
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী কেনো অজুহাতেই জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত না করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত খুনি শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই, কোনো অজুহাতেই নির্বাচনী ব্যবস্থাকে পেঁছানোর সুযোগ নেই। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারই
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।’
আজ বুধবার রাজধানীর বনানীতে হোটেল শেরাটনের বলরুমে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে শিপ রিসাইক্লিং শিল্পের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
‘পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিচার চায় না, এমন লোক বাংলাদেশে কে আছে তা আমার জানা নেই’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিচারিক প্রক্রিয়া একটা আইনি প্রক্রিয়া সেটা চলতেই থাকবে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অনেকগুলো মামলা আছে। এগুলো বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধান হতেই থাকবে। কিন্তু এই বিচারিক প্রক্রিয়ার সাথে সরকার পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক নেই।’
আমির খসরু বলেন, ‘আজকে এই কারণে, কাল আরেকটা কারণে নির্বাচন হবে না, এ রকম অনেক অজুহাতের কথাই শুনছি। তবে এসব কথাবার্তা বলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পিছিয়ে নেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছর আমরা অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হয়েছি। প্রাণ দিয়েছি। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছে। উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে, দেশের জনগণ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারবে।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘যেকোনো দল তাদের মতামত নিয়ে আসতেই পারে। সেখানে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সেই মতামতের সিদ্ধান্তে আমাদের আসতে হবে। সবার ঐক্যবদ্ধ মতামত থাকতে হবে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, বিএনপি’র ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব আছে। এটা চাইলেই আমরা কালকে বাস্তবায়ন করতে পারব না। কারণ, আমাদেরকে সবার মতামত নিতে হবে। জনগণের কাছে যেতে হবে।’
আমির খসরু বলেন, ‘যে কোনো কিছু বাস্তবায়ন করতে হলে আগে ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে আসতে হবে। এরপর এসব বিষয় সংসদে আলোচনা হবে, বিতর্ক হবে তারপর সংসদে পাস হবে। সোজা কথা ঐক্যমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে যেসব সিদ্ধান্ত আসবে সেখানে কারো তো কোনো সমস্যা নাই।’
তিনি বলেন, ‘শিপ রিসাইক্লিং শিল্প সার্কূলার অর্থনীতির একটি ক্লাসিক উদাহরণ। এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিল্প উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’
তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন মেনে নিরাপদ ও পরিবেশ সম্মত গ্রীন শিপ রিসাইক্লিং শিল্প পরিচালনার দিকে অগ্রগতি সত্ত্বেও এই শিল্পের নেতৃত্ব বজায় রাখতে এবং সর্বাধিক রাজস্ব উৎপাদনের জন্য নীতিগত সমর্থন এবং বৈশ্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। এই শিল্পের বিকাশে সরকারকে সব ধরনের সাপোর্ট দেয়া উচিত।
এই দেশটা অতি নিয়ন্ত্রণের দেশ হয়ে গেছে উল্লেখ করে আমির খসরু বলেন, নিয়ন্ত্রণ করতে এমন জায়গায় নিয়ে আসছে এই নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়ার জন্য যে সব কাজ করতে হয় তার আর ব্যবসা করার স্বপ্ন থাকে না।
তিনি বলেন, এই শিল্পকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে। সিরিয়াসভাবে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে। যত বেশি সম্ভব সরকারের ভেতর অনেকগুলো কাজ বের করে এনে এগুলো ট্রেড বডি যারা আছে সেলফ রেগুলেটিং তাদেরকে সেই ক্ষমতায়ন করতে হবে, ক্ষমতা দিতে হবে।
সেলফ রেগুলেটিং করার জন্য তৈরি হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আমির খসরু বলেন, আগামী দিনে সরকার পরিবর্তন হলে আমাদের যদি কোনো সুযোগ থাকে সবগুলো যেখানে সম্ভব আমরা ট্রেডবডিগুলোকে প্রোভাইড করব। সবখানে যত নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা যাবে তত দেশ ভালো চলবে। যত বেশি নিয়ন্ত্রণ বাড়বে দেশ সামনে দিকে এগুতে পারবে না।
বিএসবিআরএ‘র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম রিংকুর সভাপতিত্বে ও ইয়াসমীন সুলতানার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারি অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন, উপ-রাষ্ট্রদূত খিজস উউস্ট্রা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের প্রোগ্রাম ম্যানেজার হুবার্ট ব্লুম, জাইকার শিপ রিসাইক্লিং উপদেষ্টা ওকামোটো আকিরা, বিএসবিআরএ‘র উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শওকত আলী চৌধুরী, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী চৌধুরী, চট্টগ্রাম শ্রমিক দলের এএম নাজিম উদ্দিন বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৩:৩১ ৯ বার পঠিত