সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে আজ শুরু হতে চলা এশিয়া কাপের ১৪তম আসরটা হচ্ছে ওয়ানডে ফরম্যাটে। আর ক্রিকেটের এই সংস্করণই সবচেয়ে ভালো খেলে বাংলাদেশ। স্বাচ্ছন্দ্যের ফরম্যাট বলেই এবার অতীতের চেয়ে অনেক আত্মবিশ্বাসী মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। গত কয়েক বছরের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স টাইগারদের আশার পালে হাওয়া যোগাচ্ছে।
এশিয়া কাপ জয়ের আশা মনেপ্রাণে ধারণ করছে বাংলাদেশ দল। তবে অধিনায়ক মাশরাফি পই পই করে বলেছেন, ট্রফি জয়ের চূড়ান্ত লক্ষ্য বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত ভালো শুরু পাওয়া। তার মতে, টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার গতিপথ নির্ধারণ করবে প্রথম ম্যাচটি। আজ এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। মাশরাফির চোখে, এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ।
গতকাল দুবাইয়ে ট্রফি উন্মোচনের অনুষ্ঠান শেষে ছয় দলের অধিনায়ক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বাংলাদেশের দলপতি সেখানেও স্পষ্ট করে বলেছেন, আজ ম্যাচে ভালো শুরু চান তিনি। চেনা প্রতিপক্ষ লঙ্কানদের বিরুদ্ধে দল হিসেবে সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে। এই ম্যাচের মাধ্যমে টুর্নামেন্টেই একটা ইতিবাচক শুরুর আশা করছেন মাশরাফি। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। লঙ্কানদের বিপক্ষেই সুপার ফোর পর্বে উন্নীত হওয়ার পথ সুগম করতে চায় বাংলাদেশ। আজ না জিতলে আফগানদের বিরুদ্ধে আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের ম্যাচটি বিষম চাপ হয়ে উঠবে টাইগারদের জন্য। মাশরাফি তাই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচেই তাকিয়ে আছেন।
গতকাল আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অধিনায়ক বলেছেন, ‘সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট। প্রথম ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। আমরা সেদিকেই তাকিয়ে আছি।’
ওয়ানডেতে মুখোমুখি লড়াইয়ে ৭৫ ম্যাচে মাত্র ১১ বার শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পেরেছে বাংলাদেশ। যদিও এই পরিসংখ্যান অক্ষম গত দুই বছরে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিত্র। গত জানুয়ারিতে ঘরের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে লঙ্কানদের উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। অবশ্য পরের দুই ম্যাচে আবার হেরে গিয়েছিল মাশরাফির দল। ত্রিদেশীয় সিরিজ হারের পর এই প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে সামনে পাচ্ছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে ২-১ এ সিরিজ জয়টা আত্মবিশ্বাস যোগাবে দলটাকে। এছাড়াও মাশরাফি প্রেরণা খুঁজছেন এশিয়া কাপের অতীত থেকে। টুর্নামেন্টের শেষ তিন আসরের দুটিতেই ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ।
মাশরাফি বলেছেন, ‘এশিয়া কাপের গত তিনটি আসরে আমাদের বেশ কিছু ভালো স্মৃতি রয়েছে। শেষ তিনটি আসরের দুটিতেই আমরা ফাইনাল খেলেছিলাম। আইসিসি র্যাংকিংয়েও আমরা এশিয়ার তৃতীয় সেরা দল। এটাই আমাদেরকে অনেক বেশি অনুপ্রেরণা এবং উত্সাহ যোগাচ্ছে, যেন বেশ কয়েকটি কঠিন এবং শক্তিশালী দলের বিপক্ষে আমরা খেলতে পারি।’
আগামী বছর ইংল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এশিয়া কাপকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছেন না মাশরাফি। সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিশ্বকাপ এখনও অনেক দূরে। আমরা আগে এই টুর্নামেন্টে ভালো করতে চাই। এখানে প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ।
গত মার্চে নিদাহাস কাপে ঘরের মাঠে দুবার শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে লঙ্কান অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস বলেছেন, নিদাহাস কাপের রেজাল্ট, ঘটনা প্রভাব ফেলবে না এশিয়া কাপে।
এশিয়া কাপের সময়সূচি
গ্রুপ ‘এ’: ভারত, পাকিস্তান, হংকং
গ্রুপ ‘বি’: বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান
গ্রুপ পর্ব
তারিখ ম্যাচ ভেন্যু
১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দুবাই
১৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান-হংকং দুবাই
১৭ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান আবুধাবি
১৮ সেপ্টেম্বর ভারত-হংকং দুবাই
১৯ সেপ্টেম্বর ভারত-পাকিস্তান দুবাই
২০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-আফগানিস্তান আবুধাবি
সুপার ফোর
তারিখ ম্যাচ ভেন্যু
২১ সেপ্টেম্বর এ১-বি২ দুবাই
২১ সেপ্টেম্বর বি১-এ২ আবুধাবি
২৩ সেপ্টেম্বর এ১-এ২ দুবাই
২৩ সেপ্টেম্বর বি১-বি২ আবুধাবি
২৫ সেপ্টেম্বর এ১-বি১ দুবাই
২৬ সেপ্টেম্বর এ২-বি২ আবুধাবি
২৮ সেপ্টেম্বর ফাইনাল দুবাই
*সবগুলো ম্যাচই শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৫টায়
এক নজরে এশিয়া কাপ
(ওয়ানডে ফরম্যাট)
দলীয় সর্বোচ্চ স্কোর ৩৮৫/৭ (পাকিস্তান; প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ; ২০১০)
দলীয় সর্বনিম্ন স্কোর ৮৭/১০ (বাংলাদেশ; প্রতিপক্ষ পাকিস্তান; ২০০০)
বড় ব্যাবধানে জয় ২৫৬ রান (ভারত; প্রতিপক্ষ হংকং; ২০০৮)
ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান ১২২০ (সনাথ জয়াসুরিয়া)
ব্যক্তিগত সেরা ইনিংস ১৮৩ (বিরাট কোহলি; প্রতিপক্ষ পাকিস্তান; ২০১২)
সর্বাধিক সেঞ্চুরি ৬টি (সনাথ জয়াসুরিয়া)
এক আসরে সর্বোচ্চ রান ৩৭৮ (সনাথ জয়াসুরিয়া; ২০০৮)
ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ উইকেট ৩০ (মুত্তিয়া মুরালিধরন)
ব্যক্তিগত সেরা বোলিং ৬-১৩ (অজন্তা মেন্ডিস; প্রতিপক্ষ ভারত; ২০০৮)
সর্বাধিক ৪ উইকেট ৪ বার (অজন্তা মেন্ডিস)
এক আসরে সর্বাধিক উইকেট ১৭ (অজন্তা মেন্ডিস; ২০০৮)
সর্বাধিক ডিসমিসাল ৩৬ (কুমারা সাঙ্গাকারা)
সেরা জুটি ২২৪ (হাফিজ-জামসেদ; প্রতিপক্ষ ভারত; ২০১২)
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ ২৮ (মাহেলা জয়াবর্ধনে)
এশিয়া কাপ রোল অব অনার
সাল চ্যাম্পিয়ন রানার আপ আয়োজক
১৯৮৪ ভারত শ্রীলঙ্কা আরব আমিরাত
১৯৮৬ শ্রীলঙ্কা পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা
১৯৮৮ ভারত শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশ
১৯৯০ ভারত শ্রীলঙ্কা ভারত
১৯৯৫ ভারত শ্রীলঙ্কা আরব আমিরাত
১৯৯৭ শ্রীলঙ্কা ভারত শ্রীলঙ্কা
২০০০ পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশ
২০০৪ শ্রীলঙ্কা ভারত শ্রীলঙ্কা
২০০৮ শ্রীলঙ্কা ভারত পাকিস্তান
২০১০ ভারত শ্রীলঙ্কা শ্রীলঙ্কা
২০১২ পাকিস্তান বাংলাদেশ বাংলাদেশ
২০১৪ শ্রীলঙ্কা পাকিস্তান বাংলাদেশ
২০১৬ ভারত বাংলাদেশ বাংলাদেশ
বাংলাদেশ সময়: ১৪:১৯:২২ ৩২৫ বার পঠিত