মীম মানতাসা। ‘লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার-২০১৮’ চ্যাম্পিয়ন। রং-তুলি আর ক্যানভাস ছেড়ে তার শোবিজে আগমন অনেকটা রূপকথার মতো। চূড়ান্ত এই পর্বে বিজয়ী হওয়ার জন্য পেছনে ফেলেছেন বারো হাজারেরও বেশি প্রতিযোগীকে। ইতিমধ্যেই নাট্যাভিনেত্রী হিসেবে অভিষেক হয়েছে ছোট পর্দায়। চারুকলার পাঠ থেকে দেশের সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস মঞ্চে আসার গল্প নিয়ে তার মুখোমুখি হয়েছে ঢাকাটাইমস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সৈয়দ ঋয়াদ
চারুকলা থেকে অভিনয়ে, ভিন্ন ট্র্যাকে রহস্য কি?
ছোটবেলায় ভাবতাম মহাকাশচারী হব। সেই ইচ্ছেটা পরে আর থাকেনি। একটা সময় পেইন্টার হব এটাই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতাম। সেই হিসেবেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় পড়ছি। তখন মনে হয়েছিল চারুকলায় আমি ভালো করব। আমার আঁকতে ভালো লাগে, আমি আর্টিস্টই হব। মূলত এ কারণেই কিন্তু চারুকলায় পড়া। সত্যি বলতে কি অভিনয় করার বা শোবিজে আসার পেছনে অন্য কোনো চেষ্টা বা ইচ্ছা ছিলই না।
তাহলে তো পরিকল্পনাহীনভাবেই ‘লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার’ প্রতিযোগিতায় এসেছেন?
সে রকমই। অভিনয় করব কি না সে সিদ্ধান্ত তখন পর্যন্তও নেইনি। পরিকল্পনাহীনই বলা চলে। সবাই বলতো আমি পারব। সে কারণেই কিন্তু আমার এখানে আসা। নিজেকে নিয়ে এটা আমার এক ধরনের এক্সপেরিমেন্ট বলতে পারেন। আমি স্টার হব সেই চিন্তা করে এখানে আসিনি। নিজেকে পরীক্ষা করা কতদূর যেতে পারি বা আমি পারি কি না। এখানে কি ধরনের প্রতিযোগিতা হয় সে সম্পর্কেও যে অনেক কিছু জানি তাও নয়। সবাই অংশগ্রহণ করে আমিও সে রকমই করেছি। এক ধরনের কিউরিসিটি থেকেই অংশগ্রহণ করেছি।
দেশের সবচেয়ে বড় ‘বিউটি কন্টেস্ট’, সে হিসেবে প্রস্তুতি নিয়ে অংশগ্রহণ করাটাই কী যৌক্তিক নয়?
আমি যখন রেজিস্ট্রেশন করেছি তখন এত কিছু ভেবে করিনি। আমার কি স্কিল্ড আছে বা নেই সেটাও ঠিক ভাবিনি। সেভাবে বলতে গেলে আমার তেমন কোনো কালচারল বিষয়ে ইনভল্ব ছিলাম না। কারণ আমি কখনো ভাবিনি যে, কোনো রিয়েলিটি শোতে অংশগ্রহণ করব কিংবা অভিনয় করব। আর অভিনয় কিংবা নাচ-গানের যে চর্চা থাকে আমার বেলায় তেমন কিছুও ছিল না। কোনো একটি বিশেষ বিষয়ে পারদর্শী হলে এখানে ভালো করবে এমনটা কিন্তু নয়।
পরিবারের কেউ শোবিজে আছেন?
কনজারভেটিভ একটি পরিবারে বড় হয়েছি আমি। আমাদের পরিবারের কেউ শোবিজে কাজ করে না। অতীতেও কেউ অভিনয় কিংবা শোবিজের কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত ছিল না। আমাদের পরিবারে আমি প্রথম মানুষ যে শোবিজে পা রেখেছি।
প্রথম দিন অডিশনের কথা মনে আছে?
হ্যাঁ, আমার খুব মনে আছে। আমাকে বিচারকরা বলেছিলেন তোমাকে আমরা কেন বাছাই করব? তোমার কোন যোগ্যতার জন্য তুমি পরের রাউন্ডে যেতে পারো বলে মনে করো। সে বিষয়ে তুমি কিছু বলো। আমি প্রথমে কিছুই বলতে পারিনি। বেশ নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম। অনেকক্ষণ চুপ করে ছিলাম।
নিজের সঙ্গে অন্য প্রতিযোগীদের যে পার্থক্য আছে সেটা বুঝতে পেরেছেন কখন?
অনেক রকম প্রতিযোগী থাকে। প্রথমে সেভাবে আঁচ করতে পারিনি। পরে আমার যেটা মনে হয়েছে, প্রত্যেক প্রতিযোগীই কোনো না কোনো বিষয়ে পারদর্শী। প্রত্যেকেরই স্পেশালিটি আছে।
প্রথম দিনে ক্যামেরার সামনের অনুভূতি কেমন ছিল?
আমার প্রথম কাজটাই ছিল তাহসান (তাহসান খানের) ভাইয়ার সঙ্গে। আমি সত্যি ভয় পেয়েছি। একেবারেই আনাড়ি, আনকোরাও বটে। সেই জায়গা থেকে আমার অনেক ভয় ছিল। বলতে দ্বিধা নেই, এখনো যে সেই ভয়টা পাই না তাও কিন্তু না।
স্বপ্নের বিপরীতে হাঁটছেন, এটা কি কঠিন মনে হচ্ছে না?
অভিনয়ের অনেক কিছুই শিখতে হবে আমাকে। অনেক কিছুই জানতে হবে। আমি এখনো অনেক কিছু জানি না। সেসবও আমাকে শিখতে হচ্ছে। শোবিজে আমি একেবারেই নতুন। আমার জন্য তো পুরোটাই বিগ চ্যালেঞ্জ। মাত্র বিজয়ী হয়েছি। ফলে এখনো খুব বড় পরিকল্পনা করিনি। সামনের পথটা চলতে চলতে শিখতে হবে।
আপনি লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টারের নবম আসরের চ্যাম্পিয়ন। এর আগের আটজন এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তাদের মধ্যে কাকে আপনার ভালো লাগে?
আমার মীমি আপুকে (বিদ্যা সিনহা মিম) ভালো লাগে। অন্য সবাইকেও পছন্দ করি। তাদের প্রত্যেককেই বিভিন্ন কারণে ভালো লাগে। লাক্স সুপার স্টাররা প্রত্যেকেই নিজেদের জায়গায় অনন্য। প্রত্যেকেই এখন স্ব-স্ব জায়গায় প্রতিষ্ঠিত।
কেমন লাগছে লাইট ক্যামেরার সামনে?
আমি প্রতিটি কাজই অনেক বেশি উপভোগ করছি। আগে যে বিষয়গুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ ছিল না কিংবা বিষয়গুলো জানার খুব একটা সুযোগ হয়নি, এখন অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। প্রতিনিয়তই নতুন করে কিছু জানার সুযোগ হচ্ছে। সব মিলিয়ে বেশ ভালোই বলবো।
লাক্স সুপার স্টারদের অনেকেই এখন চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। চলচ্চিত্রে অভিনয়ে আপনার আগ্রহ আছে?
চলচ্চিত্র একজন অভিনেতার জন্য সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম। আমি নিশ্চয়ই চলচ্চিত্রে কাজ করতে চাই। সেজন্য প্রস্তুতি দরকার। প্রস্তুতি নিয়েই বড় পর্দায় হাজির হতে চাই।
আগের মীমের সঙ্গে সুপার স্টার মীম কি একই রকম আছে, নাকি পরিবর্তন হয়েছে।
সাদামাটা বা সাধারণ জীবন থেকে লাইম লাইটে, পরিবর্তন তো হয়েছেই। ফ্যান ফলোয়ার বেড়েছে। আগে এমন ছিল না। জীবনটা একটু জটিলই হয়েছে (হেসে)। সাধারণভাবে কিছু আর করা যাচ্ছে না।
অভিনয়কে কিভাবে দেখছেন?
এটা অনেক কঠিন কাজ। নিজেকে প্রতিনিয়ত বদলাতে হয়। আমার আমি থেকে পুরোপুরি বদলে যাওয়া তো কম কথা নয়, অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জটা আমার কাছে রোমাঞ্চকর।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৮:৪৩ ৩৭১ বার পঠিত