বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগমীর বলেছেন, ‘সংস্কারের কথা বলে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করা যাবে না। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন বিলম্ব করার চেষ্টায় মানুষ অন্য কিছুর গন্ধ পাচ্ছে।’
আজ মঙ্গলবার বিকেলে যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সংস্কারের বিপক্ষে নই। তবে সংস্কারের নাম করে মানুষের অধিকার পিছিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় মানুষ অন্য কিছুর গন্ধ পায়। এ দেশের মানুষ সংস্কার কি বুঝে না। তারা শান্তি ও সুশাসন চায়। তাই যেখানে যতটুকু ন্যূনতম সংস্কার দরকার করুন। এরপরে দ্রুত নির্বাচন দিন।’
নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তোরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা ও পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্ত প্রতিরোধের দাবিতে যশোর টাউন হল ময়দানে এ সমাবেশের আয়োজন করে জেলা বিএনপি।
এর আগে সকাল থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীরা জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে স্লোগান দিয়ে দলে দলে সমাবেশস্থলে এসে জড়ো হতে থাকে। দুপুরের আগেই টাউন হল ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
উপদেষ্টা পরিষদকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কারো ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা থাকলে বা রাজনীতি করার ইচ্ছা থাকলে পদ ছেড়ে দেন, দল করে নির্বাচন করুন, আমরা মেনে নেব। তবে ক্ষমতায় থেকে তা করা যাবে না’।
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দেশের মানুষ কোনোভাবেই মেনে নেবে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা করতে গেলে এলাকায় এলাকায় আওয়ামী দোসররা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে, গণ্ডগোলের সৃষ্টি হবে। এ কারণেই জাতীয় নির্বাচনের আগে আমরা কখনোই স্থানীয় সরকার নির্বাচন মেনে নেবো না।
তাই সরকারকে বলবো, নির্বাচন নিয়ে কোন কলাকৌশল করবেন না। এদেশের মানুষের প্রত্যাশা মাফিক আগে জাতীয় নির্বাচন হবে, তারপর স্থানীয় সরকারের নির্বাচন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ড. ইউনূস নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি দেশের গৌরব, সারা পৃথিবীর মানুষ তাকে সম্মান করে, আমরাও তাকে সম্মান করি। তিনি দায়িত্ব নেওয়ায় আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম যে, তিনি দ্রুত একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। আমরা এখনও আশাবাদী। দ্রুত নির্বাচন হলেই দেশে শান্তি ফিরে আসবে।
দেশের বর্তমান অবস্থার চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের অবস্থা ভালো না। বিনিয়োগ নেই। যশোরের শিল্পাঞ্চল নওয়াপাড়ায় বেশিরভাগ কলকারখানা বন্ধ। তবে যশোরবাসীকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলে বন্ধ হয়ে যাওয়া সব কলকারখানা চালু করা হবে। যশোরের ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ তরা হবে।
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, সব জায়গায় ফ্যাসিস্টের দোসররা বসে আছে। সে কারণে ফ্যাসিস্ট পালিয়ে গেলেও জিনিসপত্রের দাম কমছে না, মানুষ নিরাপত্তা পাচ্ছে না, পুলিশ কাজ করতে পারছে না। দ্রুত স্বৈরাচারের দোসরদের সরাতে সরকারের তৎপর হতে হবে।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলের বিএনপির নেতাকর্মীদের ভয়াবহ পরিণতির বর্ননা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে বিএনপির ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দেওয়া হয়েছিল। কয়েক হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু যশোরেই ৮৪ নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়। আমাদের ভাই, আমাদের ছেলেদের তুলে নিয়ে হাসিনা আয়নাঘরে বছরের পর বছর বন্দী করে রেখেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অত্যাচারের নজির নেই।
বিএনপি চেয়ারপারর্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘মহিয়সী নারী’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য তিনি বছরের পর বছর আন্দোলন করেছেন, মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছেন। দিনের পর দিন বিনা চিকিৎসায় অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেও শেখ হাসিনার সাথে তিনি কোনো আপোষ করেননি।’
যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপিকা নার্গিস ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য টিএস আইয়ুব, আবুল হোসেন আজাদ, সাবিরা নাজমুল মুন্নী, দলের সাবেক কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুসহ স্থানীয় নেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৪:৩৬ ৯ বার পঠিত