পর্যটনে ইকো ট্যুরিজমকে বাস্তবায়ন করতে টানা চার বছর ধরে প্রান্তিক নারীদের হাত দিয়ে ভিনদেশি উচ্চমূল্যের টিউলিপ ফুল চাষ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও)। টিউলিপ ফুল ঘিরে পর্যটনে নতুনমাত্রা যোগ করেছে উত্তরের পর্যটনের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। এ বছরও বাহারি প্রজাতির ৯ জাতের ফুল আবাদ করা হচ্ছে। টিউলিপ দেখতে ভিড় করতে শুরু করেছেন পর্যটকরা। পর্যটকের কথা চিন্তা করে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে টিউলিপ উদ্যান।
দর্জিপাড়ায় ফিতা কেটে রোববার (২৬ জানুয়ারি) বিকেলে টিউলিপ বাগান পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান এবং ইএসডিওর পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার দম্পতি। এখন থেকে দর্শনার্থীরা বাগানে প্রবেশ করে দেখতে পারবেন অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর ভিনদেশি টিউলিপের বাগান।
বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি লাইনে সবুজ পাতার মাঝে মাঝে ফুটতে শুরু করেছে বাহারি প্রজাতির টিউলিপ। গতবারের চেয়ে আরও নতুন করে ৯ প্রজাতির টিউলিপ আবাদ করা হয়েছে। এবারের জাতগুলো হচ্ছে সানি রাজকুমার, পিঙ্ক আর্ডোর, প্যারেড, অক্সফোর্ড, কমলা ভ্যাব বরলশ, ফেরডেক্স, অ্যাপেলডুম, ব্লাশিং এলিট ও মেস্টিক ভ্যান ইউজক। গতবারের জাতগুলো ছিল অ্যান্টার্কটিকা (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল), ডাচ সূর্যোদয় (হলুদ), স্ট্রং গোল্ড (হলুদ), জান্টুপিঙ্ক (গোলাপি), হোয়াইট মার্ভেল (সাদা), মিস্টিক ভ্যান ইজক (গোলাপি), হ্যাপি জেনারেশন (সাদা লাল শেড) ও গোল্ডেন টিকিট (হলুদ)। এসব টিউলিপের সৌন্দর্যে তেঁতুলিয়া হয়ে উঠবে একখন্ড নেদারল্যান্ড। পর্যটনে ইকো ট্যুরিজম যুক্ত হওয়ায় নতুনমাত্রা তৈরি হয়েছে।
জানা যায়, এই ফুলটির বৈজ্ঞানিক নাম ‘টিউলিপা’। এটিকে নেদারল্যান্ডসের ফুল বলা হয়। শীত প্রধান অঞ্চলের টিউলিপ ফুল। যা অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফুল উৎপাদনকারী উদ্ভিদ। এটি বাগানে কিংবা কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়। ফুলদানীতে সাজিয়ে রাখার জন্য এর আবেদন অনন্য। বর্ষজীবি ও কন্দযুক্ত প্রজাতির এ গাছটি লিলিয়াসিয়ে পরিবারভূক্ত উদ্ভিদ। টিউলিপের প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং এদের অসংখ্য সংকর রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের হাইব্রিডসহ টিউলিপের সকল প্রজাতিকেই সাধারণভাবে টিউলিপ নামে ডাকা হয়। টিউলিপ মূলত বর্ষজীবি ও শীত প্রধান দেশের বসন্তকালিন ফুল হিসেবে পরিচিত। এর বীজগুলো ঠিক পিয়াজের মতো। রোপণের ২১-২২ দিনের মধ্যে চারা গজিয়ে ফুল এসে যায়।
চাষি রবিউল ইসলাম ও মুর্শিদা খাতুন বলেন, চতুর্থবারের মতো এ অঞ্চলে নেদারল্যান্ডের রাজকীয় টিউলিপ আবাদ শুরু হয়েছে। প্রথমবার এ অঞ্চলে টিউলিপ চাষ সাফল্যের পর ধারাবাহিকভাবেই প্রতি বছর এখন ভারি শীত মৌসুমে এ ফুলের আবাদ করছেন তারা। প্রান্তিক চাষিদের ফুল চাষে আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভলেভমেন্ট অর্গানাইজেশন ইএসডিও। গত তিন বছর ধরে প্রান্তিক নারীদের স্বাবলম্বী করতে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি। এবার ফুল চাষের পাশাপাশি ইকো ট্যুরিজম হিসেবে বিদেশে শাক-সবজি আবাদ করা হয়েছে।
ইএসডিওর হেড অফ ইনক্লুসিভ মাইক্রোফিন্যান্স আইনুল হক বলেন, এবারও ইউএসডিও দর্জিপাড়ায় প্রান্তিক নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে টিউলিপ ফুলের আবাদ শুরু করেছি। বাগানে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে কয়েক ধরনের ফুল ফুটে গেছে। আগামী জাতীয় দিবস ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস রাঙাবে আমাদের টিউলিপ। মুগ্ধ করবে পর্যটকদের।
ইএসডিওর পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার বলেন, আমরা খুব আনন্দিত যে চতুর্থবারের মতো তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়ায় টিউলিপ চাষ শুরু করতে পেরেছি। আমরা টিউলিপের ব্লাব (বীজ) বপনের উদ্বোধন করেছি। নারী ক্ষমতায়ন বৃদ্ধিতে এ অঞ্চলের প্রান্তিক নারীদের সহযোগিতায় এ বছরও টিউলিপ আবাদ করেছি। আসলে এ ফুল ফোটাতে এখানকার প্রান্তিক নারীরা অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের হাতে ফোটা টিউলিপের নজরকাড়া সৌন্দর্যে পর্যটকদের মোহিত করছে, আকৃষ্ট করছে। সবাই টিউলিপ দেখে মুগ্ধ হোক। ভ্রমণে হোক, বনভোজনে হোক সবাই যাতে এ ফুল দেখতে পারে তাহলে আমাদের উদ্যোগ সার্থক হবে।
ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান বলেন, বাংলাদেশের খামার পর্যায়ে টিউলিপ চাষে চতুর্থবারের মতো আমরা উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়া গ্রামে টিউলিপ চাষ করা হচ্ছে। তবে এবার একটু দেরি হয়ে গেছে। কারণ নেদারল্যান্ড থেকে ব্লাব (বীজ) এলসি করে অনেকটাই চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে ফুলগুলো অনেক দিন থাকবে। আশা করছি, আগামী দুই মাস এ টিউলিপের রাজসিক সৌন্দর্য ও সৌরভ ছড়াবে সারা দেশে। টিউলিপ ঘিরে আমরা সারা বছরই ইকো ট্যুরিজমের মাধ্যমে উচ্চ মূল্যের ফুল, ফল চাষ করবো। ইতোমধ্যে আমরা চাষিদের উচ্চ মূল্যের ফলের চারা দিয়েছি। বিশেষ করে টিউলিপ চাষে পর্যটকের আগমনে আমাদেরকে বিস্মিত করে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৭:০৫ ৯ বার পঠিত