
আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ন টাওয়ারে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।
এসময় জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, যুগেরও অধিক সময় ধরে দুঃশাসন, ২০২৪ সালের ৫ জুন ১৮’র পরিপত্র বাতিল করা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক প্লাটফর্মের উত্থান, সারা দেশে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ, খুনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া এবং নতুন এক বাংলাদেশ। এই নতুন বাংলাদেশে মানুষের সবচেয়ে বড় দাবি হচ্ছে, একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গঠন। আমরা আমাদের জায়গা থেকে বিশ্বাস করি, হাজারো শহীদের জীবনের বিনিময় ও অর্ধ লক্ষ মানুষের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখি সেটি নতুন প্রজন্মের কাছে উপহার দেওয়া আমাদের একটি আমানত। আমরা আমাদের এই লড়াই করে যেতে চাই। সেই লড়াইকে সামনে রেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণ সংলগ্ন মানিক মিয়া এভিনিউতে আমরা আমাদের এই নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছি।
এদেশের ১৮ কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক যে জাতীয় সংসদ, সেই সংসদকে সামনে রেখে আমরা আমাদের এই শপথটি করতে চাই। বিগত যুগের পর যুগ ধরে এ সংসদকে বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খা বাস্তবায়নের ক্ষেত্র না বানিয়ে ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত ও দলীয় স্বার্থ উদ্ধারের জায়গা বানিয়ে রাখা হয়েছিলো। স্বৈরাচারের উৎপাদন ক্ষেত্র বানিয়ে রাখা হয়েছিল। তাই আমরা এই জাতীয় সংসদকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছি। এখানে ব্যক্তি, দলীয়, গোষ্ঠী স্বার্থের ঊর্ধ্বে সাধারণ মানুষের স্বার্থ প্রাধান্য পাবে। আমরা বিশ্বাস করি ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নবদিগন্ত উন্মোচনের ইতিহাস হতে যাচ্ছে।
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শহীদ পরিবার, দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, প্রবাসী বাংলাদেশি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত সকলে উপস্থিত থাকবেন বলে তিনি জানান।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমরা ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ ক্যাম্পিং পরিচালনা করেছি। সেখানে সারাদেশের জনগণের কাছে কয়েকটি বিষয়ে মতামত জানতে চেয়েছিলাম। আমরা প্রথম জানতে চেয়েছিলাম কোন তিনটি কাজ করলে বাংলাদেশ বদলে যাবে। রাজনৈতিক দলের কাছে তারা কোন সমস্যার সমাধান চান, রাজনৈতিক দলের নাম ও প্রতীক কি হতে পারে। আমাদের কাছে মানুষের প্রত্যাশা কি, সেখানে প্রধান যে সমস্যার কথা চিহ্নিত করা হয়েছে সেটি হলো-দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সদাজাগ্রত থাকতে হবে। কোথাও যেন কোন দুর্নীতি সংগঠিত হতে না পারে, সে ব্যাপারে সর্বাধিক মানুষ দাবি জানিয়েছেন।
মানুষ সুশাসনের কথা বলেছে, কোথাও যেন কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বলেছেন। সামাজিক ন্যায় বিচার এবং সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির কথা বলেছেন। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সকল বৈষম্য হ্রাস করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণের কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, জনগণ রাষ্ট্রীয় সকল ধরনের প্রতিষ্ঠান ও নীতিগুলোতে সংস্কারের মাধ্যমে জনবান্ধব নীতি প্রণয়নের কথা বলেছেন। রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেবার মান উন্নয়নের জন্য বলেছেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেন জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়, সে বিষয়ে মানুষ আমাদের জানিয়েছে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমীন, আতিক মুজাহিদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ, সমন্বয়ক তারেকুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪১:৫৪ ১০ বার পঠিত