গাজীপুর সিটি করপোরেশনের চান্দনা এলাকায় একটি মাদ্রাসায় জোড়া খুনে ওই মাদ্রাসার পরিচালক ইব্রাহিম খলিল তালুকদারকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে আটক করা হয়।
এর আগে ভোরে চান্দনা এলাকায় হুফ্ফাজুল কুরআন মাদ্রাসার পরিচালকের স্ত্রী ও একছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। পরে লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহতরা হলেন- হুফ্ফাজুল কুরআন মাদ্রাসার পরিচালক ও শিক্ষক স্ত্রী মাহমুদা আক্তার স্মৃতি ও ওই মাদ্রাসার সাত বছর বয়সী শিক্ষার্থী মামুন।
নিহত মামুনের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রসুলপুর গ্রামে। ছুটি কাটিয়ে দুই দিন আগে সে বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় ফেরে বলে পরিবারের সদস্যরা জানায়।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা দা, বটি, বিছানার চাদর, রক্তমাখা মশারি উদ্ধার করে পুলিশ।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকার বাসন থানার ওসি মুক্তার হোসেন জানান, ভোরে ফজর নামাজের সময় মাদ্রাসার সকল ছাত্রদের নিয়ে পাশের মসজিদে নামাজ পড়তে যায় পরিচালক ইব্রাহিম খলিল। এসময় কে বা কারা মাদ্রাসায় প্রবেশ করে পরিচালকের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার ও নুরানী ক্লাসের এক ছাত্র মামুনকে কুপিয়ে খুন করে পালিয়ে যায়। পরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজ উদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
তিনি জানান, প্রায় দুই বছর ধরে মাদ্রাসাটি পরিচালনার পাশাপাশি ছাত্রদের কোরআন পড়িয়ে আসছিলেন ইব্রাহিম। ওই মাদ্রাসারই একটি কক্ষে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি থাকতেন। পুলিশ সকালে স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে ইব্রাহিমের ঘরের ভেতর থেকে মাহমুদার এবং দরজার সামনে থেকে মামুনের লাশ উদ্ধার করে। মাহমুদার গলায়, গালে ও কানে এবং মামুনের ঘাড়ে, মাথায় ও পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
মাদ্রাসা পরিচালক ইব্রাহিম খলিল তালুকদার জানান, মাস ছয়েক আগে তার প্রথম স্ত্রীকে তার উশৃঙ্খল আচরণের জন্য তালাক দেয়া হয়। এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে সে অথবা তার ভাইয়েরা এই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি।
মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থী জানায়, তাদের মাদ্রাসায় ১২ জন শিক্ষার্থী হেফজ বিভাগে রয়েছে। আমরা এক সঙ্গেই ঘুমিয়েছি। ভোরে নামাজ পড়তে গেছি, নামাজ শেষে এক ছাত্রের কাছে হত্যার ঘটনা জানতে পেরে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। এসময় আমরা মাদ্রাসার রুমের সামনে মামুনের গলাকাটা লাশ এবং ভেতরে মাদ্রাসা পরিচালকের স্ত্রীর লাশ দেখতে পাই।
মাদ্রাসার এক অপর এক ছাত্র জানায়, সোমবার রাতে ছাত্ররা ইব্রাহিমকে দা ধার দিতে দেখেন। ভোরে ফজরের নামাজে যাওয়ার আগে ইব্রাহিম মামুনকে তার ঘরে ডেকে পাঠিয়েছিলেন।
জোড়া খুনের খবর পেয়ে আতঙ্কিত মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অনেকের অভিভাবকরা মাদ্রাসায় ছুটে আসেন। অনেক শিক্ষার্থী এক সঙ্গে দুই খুন ও পুলিশের আনাগোনায় ভয় পেয়ে যান। তাদের দ্রুত এই মাদ্রাসা থেকে ছাড়িয়ে নেয়ার আকুতিও জানান অভিভাবকরা।
এদিকে, সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান, ডিসি (ক্রাইম) শফিকুর রহমান, অপরাধ তদন্ত বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার সুলতান মাহমুদ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের একটি দল। সিআইডির দলটি হত্যার আলামত সংগ্রহ ও মাদ্রাসা পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তারা পুরো ঘটনাস্থল নিরাপত্তা বেস্টনী দিয়ে হত্যার আলামত জব্দ করছেন।
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের অপরাধ তদন্ত দলের ওসি শহীদুল ইসলাম জানান, জোড়া খুনের পর অপরাধ তদন্ত বিভাগ ঘটনাস্থল ঘিরে রাখে।
জিএমপি কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে হত্যার কারণ জানা যায়নি। আমরা আশা করছি, অচিরেই এ জোড়া খুনের রহস্য জানা যাবে এবং অপরাধীদের শনাক্ত করা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৪:৪৮ ৩৫০ বার পঠিত