
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে ফ্যাসিবাদবিরোধী। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আমাদের মত পার্থক্য হবে, আমাদের পলিসি নিয়ে আলোচনা হবে। আমাদের সব হবে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্র কাঠামোর বাইরে রেখে। নেক্সট বাংলাদেশ উইদাউট আওয়ামী লীগ।’
শনিবার (২২ মার্চ) রাজধানীর শাহবাগে বিকাল সাড়ে ৩টায় আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপির ঢাকা মহানগর আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে একথা বলেন তিনি।
হাসনাত বলেন, আমরা সন্দেহের চোখে দেখছি, বিভিন্ন জায়গায় ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই, এখন ইনক্লুসিভ ইলেকশনের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলোতে ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিল?
‘যেই বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত ২ হাজার শহীদের রক্তের দাগ শুকায় নি, শাপলা হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় নি, সেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনও ইনক্লুসিভ নির্বাচন হবে না।’
আপনাদের যাদের কাজ ক্যান্টনমেন্টে, তারা ক্যান্টনমেন্টেই থাকেন মন্তব্য করে হাসনাত বলেন, ‘আমরা আপনাদের শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু গত ১৬ বছর আপনারা রাজনীতিতে যেভাবে নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছেন, ক্যান্টনমেন্টের বিভিন্ন দফতর উপদফতরের মধ্য দিয়ে আপনারা রাজনীতিতে নোংরা হস্তক্ষেপ করেছেন। ২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে শুধুমাত্র রাজনীতিবিদরা।’
তিনি সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা কোথায় ছিলেন? গত ১৬ বছরে দেশে কত গুম, খুন, হত্যা হয়েছে, জুলুম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আমরা কোনও জেনারেলকে দেখিনি পদত্যাগ করতে। একজনেরও কী মেরুদণ্ড ছিল না?’
‘আমরা বিনয়ের সঙ্গে আপনাদের আহ্বান জানাবো, আমরা একটি প্রোপার ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনের অপেক্ষায় রয়েছি। যেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা একটি ন্যূনতম সংস্কার প্রক্রিয়া শেষে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে চাই। সেই পথে আপনারা বাধা হবেন না।’
4আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপির ঢাকা মহানগর আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল
তিনি বলেন, ‘আপনারা আওয়ামী লীগকে চিনতে পারেননি। শহীদ জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছিলেন। নিজের জীবন দিয়ে তিনি সেই দায় মিটিয়েছেন। জামায়াত ইসলামী আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছিল। নিজ নেতাকর্মীদের জীবন দিয়ে জামায়াতকে সেই দায় মেটাতে হয়েছে। ২০২৪ সালে যদি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হয়, আগামী ১০০ বছর ধরে সেই দায় আমাদের মেটাতে হবে।’
হাসনাত বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পালিয়েছে গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। পৃথিবীর কোথাও ইতিহাস নেই— গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যারা পালাতে বাধ্য হয়, তাদের আবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়। সুতরাং আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে ৫ আগস্ট। সেদিনই চূড়ান্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের নাম, মার্কা, আদর্শ এদেশে রাজনীতির অধিকার হারিয়েছে।’
‘সরকারের কাছে আহ্বান এখনও আমরা আওয়ামী লীগের বিচারের ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। আমরা কোনও নির্বাহী আদেশের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ দেখতে চাই না। আওয়ামী লীগ কৃতকর্ম— গুম, খুন, হত্যার যদি সেগুলোর বিচার করতে পারেন তাহলে আগামী ৩০০ বছরেও আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে না।’
তিনি বলেন, ‘দশটা ফেরাউন, দশটা নমরুদকে একত্রিত করলেও একটা হাসিনা হবে না। দশটা নমরুদের থেকেও ভয়ঙ্কর একটা হাসিনা। বাংলার মাটিতে যতদিন হাসনাত আব্দুল্লাহ আছে, যতদিন এনসিপি আছে ততদিন এই বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হতে দেওয়া হবে না।’
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের কোনও দল নয়। এটা ভারতীয় দল। এই দল বাংলাদেশে থাকতে পারে না। এই দল বাংলাদেশের জন্য আইডেন্টিটি ক্রাইসিস। পুনর্বাসন বলে কোনও শব্দ আওয়ামী লীগের জন্য বাংলাদেশে থাকবে না। যারা ইনিয়ে বিনিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলবে, বুঝতে হবে তারা আওয়ামী লীগের থার্ড-ফোর্থ টিম হিসেবে কাজ করছে। আওয়ামী লীগের বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে হবে।’
এনসিপি নেতা মাহিন সরকার বলেন, ‘আমরা এখনও জুলাইকে ভুলিনি। একমাত্র জুলাইয়ের শক্তি আছে আওয়ামী লীগের নিশানা বাংলাদেশ থেকে মুছে দেওয়ার। আওয়ামী লীগকে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ করতে হবে। যে আওয়ামী লীগ বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, শাপলা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে আমরা সেসব হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। নাৎসি পার্টির থেকে ভয়ংকরতম দল এই আওয়ামী লীগ। তারা বাংলাদেশে রাজনীতির অধিকার হারিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৮:১৮ ১২ বার পঠিত