সিনেমা শুধু বিনোদনের মাধ্যমই নয়, বরং সিনেমা আমাদের বাস্তব জীবনকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখার সুযোগ করে দেয়। সিনেমা কাল্পনিক উপস্থাপনের মাধ্যমে দর্শকদের শুধু মুগ্ধই করে না, বরং অনুপ্রাণিতও করে। আর সেই সিনেমা যদি তৈরি হয় সত্য ঘটনা অবলম্বনে, তাহলে তা হয়ে ওঠে শিক্ষণীয়। ইতিহাস, বীরত্ব, সংগ্রাম কিংবা বেঁচে থাকার লড়াই—এসব গল্প যখন রুপালি পর্দায় উঠে আসে তখন তা শুধু সিনেমা নয়, হয়ে ওঠে এক অমূল্য অভিজ্ঞতা।
রুপালি পর্দায় সত্য ঘটনা অবলম্বনে অসংখ্য সিনেমা নির্মিত হয় প্রতিবছর। যেখানে উঠে আসে বাস্তব জীবনের সত্য। আজকের আয়োজনে থাকছে এমন আটটি সিনেমার গল্প, যা বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে।
দ্য পারসুট অব হ্যাপিনেস (২০০৬)
ক্রিস গার্ডনার একজন সংগ্রামী বাবা।
পারিবারিক টানাপড়েন ও আর্থিক সমস্যার কারণে একসময় গৃহহীন হয়ে পড়েন। তার স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে যায়। তবে জীবনযুদ্ধে হার মানতে রাজি নন গার্ডনার। নিজের এবং সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য লড়াই করেন।
পরে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হন। বিশ্বব্যাপী আজ তিনি অনুকরনীয়।
বাস্তব জীবনের গল্পে দুর্দান্ত এই সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন গ্যাব্রিয়েল মুকিনো। এতে অভিনয় করেছেন উইল স্মিথ, জাডেন স্মিথ, থান্ডি নিউটন প্রমুখ।
হোটেল রুয়ান্ডা (২০০৪)
১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় ঘটে ভয়াবহ গণহত্যা, যেখানে জাতিগত বিভেদের কারণে ৮ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়।
এই সময় কিগালির এক হোটেল ম্যানেজার পল রুসেসাবাগিনা নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে তার হোটেলে ১,২০০-এর বেশি মানুষকে আশ্রয় দেন এবং রক্ষা করেন। পলের সাহস, কৌশল আর মানবতা এই সিনেমার মূল উপজীব্য।
টেরি জর্জ-এর পরিচালনায় এতে অভিনয় করেছেন ডন চিডল, হোয়াকিন ফনিক্স, সোফি অকনেডো প্রমুখ।
১২৭ আওয়ারস (২০১০)
অ্যারন রালস্টনের বাস্তব জীবনের ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। অ্যারন একজন দুঃসাহসী পর্বতারোহী ও অভিযাত্রী, যিনি একদিন একাই ক্যন্যনল্যান্ডস ন্যাশনাল পার্কে অভিযানে যান। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত তিনি একটি সংকীর্ণ গিরিখাতে পড়ে যান আর তার ডান হাত বিশাল একটি পাথরের নিচে আটকে যায়। সেখানে ১২৭ ঘন্টা আটকে থাকার পর একাকী অ্যারন নিজের হাত কেটে সেই গিরিখাত থেকে জীবিত বের হন।
ড্যানি বয়েল পরিচালিত সিনেমাটিতে মুল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জেমস ফ্রাঙ্কো।
ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান (২০০৩)
এই চলচ্চিত্রটি বাস্তব কাহিনিভিত্তিক, যেখানে এক প্রতারক যুবক ফ্র্যাংক অ্যাবেগনেল জুনিয়র (লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও) পাইলট, ডাক্তার এবং আইনজীবী সেজে কোটি কোটি ডলার জালিয়াতি করে ফেলে। তার পেছনে লেগে থাকে এফবিআই এজেন্ট কার্ল হ্যানর্যাটি (টম হ্যাঙ্কস)। পরে গ্রেপ্তার হন এবং নিজের তুখোড় বুদ্ধিমত্তার জন্য তিনি এফবিআই-এর পরামর্শদাতা হয়ে ওঠেন। কৌশল, প্রতারণা এবং শেষ পর্যন্ত সব কিছু মিলিয়ে এটি এক টানটান ও প্রেরণাদায়ক গল্প এটি।
স্টিভেন স্পিলবার্গের পরিচালনায় এতে অভিনয় করেছেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, টম হ্যাঙ্কস, জেনিফার গার্নার প্রমুখ।
লায়ন (২০১৬)
ভারতের এক শিশু, যে ছোটবেলায় হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে একটি অনাথ আশ্রম থেকে তাকে দত্তক নেন অস্ট্রেলিয়ার এক দম্পতি। সেখানেই বেড়ে উঠে সেই শিশু। শিক্ষাদীক্ষায় মানুষের মতো মানুষ হয়ে ওঠে। দীর্ঘ ২৫ বছর পর ঘটনাক্রমে জানতে পারে নিজের আসল পরিচয়। এরপর গুগল আর্থ-এর মাধ্যমে নিজের পরিবারের খোঁজ পায় সে। তখন আসল বাবা-মায়ের খোঁজে ভারতে ফেরত আসে। সত্যিই কি বাবা-মাকে খুঁজে পায় সে? জানতে হলে দেখে ফেলুন সিনেমাটি।
বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন গার্থ ডেভিস। মুল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন দেব প্যাটেল।
শিন্ডলার লিষ্ট (১৯৯৩)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান শিল্পপতি ওস্কার শিন্ডলার কিভাবে ১,১০০ ইহুদি শ্রমিককে নাৎসিদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন, তা এই সিনেমার মূল বিষয়। ওস্কার শিন্ডলার নাৎসি বাহিনীর সদস্য হলেও, তিনি নিজের ফ্যাক্টরিতে কাজের সুযোগ দিয়ে প্রায় ১,১০০ ইহুদিকে গণহত্যা থেকে বাঁচান। প্রথমে মুনাফার জন্য কাজ শুরু করলেও ধীরে ধীরে তাঁর মানবিক বোধ জাগ্রত হয়। যুদ্ধের নির্মমতা ও এক ব্যক্তির সাহসিকতার এই গল্প মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যা ফুটে উঠেছে সিনেমাটিতে।
বর্ষীয়ান নির্মাতা স্টিভেন স্পিলবার্গের পরিচালনায় এতে মুল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন লিয়াম নিসন। আরো রয়েছেন বেন কিংসলে, রাফ ফিয়েনস প্রমুখ।
দঙ্গল (২০১৬)
ভারতের কুস্তিগীর মহাবীর সিং ফোগাট ও তার কন্যাদের (গীতা ও ববিতা) কুস্তি শেখানোর সংগ্রাম এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতের সাফল্য অর্জনের গল্পে নির্মিত দঙ্গল। সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নিজের মেয়েদের কুস্তি শেখানো ও শেষ পর্যন্ত ভারতের হয়ে স্বর্ণ জয়ের গল্পে নির্মিত ‘দঙ্গল’ বলিউডের অন্যতম সেরা সিনেমা হিসেবেই বিবেচিত।
নিতেশ তিওয়ারি পরিচালিত সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন আমির খান, ফাতিমা সানা শেখ, সানায়া মালহোত্রা, জাইরা ওয়াসিম প্রমুখ।
তালভার (২০১৫)
ভারতের আলোচিত আরুষি হত্যাকাণ্ড নিয়ে নির্মিত এ সিনেমা। ১৪ বছর বয়সী আরুষি ও তার বাড়ির গৃহকর্মী হেমরাজকে তাদের নিজ বাড়িতে খুন করা হয়। প্রথমে সন্দেহ পড়ে গৃহকর্মীর ওপর, পরে তার মৃতদেহও ছাদ থেকে উদ্ধার হয়। তদন্তের দায়িত্ব পায় সিবিআই, কিন্তু একাধিক তদন্তকারী দল আলাদা আলাদা উপসংহার দেয়, যার ফলে মামলাটি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
মেঘনা গুলজারের পরিচালনায় এতে অভিনয় করেন ইরফান খান, কঙ্কনা সেন শর্মা, নীরজ কাবি প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৩৯:০৬ ১৪ বার পঠিত