
ঢাকার কেরানীগঞ্জে সাবেক স্বামীকে আবারও বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বিথী নামে এক নারীকে। এ হত্যাকাণ্ড দেখে ফেলায় পরপর দুজনকে একই কায়দায় খুন করা হয়। এরপর ৩টি লাশ টুকরা টুকরা করে ফেলা হয় বুড়িগঙ্গা নদীসহ বিভিন্ন এলাকায়। অভিযুক্ত মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুলকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ মাকসুদা গার্ডেন সিটির সামনে শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে থামে একটি অটোরিকশা। প্লাস্টিকের বস্তাসহ নামেন এক যাত্রী। রিকশা চলে যাওয়া মাত্রই বস্তা রেখে উধাও ওই যাত্রী। পুরো দৃশ্যটিই ধরা পড়ে সিসিটিভির ক্যামেরায়।
রাস্তায় পড়ে থাকা বস্তাটি স্থানীয়দের নজরে আসলে ট্রিপল নাইনে কল দেন এলাকাবাসী। পুলিশ সেখানে গিয়ে বস্তা খুলতেই বেরিয়ে আসে দুই হাত, দুই পা আর মাথাবিহীন এক নারীর দেহাবশেষ।
হত্যার মোটিভ জানতে পুলিশ সর্বপ্রথম চেষ্টা করে মরদেহের পরিচয় শনাক্তের। লাশ ভর্তি সেই বস্তার ভেতরই অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে মেলে একটি ফোন রিচার্জ কার্ড। যে কার্ডের সূত্র ধরে আগায় পুলিশ। এক পর্যায়ে পরিচয় মেলে রিচার্জ হওয়া সেই ফোনের মালিকের। তার নাম বিথী। বের করা হয় তার স্বজনদের।
তারা জানান, বিথী আর তার ছেলে নিখোঁজ কদিন ধরেই। বিথীর ফোনের কল রেকর্ড বের করে পুলিশ। দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি কথা হয়েছে মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে, যিনি বিথীর সাবেক স্বামী। আটক করা হয় তাকে। এরপরই বেরিয়ে আসে গা শিউরে ওঠার মতো ঘটনা।
পুলিশকে শিমুল জানান, ৭ বছর আগে বিথীকে বিয়ে করেন তিনি। ৩ বছর সংসারের পর তালাক দিলে অন্যত্র বিয়ে করে সংসার শুরু করেন বিথী। সেই সংসারেরই ছেলে রাফসান। আর শিমুলের দ্বিতীয় স্ত্রী থাকেন জুরাইনে। তবে সম্প্রতি আবার বিথীর সঙ্গে একত্রে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মিরেরবাগ এলাকায় একই বাসায় থাকতে শুরু করেন শিমুল। বিয়ে করার জন্য চাপ দেয়ায় সেই বাসাতেই শুক্রবার সকালে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে বিথীকে হত্যা করেন শিমুল। ঘটনা দেখে ফেলায় ৪ বছরের শিশু রাফসানকে গলা চেপে মেরে ফেলেন তিনি। মেঝেতে দুজনের লাশ দেখে ফেলে ভাড়াটিয়া নুপুর নামের এক তরুণী। তাই তাকেও শ্বাসরোধে হত্যা করে শিমুল।
এরপর ঠান্ডা মাথায় সব আলামত নষ্ট করার জন্য বাথরুমে ৩টি লাশই টুকরা করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে আসে শিমুল।
শিমুলের দেয়া তথ্যে পুলিশ জানায়, উদ্ধার হওয়া টুকরাগুলো নুপুর নামের ওই তরুণীর লাশের কিছু অংশ। বিথীর লাশের ৮ থেকে ১০ টুকরা এবং নুপুরের হাত পা ও মাথা একই বস্তায় ভরে ফেলে দিয়েছে বুড়িগঙ্গায়। আর বিথীর ৪ বছরের সন্তান রাফসানের লাশ ৬ টুকরা করে বস্তাবন্দি করে ফেলে রেখেছে কেরানীগঞ্জ বেয়ারা এলাকার একটি ঝোপের মধ্যে। তারই দেয়া তথ্য মতে পুলিশ সেখান থেকে উদ্ধার করে বস্তাটি।
কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ঠান্ডা মাথায় লাশগুলো বাথরুমে নিয়ে টুকরা টুকরা করেন শিমুল, যাতে সেগুলো বহন করতে সহজ হয় এবং মানুষ এটা নিয়ে সন্দেহ না করে। প্রথমে সে ৪ বছরের রাফসানকে টুকরা টুকরা করে। আমরা ৬টা টুকরা পেয়েছি। একইভাবে বাকি দুইটা লাশ বাথরুমে নিয়ে টুকরা টুকরা করে ওই ব্যক্তি।
পুলিশের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে থানায় আসেন স্বজনরা। হতবাক স্বজনরা চান দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। এই ঘটনায় নিহত বিথীর বড় বোন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৪৮:৪৬ ৮ বার পঠিত