
তিনি আর্কটিকের কাছে জন্মগ্রহণ করেন, দুটি প্রধান অর্থনীতির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তবে তিনি কখনোই সংসদে দায়িত্ব পালন করেননি। তা সত্ত্বেও কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন মার্ক কার্নি। অটোয়া থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
কানাডার রাজনীতিতে মার্ক কার্নির শীর্ষ পদে যাত্রার পথ অস্বাভাবিক ছিল, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার প্রচারণা শুরু করার সময় তিনি যেমন বলেছিলেন, পরিস্থিতিও তেমনই।
জানুয়ারিতে পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এডমন্টনে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে কার্নি বলেন, ‘আমাদের সময়গুলো খুব সাধারণ কিছু নয়।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকিকে কার্নি ‘আমাদের জীবৎকালের সবচেয়ে গুরুতর সংকট’ বলে অভিহিত করে রোববার বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘আমাদের সম্পদ, আমাদের পানি, আমাদের জমি, আমাদের দেশ’ চায়।
তিনি বলেন, ২০০৮-২০০৯ সালের আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে ব্যাংক অফ কানাডার নেতৃত্ব দেওয়ার এবং ব্রেক্সিট ভোটের পর ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা তাকে এই মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত করেছে।
লিবারেল পার্টির নেতৃত্বে আসায় ৮৫.৯ শতাংশ ভোট পেয়ে কার্নি জয়ী হয়েছেন এবং আগামী দিনে তিনিই হবেন প্রধানমন্ত্রী।
জরিপ অনুসারে, কার্নি হয়তো বেশি দিন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না, খুব শিগগির একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে যেখানে বিরোধী রক্ষণশীলরা জয়ের জন্য কিঞ্চিৎ এগিয়ে রয়েছে।
তবে, তিনি যতদিনই দায়িত্ব পালন করুন না কেন, তার মেয়াদ হবে অনন্য।
কার্নি হবেন প্রথম কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী যার কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। তিনি কখনও কোনো সরকারি পদে নির্বাচিত হননি বা কোনও সরকারি মন্ত্রিসভায় দায়িত্বও পালন করেননি।
তিনি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ছোট্ট শহর ফোর্ট স্মিথে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা-মা সেখানাকার শিক্ষক ছিলেন। তবে তিনি আলবার্টার রাজধানী এডমন্টনে বেড়ে ওঠেন।
অনেক কানাডিয়ানের মতো করেই যৌবনে তিনি হকি খেলতেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ও ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করেছেন তিনি। তার কর্মজীবনের প্রথম দিকে তিনি আমেরিকান বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক পরিষেবা সংস্থা গোল্ডম্যান শ্যাক্সে বিনিয়োগ ব্যাংকার হিসেবে কাজ করেন। তিনি নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, টোকিও এবং টরন্টোতে কাজ করেন।
এরপর কার্নি কানাডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন, অবশেষে ২০০৮ সালে সাবেক কনজারভেটিভ প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পার তাকে ব্যাংক অফ কানাডার গভর্নর নিযুক্ত করেন।
২০১৩ সালে, তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনের সরকার তাকে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নিয়োগ দেয়, যার ফলে কার্নি ৩০০ বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাসে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের নেতৃত্বদানকারী প্রথম ব্যক্তি হয়ে ওঠেন যিনি ব্রিটিশ নাগরিক নন।
ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ কানাডার পরিচালক ড্যানিয়েল বেলান্ড কার্নিকে ‘টেকনোক্র্যাট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বেলান্ড বলেন, ‘তিনি অনন্যসাধারণ প্রতিভাধর নন, একজন নিস্প্রভ মানুষ।’ তবে তিনি উল্লেখ করেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য বিশৃঙ্খলা ও সার্বভৌমত্বের ওপর হুমকির কারণে কানাডার বিচলিত পরিস্থিতিতে কোনো ঝলকানি ছাড়াই তার কঠোর দক্ষতা এক্ষেত্রে হয়তো আবেদন রাখতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:১৬:৪২ ৭ বার পঠিত