সড়ক পরিবহন আইন শিথিলের দাবিতে ধর্মঘট করছেন রাজধানীর পণ্যবাহী ট্রাক ও মিনি ট্রাকচালকরা। আর তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন গণপরিবহণ শ্রমিকরাও। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে গণপরিবহন সংখ্যায় অত্যল্প। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারন যাত্রীরা।
সড়কে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে’প্রাণহানি ঘটালে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গত ১৯ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ জাতীয় সংসদে পাস হয়। আইনে কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া ও অবহেলাজনিত গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে এবং সেই দুর্ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
এ আইনটি শিথিলের দাবি জানিয়ে আসছেন চালক-শ্রমিকরা। এ ধারাবাহিকতায় রবিবার সকাল থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একযোগে আন্দোলন শুরু করে পন্যপরিবাহী ট্রাকচালকরা। আর এতে যোগ দিচ্ছে রাজধানীর গণপরিবহণ শ্রমিকরাও।
আন্দোলনের মুখে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্টান্ড থেকে সকালে থেকে ছেড়ে যায়নি বনশ্রীগামী স্বাধীন পরিবহণের কোনো বাস। একইভাবে বন্ধ রয়েছে মেশকাত, মৈত্রী, দীপন ট্রান্সপোর্ট, এটিসিএল, এফটিসিএল, প্রজাপতি পরিবহণের বিভিন্ন রুটের বাস।
সকাল থেকে মোহাম্মদপুর বিআরটিসি ডিপো থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও বেলা ১০টা নাগাদ তাও বন্ধ হয়ে যায়। তবে বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ পুনরায় চালু হয় বিআরটিসির বাস চলাচল।
দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন বাস কাউন্টার ঘুরে সেখানে সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া যায়নি। বেশ কয়েকটি কাউন্টারে সকাল থেকেই পরিবহণ সংশ্লিষ্ট কেউ আসেনি বলেই জানাচ্ছে স্থানীয় কিছু সূত্র।
বাসের অপেক্ষায় বাসস্ট্যান্ডগুলোতে দেখা গেছে সাধারণ যাত্রীদের ভিড়। বাস না পেয়ে অনেকেই খুজছেন বিকল্প। রিক্সা, অটোরিকশা ও রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে গুনছেন বাড়তি ভাড়া।
এদিকে রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর, ২ নম্বর ও ১০ নম্বর এলাকাজুড়ে গণপরিবহন স্বাভাবিকের তুলনায় কম। একইভাবে গণপরিবহন সংখ্যা কম দেখা গেছে বাংলামোটর, শাহবাগ, মগবাজার ও মিরপুর রোডে। তবে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক আছে রাজধানীর সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী অংশে।
মোহাম্মদপুর বেড়িবাধ তিন রাস্তার মোড় আন্তঃজেলা ট্রাক চালক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সড়ক দূর্ঘটনার ক্ষেত্রে চালকের জন্য যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে পরিবহণ শ্রমিকরা তার ঘোর বিরোধী। এই আইন তুলে না নেয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।
খাইরুল নামের এক ট্রাকচালক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘একজন ড্রাইভার ইচ্ছা কইরা কোনো দিন দুর্ঘটনা করে না। একটা ড্রাইভার ৫ লাখ টাকা জরিমানা কোই থিকা দিব? যাবজ্জীবন জেল, ফাঁসি এগুলো কি?’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন সঠিক। আন্দোলন ট্রাকের শ্রমিকদের হইলেও বাসের শ্রমিকরাও আমাদের সাথে আছে। ন্যায্য দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
শামসু নামের এক প্রবীন বাসচালক সাথে আলাপকালে বলেন, ‘এরশাদের আমলে ড্রাইভার একসিডেন্ট করলে ৭ বছরের জেল, এক লাখ টাকা জরিমানার নিয়ম করছিল। আমরা ১৭ দিন আন্দোলন কইরা এই নিয়ম ঠিক করছি। এখন ৩ বছরের জেল। কোই থিকা হ্যারা নিয়ম করে? আমরা কি ইচ্ছা কইরা একসিডেন্ট করি?’
এ বাসচালকের ভাষ্য, অনেকেই নিজ থেকে বাসের নিচে লাফ দেয়। সেটি তো চালকের দোষ হতে পারে না।
বলেন, ‘কত লোক আন্তহত্যা করার লাইগা গাড়ির নিচে লাফ দেয়, এই দোষ কি আমগো? নাম একটা পাইছে ঘাতক চালক। ট্রেনে একসিডেন্ট হয় না? লঞ্চে হয় না? প্লেনেও তো কতো লোক মরে। হ্যাগো লাইগা আইনও নাই, যাবজ্জীবনও নাই।’
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৫:৪৮ ২৩৮ বার পঠিত