তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের আকাঙ্ক্ষাকে যারা ধারণ করতে পারবে, তারাই সফলতা লাভ করবে।
তিনি আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) মিলনায়তনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মাহবুবা ফারজানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী।
সভা সঞ্চালনা করেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব নিগার সুলতানা।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের ভূমিকার স্বীকৃতি দেওয়ার লক্ষ্যেই তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ আয়োজন করা হয়েছে। তাদের উজ্জীবিত করতে এবং ট্রমা থেকে বের করে আনাও এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্য। তবে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা সম্ভব হবে না। কারণ এক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আন্দোলন সফল হয়েছে। তাই আরও এমন অনেক উৎসবের আয়োজন করতে হবে।
তিনি বলেন, তরুণরা পরিবর্তনের জন্য লড়াই করেছে, দেশের মানুষ পরিবর্তন চায় যাতে দেশে আরও একটি আওয়ামী লীগ, আরও একটি শেখ হাসিনা তৈরি হতে না পারে। কারণ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ দেশের সকল প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া ধ্বংস করেছে, মানুষের স্বাধীনতা ধ্বংস করেছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশের পরিবর্তন ও সংস্কার যত দ্রুত সম্পন্ন হবে, তরুণরা তত দ্রুত ট্রমা কাটিয়ে উজ্জীবিত হবে। দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। এই অভ্যুত্থান বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রভাব ফেলেছে। অভ্যুত্থানকে দেশের জন্য ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে হবে। তাহলেই দেশ উপকৃত হবে।
তিনি বলেন, দেশের তরুণরা দীর্ঘদিন নানা ধরণের অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেছে। পূর্ববর্তী প্রজন্মের ব্যর্থতার জন্য ছাত্র, তরুণ ও মাদ্রাসার ছাত্রদের রাস্তায় নেমে আসতে হয়েছে। গঠনমূলক কাজে তরুণদের শক্তি ব্যবহার করতে হবে। আগামী দু’দশক তরুণরা দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে পক্ষের দোষ থাকে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যাতে দেশে পেশীশক্তি নির্ভর রাজনীতির অবসান ঘটানো যায়। তাহলেই আমরা আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। তরুণদের আকাঙ্ক্ষাকে আমরা তুলে ধরতে পারব।
গত ১৬ বছর দেশের নানা অত্যাচার ও নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসররা নানা স্থানে থেকেই যাচ্ছে। কারণ ফ্যাসিবাদের পেছনে অনেক শক্তি রয়েছে। পুলিশ আন্দোলন দমন করেছে বলে তারা দৃশ্যমান হয়েছে। তেমনি আন্দোলনে সামনে থেকে তরুণরা নেতৃত্ব দিয়েছে, তাই তাদের দেখা গেছে। কিন্তু তরুণদের গণঅভ্যুত্থান সফলের পেছনেও শক্তি রয়েছে।
রাষ্ট্রের নানা জায়গায় ফ্যাসিবাদী রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলমান আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থেকে যারা ভোটাধিকার হরণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে চালানো হত্যাকাণ্ডের বিচার চলছে। শেখ হাসিনাসহ যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার এই বছরের মধ্যেই দৃশ্যমান হবে।
মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, দেশে যখন অন্যায় অত্যাচার, নির্যাতন, সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে, তখন তরুণরা মাঠে নেমে এসেছে। প্রতিবাদ করেছে, ফ্যাসিবাদী শক্তির পতন ঘটিয়েছে। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে সেটাই দেখা গেছে।
তিনি আরও বলেন, তরুণদের ও শহীদ পরিবারের সদস্য এবং আহতদের ট্রমা থেকে বের করে আনতে এবং উজ্জীবিত করে তরুণদের ইতিবাচক ধারায় রাখতেই তারুণ্যের উৎসবের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
মাহবুবা ফারজানা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদী সরকারের অধীনে ছিলাম। এ সময় মানুষের কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল, কেউ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারত না। আমাদের সন্তানরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ফ্যাসিবাদী শক্তির পতন ঘটিয়েছে এবং বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে এনেছে ও সকল অন্যায় অত্যাচারের অবসান ঘটিয়েছে।
পরে আলোকচিত্র ও ড্রোন ভিডিওয়ের জন্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। আলোকচিত্রে পেশাদার এবং অপেশাদার দুই ক্যাটগরীতি তিন জন করে মোট ৬ জনকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। পেশাদার ক্যাটগরিতে প্রথম স্থান লাভ করেন মো. আহসান উল্লাহ রিফাত, দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন মোহাম্মদ তাসাওয়ার ইসলাম এবং তৃতীয় স্থান লাভ করেন মামুনুর রশিদ।
অপেশাদার ক্যাটগরিতে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান লাভ করেন যথাক্রমে রায়হান আহমেদ, শাহরিয়ার আমিন ফাহিম ও এস এম আরিফুল আমিন।
ড্রোন ভিডিওতে প্রথম স্থান লাভ করেন এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন মোহাম্মদ রকিবুল হাসান এবং তৃতীয় স্থান লাভ করেন আল মাহমুদ বিন সামসুদ্দিন।
প্রথম স্থান বিজয়ীকে ১ লাখ টাকা, দ্বিতীয় স্থান অধিকারীকে ৭৫ হাজার টাকা এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারীকে ৫০ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। বিজয়ী সকলকে একই সঙ্গে সনদপত্র ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যূত্থানের শহীদ এবং আহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
তারপর ড্রোন ভিডিও চিত্র ও শ্রাবণ বিদ্রোহ ডকুমেন্টারী চিত্র প্রদর্শন এবং প্রতিবাদী সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০০:৩০ ১৯ বার পঠিত