
২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এখন উন্নয়ন মুডে আছি। পেছনে ফেরার কোনো পথ নেই।’
আজ মঙ্গলবার এলডিসি উত্তরণবিষয়ক এক বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বিশেষ সহকারী বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পেছানোর কথা অবান্তর। আমরা যে শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত সুবিধা পাচ্ছি, ২০২৬ সালে সেটা কিন্তু বন্ধ হয়ে যাবে না। ইতিমধ্যে অনেক দেশ আমাদের বলেছে, আমাদের জন্য জটিল একটা মার্কেট ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেই দিয়েছে ২০২৯ সাল পর্যন্ত সুবিধা দেবে। তাহলে আমরা কেন পিছিয়ে দেব? অস্ট্রেলিয়া বলেছে, গ্র্যাজুয়েশন করুক আর নাই করুক, সুবিধা যা আছে সেগুলো চলবে। যুক্তরাজ্য একই কথা বলেছে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা চীনে গেলেন, সেখানেও চীন বলল যে, সুবিধা অব্যাহত থাকবে। তাহলে যে জায়গায় আমাদের ব্যবসায়ী বন্ধুরা চিন্তিত, সেটা কিন্তু ইতোমধ্যে উত্তরণ হয়ে গেছে। এটা একটা বোঝার সমস্যা।
প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আজকের বেঠকে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করেছি। আমরা চিহ্নিত করেছি যে, কোন কোন জায়গায় আমরা শক্ত অবস্থানে আছি, কোথায় আমাদের আরও শক্ত হতে হবে, আমরা আজকে পর্যালোচনা করেছি। আলোচনা করে আমরা মোটামুটি সন্তষ্ট। আমাদের ‘প্লেন’ চলবে, ক্রাশ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ২০২৬ সালে আমরা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করতে পারব। এ জন্য আগে থেকে আমাদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে আমাদের থেকে অনেক দুর্বল দেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করে ফেলেছে। সম্প্রতি ভুটান করোনার পরপরই বেরিয়ে গেছে। ওরা পারলে আমরা পারব না কেন। সেই আত্মবিশ্বাস আমাদের থাকতে হবে। প্যাসিফিক আইল্যান্ডের দেশ সামোয়াও বেরিয়ে গেছে। আমাদের যথেষ্ট সামর্থ্য আছে।
বৈশ্বিক পর্যায়ে বাণিজ্য সংক্রান্ত নেগোসিয়েশন (দর-কষাকষি) চালানোর জন্য বিশেষ একটি সেল গঠনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিশেষ সহকারী বলেন, আমাদের নিজস্ব কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতায় দুর্বলতা আছে। যেমন, আমাদের আলাদা কোনো বাণিজ্য সংস্থা নেই। এ জন্য আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি আলাদা সেল করার, তারা শুধু বাণিজ্য সংক্রান্ত কাজ করবে। আমরা শক্ত একটা ট্রেড নেগোসিয়েশন বডি তৈরি করব।
তিনি বলেন, আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, আমাদের যথেষ্ট শক্তি আছে। আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হতে যাচ্ছি। আমাদের ট্যাক্স জিডিপির অনুপাত এত কম হবে কেন। ভিয়েতনামে ১৯ শতাংশ, ভুটানে ১১-১৩ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ১৫ শতাংশ। এখানে আমরা এখনও ৬-৭ শতাংশে থাকবো তা তো হয় না। তিনি বলেন, আমাদের ট্যাক্স জিডিপির অনুপাত বাড়াতে পারলে বিদেশি সহায়তা লাগবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক সহায়তা কোনও বড় ইস্যু নয়। এই বিদেশি সহায়তা আমাদের কলোনিয়াল নির্ভরতা। জিডিপির তুলনায় সহায়তার আনুপাতিক হার আমরা কমিয়ে এনেছি। এটার পরিমাণ খুব অল্প। এটা না পেলেও আমাদের অসুবিধা হবে না। বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভর করলে আমাদের অলসতা বেড়ে যায়। গত সরকারের আমলে বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরতা বেড়েছে ২০১০ সাল থেকে। তখন থেকে ট্যাক্স জিডিপি রেশিও আমাদের ১০ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে নেমেছে। এজন্য আমাদের অভ্যন্তরীণ সম্পদ কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এনবিআর সংস্কার করা হচ্ছে, পুলিশে সংস্কারে হাত দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ সহকারী বলেন, আমাদের কর্মসংস্থানের ওপর চাপ আসতে পারে, বেসরকারি খাত চাপে পড়তে পারে, এরকম কোন কোন জায়গায় আমাদের আগামী প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি। আমরা যে নীতিমালা করবো, সেখানে আমাদের সম্ভাব্য দুর্যোগ হতে পারে সেগুলো আমরা তালিকা করেছি, আমরা সেভাবে প্রস্তুত থাকবো। একটা উচ্চ পর্যায়ের কমিটি হচ্ছে, তারা সার্বক্ষণিক এটাকে মনিটর করবে। আমাদের এখানে পর্যবেক্ষক হিসেবে শুধু সরকারি কর্মকর্তা থাকবে না, আমরা বেসরকারি খাত থেকে লোক রাখবো, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসবো। প্রয়োজনে আমরা স্টেকহোল্ডার যারা আছে, সবাইকে সঙ্গে নিয়েই এই যাত্রা করবো।
২০১৮ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের শর্ত পূরণ করে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে পিছিয়ে যায়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৮:৫৬ ১৩ বার পঠিত