
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, আমরা চেয়েছিলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্যহীনতার উদাহরণ সৃষ্টি করবে। কিন্তু কাউকে মুক্তি দেবে কাউকে মুক্তি দেবে না, সরকারের এমন কর্মকাণ্ডে জাতি হতাশ হয়েছে। অনতিবিলম্বে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দিতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক ফেরত দিতে হবে। নতুবা জামায়াতে ইসলামী রাজপথে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে। মনে রাখতে হবে, ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, ফ্যাসিবাদের জুলুম ধরে রাখা যাবে না। সকল জুলুমের কবর রচনা করতে হবে।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে খুলনা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে সোনাডাঙ্গা আল ফারুক সোসাইটি মিলনায়তনে রুকন শিক্ষা শিবির-২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের আওয়ামী লীগ বিচারিক হত্যা করেছে। যখন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছেন এটিএম আজহারুল ইসলাম, তখন আওয়ামী লীগ তাকে আটক করে মিথ্যা মামলা দিয়ে ১৩টি বছর কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে তাকে এখনো আটক রাখায় জাতি বিস্মিত ও হতবাক। দেশবাসী স্বৈরাচারের কবল থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্তি চায়। অবিলম্বে আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আখিরাতের সফলতা মুমিন জীবনের প্রকৃত সফলতা। এজন্য একজন ঈমানদার হিসেবে দুনিয়ার সুযোগ-সুবিধা আমাদের জন্য অগ্রগণ্য না। আমাদের মূল টার্গেট হবে আখিরাতে চূড়ান্ত সফলতা। তাই জামায়াতে ইসলামীর রুকনদের আখিরাতকে প্রাধান্য দিয়ে জীবন পরিচালনা করতে হবে। সকল কাজে আল্লাহ ও তার রাসুলের নিকট আনুগত্যের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদান করতে হবে। আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে ময়দানে সাহসিকতার সঙ্গে ভূমিকা পালন করতে হবে। বর্তমান সময়ের বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদেরকে কুরআনের রঙে রঙিন করতে হবে। জামায়াতের রুকনদের কুরআনে বর্ণিত গুণাবলিসমূহ নিজেদের চরিত্রে ফুটিয়ে তুলে সমাজের মানুষের মাঝে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মানবজীবনের প্রথম ভিত্তি হচ্ছে পরিবার। ব্যক্তি পরিবারের একটি অংশ। আর পরিবার সমাজের অংশ ও ভিত্তিপ্রস্তর। সমাজকে বাদ দিয়ে যেমন রাষ্ট্রের কল্পনা করা যায় না, তেমনি পরিবার ছাড়া সমাজও অকল্পনীয়। এ জন্য ইসলাম পারিবারিক জীবনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে। ফলে জামায়াতের রুকনদের নিজেদের পরিবার নিয়ে চিন্তা করতে হবে। জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে মুক্তির জন্য পরিবারের সদস্যদের ইসলামের সুমহান আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে। স্ত্রী-সন্তানদের ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি বা ফ্যাক্টর হলেও জামায়াত যে আদর্শকে ধারণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য জামায়াতের জনশক্তিদের টার্গেট ভিত্তিক ও পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রত্যেক জনশক্তিকে মানবসম্পদে পরিণত করে রাষ্ট্রের সকল সেক্টরে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে হবে। একটি সফল বিপ্লবের জন্য জনমত তৈরির পাশাপাশি যোগ্য লিডারশিপ তৈরি করতে হবে। জামায়াত কর্মীদেরকে সমাজকর্মী হতে হবে। তাদেরকে মানবসেবায় উজ্জীবিত হয়ে সমাজের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা মহানগরীর আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলালের পরিচালনায় আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মুহাদ্দিস রবিউল বাশার।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম, মহানগরীর নায়েবে আমির অধ্যাপক নজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহ আলম, প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম, আজিজুল ইসলাম ফারাজী, মাওলানা আ ন ম আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক, মাওলানা ওলিউল্লাহ, মাওলানা শাহারুল ইসলাম, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম লিটন, আ স ম মামুন শাহীন, ইঞ্জিনিয়ার মোল্লা আলমগীর, মীম মিরাজ হোসাইন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:১৭:০৩ ২১ বার পঠিত