে বিএনপি সেটিকে হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করলো।
একটি জাতীয় দৈনিকের বরাত দিয়ে তিনি লেখেন, ছাত্র-জনতার সম্মিলনে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন বানচাল করতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মাঝে উদ্বেগ ও শঙ্কা আদান-প্রদান হয়েছে। অর্থাৎ বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনরায় আওয়ামী লীগকে অবাধ অনুপ্রবেশ করতে দিলেও নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান দেখতে চায় না।
প্রসঙ্গত, গতকাল প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের কাছে বিবিসি বাংলা জানতে চায়, আপনার কি ধারণা যে, এই সরকারের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসতে পারে?
জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নিরপেক্ষতার প্রশ্ন আসতে পারে। কেননা, এখানে আমরা জিনিসটা লক্ষ্য করছি যে, ছাত্ররা একটা রাজনৈতিক দল তৈরি করার কথা চিন্তা করছেন। সেখানে যদি ছাত্রদের প্রতিনিধি এই সরকারে থাকে, তাহলে তো নিরপেক্ষ থাকতে পারবে না। কিন্তু যদি তারা মনে করে যে, সরকারে থেকেই তারা নির্বাচন করবেন, তাহলে তো রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে না।’
সাক্ষাৎকারটিতে মির্জা ফখরুল আওয়ামী লীগের রাজনীতি, নিরপেক্ষ সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। মূলত এই বক্তব্যের জেরেই হাসনাত আবদুল্লাহ কড়া প্রতিক্রিয়া জানালেন। পাশাপাশি আলাদা আলাদা পোস্টে অন্তর্বর্তী সরকারে ছাত্রদের পক্ষ থেকে থাকা দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:২৪:৩৭ ৬ বার পঠিত