
বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি রচিত ‘নারায়ণগঞ্জের সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্য’ ও ‘বৃত্তের বাইরে’ বই দুটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট এই আয়োজন করে।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্ব ও সাবেক সভাপতি ভবনী শংকর রায়ের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য রাখেন গবেষক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি, গবেষক, প্রকাশক মফিদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. শওকত আরা হোসেন ও লেখক রফিউর রাব্বি।
রফিউর রাব্বি বলেন, “করোনার সময় বইটি নিয়ে কাজ করেছি গৃহবন্দী সময়টা কাজে লাগানোর চিন্তা থেকে। ৩ বছর সময়টা কতটা কাজে লেগেছে গ্রন্থটি পড়লে উপলব্ধি করতে পারবেন। আমি স্মরণ করি ছড়াকার মান্নান, হোসেন জামাল, করুণাময় গোস্বামী, আমজাদ হোসেন যারা সম্মিলিতভাবে সুধীজন পাঠাগারের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন। যেটি এখনো নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসের আকড় গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস গত ৪০ বছর আকড় হিসেবে ছিল। যদিও এর কিছু কিছু তথ্য উপাত্ত নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যার উত্তর এ গ্রন্থে দেয়ার চেষ্টা করেছি।”
‘ইতিহাস মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখার কিছু নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যে বিষয়ে যৌক্তিক, দালিলিক প্রমাণ হাজির করা না যায়, সেটি টিকে না। যার ফলে আজকে যে দালিলিক প্রমাণের উপর দাঁড়িয়ে আছি, আমাদের কাছে যে তথ্য উপাত্ত রয়েছে এটি আমাদের সত্য হিসেবে সামনে আছে। অনুদ্ঘাটিত অনেক কিছু রয়েছে যা উদ্ঘাটিত হলে নতুন আরও সত্যের কাছে আমরা যেতে পারবো। নারায়ণগঞ্জের গৌরবের বিশাল একটি অংশ রয়েছে। ঢাকার শত শত বছর আগে নারায়ণগঞ্জ গড়ে উঠেছিল। এখানে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, বাণিজ্য এসবের বিশাল অবস্থান এখানে ছিল। তারপরও আমাদের নারায়ণগঞ্জ সন্ত্রাসের জনপথ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ নেতিবাচক ভাবমূর্তি থেকে বের হবার জন্য সত্যের মুখোমুখি বা সঠিক বিষয় জানার আমাদের, উত্তরসূরিদের প্রয়োজন রয়েছে।”
ডা. শওকত আরা হোসেন বলেন, “রফিউর রাব্বি তার প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের উপর লিখেছেন। আসলে আমরা কেউ ধর্ম নিয়ে জন্মগ্রহণ করি না। আমাদের মা-বাবা যে ধর্মের অনুসারী হন সাধারণত সন্তানরা সেই ধর্ম অনুসারে চলি। রবীন্দ্রনাথ একটি বিশেষ ধর্মে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেই ধর্মে বিশ্বাস করতেন। হয়তো রবীন্দ্রনাথের মুসলমান সম্পর্কে জানার পরিধি কম ছিল। কিন্তু মুসলমানকে তিনি অবহেলা করেননি।”
তিনি আরও বলেন, “জয় বাংলা কারো স্লোগান না, এটি কবি নজরুলের। তিনি জয় বাংলা নিয়ে কবিতা লিখেছেন। সেই জয় বাংলাকে আমরা ধারণ করি। আপনারা এটি ভুলবেন না। নিজের ইতিহাসের কথা ভুলবেন না। ইতিহাস একটি অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যম।”
মফিদুল হক বলেন, “নারায়ণগঞ্জের প্রাচীন জনপদ আর এ জনপদের সাথে জড়িত ইতিহাসের সামগ্রিক চিত্র ফুটে উঠেছে রফিউর রাব্বির লেখায়। ভাবা যায় না, একজন মানুষ এককভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানিক সহযোগিতা ছাড়া এমন একটি কাজ করতে পারেন। এই বইটি বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য জানার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা জাতীয় ইতিহাস সম্পর্কে জানি, অনেক বই বের হয় কিন্তু আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে কম কাজ হয়। এখন এটি স্পষ্ট যদি জনপদ, আঞ্চলিক ইতিহাস না জানি তাহলে আমরা আমাদের ইতিহাসকে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারবো না। সে অর্থে এটি একটি বিশাল মাত্রার কাজ। এ বইটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।”
ড. আনোয়ার বলেন, “আর্নল্ড টয়েনবি’র একটি তত্ত্বকে রফিউর রাব্বি প্রমাণিত করেছেন। তত্ত্বটি হচ্ছে, থিওরি অব চ্যালেঞ্জ এন্ড রিসপন্স। মানুষের সামনে চ্যালেঞ্জ না থাকলে মানুষ কখনো সুমহান কৃতিত্বের অধিকারী হতে পারে না। রফিউর রাব্বি তার মেধাবী ছেলেকে হারিয়েছেন। তিনি পুত্রশোকে মুর্ছিত না হয়ে চেষ্টা করেছেন আরও সৃজনশীল এবং ক্রিয়াশীল হতে। তার প্রমাণ ‘নারায়ণগঞ্জের সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্য’। এটি একটি আকড় গ্রন্থ। রফিউর রাব্বি তার শোককে শক্তিতে পরিণত করে এই বই লিখেছেন।”
বাংলাদেশ সময়: ২৩:২২:১৬ ৩৬ বার পঠিত