
হাতে ও মেশিনে তৈরি সব ধরনের বিস্কুটের ওপর বর্ধিত মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) কমিয়েছে সরকার। সেই হিসেবে, এখন থেকে বিস্কুট ও কেকে সাত দশমিক ৫০ শতাংশ ভ্যাট রাখার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতদিন ১৫ শতাংশ ভ্যাট রাখা হতো।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানের খান সই করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে ৯ জানুয়ারি বিস্কুট ও কেকের ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এখন তা আবার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে ভ্যাটের হার কমানো হলেও তা আগের জায়গায় আর আসেনি। আগের চেয়ে ভ্যাটের হার কিছুটা বাড়তিই থাকল।
ভ্যাট বাড়ানো হলেও গত দেড় মাসে বিস্কুট ও কেক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্কুট-কেকের দাম বাড়ায়নি। বরং তারা ভ্যাটের হার কমানোর জন্য এনবিআরসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দেনদরবার করে আসছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বর্ধিত ভ্যাট হার কমানোর পরও তা আগের ভ্যাট হারের চেয়ে আড়াই শতাংশ বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বিস্কুট-কেকের বিদ্যমান দাম বহাল রাখতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
গত মাসে আচার, চাটনি, টমেটো পেস্ট, টমেটো কেচাপ, টমেটো সস, আম, আনারস, পেয়ার ও কলার পাল্পসহ শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর শুল্ক-কর বাড়ানো হয়। এরপর বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে আপত্তি করে আসছিলেন।
ভ্যাট কমানো–সংক্রান্ত এনবিআরের আদেশে বলা হয়েছে, মেশিনে প্রস্তুত বিস্কুট, হাতে তৈরি বিস্কুট (প্রতি কেজি ২০০ টাকার বেশি) এবং কেকের (প্রতি কেজি ৩০০ টাকার বেশি) ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য হবে। অবিলম্বে এই আদেশ কার্যকর করার কথাও বলা হয় আদেশে।
এদিকে খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, বিস্কুটের চাহিদার ৮০-৯০ শতাংশই দেশে উৎপাদিত হয়। বাজারে ৫, ১০ ও ১৫ টাকা দামের বিস্কুটের প্যাকেটের চাহিদা বেশি। সীমিত আয়ের মানুষ এসব বিস্কুট বেশি খান। তাই ভ্যাট বাড়ানোর ফলে এসব বিস্কুটের দাম বাড়লে তাতে সীমিত আয়ের মানুষই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ কারণে তাঁরা বিস্কুট–কেকের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
অর্থবছরের মাঝপথে এসে গত জানুয়ারিতে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার। ওই তালিকায় বেকারিপণ্য, বিস্কুট ও কেকও ছিল। সেসব পণ্যে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়।
বিস্কুটের মত পণ্যে ভ্যাট বসানোয় সমালোচনার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের তরফে দাবি আসে ভ্যাট কমানোর।
দুই দফায় ব্যবসায়ীরা এনবিআরের সঙ্গে বসে নিজেদের দাবি তুলে ধরলে তখন বিস্কুটের ওপর থেকে বাড়তি ভ্যাট কমানোর আশ্বাস দেয় এনবিআর।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে নতুন করে আরোপ করা ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার চেয়ে দ্বিতীয় দফায় এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভুইয়া সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এনবিআরকে বারবার বিরক্ত করার চেষ্টা করছি। চেয়ারম্যানকে বললাম, ‘আপনার কাছ থেকে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি’ (আগের বৈঠকে)। কিন্তু কার্যকারিতা বাস্তবে দেখতে না পেরে আমরা আপনাকে আবার বিরক্ত করার জন্য এসেছি।”
তিনি বলেন, “ভ্যাটের সদস্য আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, তিন-চারটা দিন চুপচাপ থাকেন; আমাদের কাজ করতে দেন; আমরা রেজাল্ট দেব।”
সেই বৈঠকের দুই সপ্তাহ পর ‘রেজাল্ট’ পেলেন বিস্কুট ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪৭:০৭ ১৫ বার পঠিত