যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর মেয়াদ শেষ হয়েছে।
এই পদে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি চুপিসারেই বিদায় নিয়েছেন এবং বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। বাইডেনের আমলে দক্ষিণ এশিয়ায় বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এই কূটনীতিক।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বেশ নিঃশব্দেই দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর প্রস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথের তিনদিন আগে গত ১৭ জানুয়ারি সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার মেয়াদ সম্পন্ন হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ঘোষণাটিতে স্পষ্ট করা হয়েছে— ডেনাল্ড লু তার পদের মেয়াদ শেষ করেছেন এবং তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। পররাষ্ট্র দপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পোস্ট করা একটি সংক্ষিপ্ত ঘোষণায় বলা হয়েছে, “ডোনাল্ড লুর মেয়াদ ২০২৫ সালের ১৭ জানুয়ারি শেষ হয়েছে”।
সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালনের সময় ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় এই কূটনীতিক দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতিতে বেশ আলোচিত নাম হয়ে উঠেছিলেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে ডোনাল্ড লুর নামই উঠে এসেছিল।
২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে ডোনাল্ড লু পাকিস্তানের সাথে মার্কিন সম্পর্ক তত্ত্বাবধানকারী ব্যুরোর নেতৃত্বে ছিলেন। এছাড়া তৎকালীন পিটিআই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পেছনে মার্কিন এই সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দায়ী করেছিলেন খোদ ইমরান খান।
সেই ঘটনার পর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা সফরে এসেছিলেন ডোনাল্ড লু। আর তারপর থেকে ২০২৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ইস্যুতে নতুন ভিসানীতি প্রকাশসহ নানা কারণে মার্কিন এই কূটনীতিকের নাম অলোচনায় এসেছিল। এছাড়া ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০২৩ সালে ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
মূলত দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক ডোনাল্ড লু দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিকদের মধ্যে নিজের কূটনৈতিক কর্মপদ্ধতির জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন লু।
তবে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অভিযোগের পর দক্ষিণ এশিয়ায় ডোনাল্ড লু নামটি সুপরিচিত হয়ে ওঠে। ২০২২ সালের এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার তার অপসারণের পেছনে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে সরাসরি ডোনাল্ড লুকে অভিযুক্ত করেছিলেন।
ইমরান খান অভিযোগ করেছিলেন, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে তার সরকারকে উৎখাতের জন্য ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রে’ যুক্ত ছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদের মাধ্যমে তাকে হুমকি বার্তা পাঠিয়েছিলেন।
ইমরান খানের বরাত দিয়ে সেসময় সংবাদমাধ্যম দ্য ডন জানিয়েছিল, পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র (ইমরান খানকে) একটি হুমকি বার্তা পাঠিয়েছে। ডোনাল্ড লু পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খান অনাস্থা ভোটে বেঁচে গেলে দেশটিকে পরিণতি ভোগ করতে হবে।
এছাড়া এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন (এমসিসি) কমপ্যাক্টে স্বাক্ষর করার জন্য নেপালকে রাজি করাতে ডোনাল্ড লু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু এমসিসিতে নেপাল যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পূরণ করা দেশটির জন্য বেশ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
তা সত্ত্বেও লু ২০২২ সালে নেপাল সফর করেন এবং চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য নেপালের পার্লামেন্টকে রাজি করান। এছাড়া শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নিমজ্জিত হলে মার্কিন স্বার্থ রক্ষার জন্য রনিল বিক্রমাসিংহেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্বহাল করার ক্ষেত্রে ডোনাল্ড লুর বড় ভূমিকা ছিল বলেও জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন সার্ভিস অফিসার হিসেবে ডোনাল্ড লু ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন সরকারের চাকরি করেছেন। ২০১০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভারতে মার্কিন মিশনের ডেপুটি চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
বাইডেনের আমলে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ডোনাল্ড লু ছিলেন এই অঞ্চলের ওপর নজর রাখা স্টেট ডিপার্টমেন্টের শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক। কিরগিজস্তান এবং আলবেনিয়ায় সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এই কূটনীতিক দুই দফায় নয়াদিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আলবেনিয়ায় দায়িত্ব নেওয়ার আগে লু পশ্চিম আফ্রিকার ইবোলা সংকটের বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের ইবোলা রেসপন্স টিমের উপ-সমন্বয়কারী হিসাবে কাজ করেছিলেন। এছাড়া কর্মজীবনের শুরুতে ডোনাল্ড লু মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ ককেশাস বিষয়ক অফিসের উপ-পরিচালক, ২০০১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় বিষয়ক ব্যুরোতে, ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত নয়াদিল্লিতে পলিটিক্যাল অফিসার হিসেবে, ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত নয়াদিল্লিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে পাকিস্তানের পেশোয়ার কনস্যুলেটে পলিটিক্যাল অফিসার হিসেবেও দায়িত্বপালন করেন লু। এছাড়া চাকরি জীবনের প্রথম দিকে জর্জিয়ার তিবিলিসিতে কনস্যুলার অফিসার হিসেবেও কাজ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৮:২০ ৯ বার পঠিত