তরুণ প্রজন্মের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর দেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তরুণদের জাতির ভবিষ্যৎ আখ্যায়িত করে তাদের জন্য বর্তমানকে উৎসর্গ করেছেন তিনি। ভালোমতো পড়াশোনা করে প্রযুক্তির দিকে মনোযোগী হতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
রবিবার সকালে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। মোবাইলফোনের এক অপারেটর থেকে আরেক অপারেটরে যাওয়ার পদ্ধতির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যে কাজই করি আমাদের লক্ষ্য তরুণদের ভবিষ্যৎ। আজকের তরুণরাই ভবিষ্যৎ চালাবে। তাদেরকে প্রযুক্তির শিক্ষা দিতে পারলে তারা দেশ এগিয়ে নেবে। আলোকিত জীবন তারাই আমাদেরকে দেবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের বলব, তোমরা মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া কর। প্রযুক্তির ব্যবহার তোমাদের শিখতে হবে। প্রযুক্তি পরিবর্তনশীল। তরুণ প্রজন্মেরই দায়িত্ব পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে চলা।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘যতদিন ক্ষমতায় আছি পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সব পদক্ষেপ নেব। আমরা বর্তমানকে উৎসর্গ করছি তরুণদের ভবিষ্যতের জন্য।’
নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আজ স্কুলে স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। বিদেশে গিয়ে দেখেছি তারা কীভাবে এরকম ডিভাইস ব্যবহার করে শিক্ষা দিচ্ছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা কেন এভাবে শিখবে না। ইতোমধ্যে প্রায় স্কুলে ডিজিটাল পদ্ধতি, মাল্টিলেভেল ক্লাসরুম করে দিচ্ছি। এতে বাচ্চারা তাড়াতাড়ি শিখতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী তার নাতনির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার তিন বছরের নাতিটাও মোবাইলের সব বুঝে। তার জন্য পিন অনেকবার পাল্টিয়েছি। কিন্তু কীভাবে যেন পেয়ে যায়। তাকে জিজ্ঞেস করেছি, কীভাবে পাও? সে বলেছে, তুমি যখন বাটনে টিপো দূর থেকে দেখেই তা টের পেয়ে যাই।’
‘একবার আমাকে এসে বলল, তিনটি নাম্বার পেয়ে গেছি, চতুর্থটা দাও না। আমি বললাম, তিনটি যেহেতু বের করতে পেরেছ চতুর্থটাও বের করতে পারবে, চেষ্টা কর।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিশুদেরকে প্রযুক্তির কিছু শেখাতে হয় না, তারা নিজেরাই দেখে দেখে শিখে নেয়। এরাই ভবিষ্যতে ডিজিটাল শিশু হিসেবে গড়ে উঠবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা যখন ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসি তখন ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলাম। আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তব। তবে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। কারণ প্রযুক্তি বহমান নদীর মতো। নতুন প্রযুক্তি আসবে, তাল মিলিয়ে চলতে হবে। ছেলেমেয়েদের সেভাবে তৈরি করতে হবে। যাতে তারা সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারে।’
এক অপারেটর থেকে আরেক অপারেটরে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা অনেক সুবিধার। অনেকগুলো সিম ব্যবহার করতে হয় না। পৃথিবীর অনেক দেশে এই সুবিধা আছে। আজ থেকে আমরাও এই সুবিধায় যুক্ত হলাম।
বেসরকারি খাততে সরকার উৎসাহিত করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোবাইল ফোন বেসরকারি খাতে দিয়েছিলাম বলেই আজ মানুষের হাতে হাতে মোবাইল। তিনি জানান, তার সরকার পাঁচ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছে। এতে ইন্টারনেট সার্ভিসের আওতায় এসেছে সারাদেশে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কোথায় ছিলাম, আর এখন কোথায় এসেছি। মাত্র ১০ বছরে এই পরিবর্তন হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে বলে। আর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পেরেছে তরুণ প্রজন্ম ভোট দিয়েছে বলে।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, বেসরকারি খাত উৎসাহিত করতে তার সরকার ৪৪টি টেলিভিশনের লাইসেন্স দিয়েছে। তবে তিনি জানান, এতগুলো টেলিভিশন লাইসেন্স দেয়ায় ভুক্তভোগী তারাই। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সরকার প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৮টি হাইটেক পার্ক করার পরিকল্পনা নিয়েছি আমরা। ইতোমধ্যে দুটি হয়েছে। ৩৫৫ একর জমির ওপর গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি হচ্ছে। এখানে বিভিন্ন দেশ থেকে বিনিয়োগ আসবে। আমরা ডিজিটাল ডিভাইস রপ্তানি করতে পারব। তরুণদের কর্মসংস্থানের আর অভাব হবে না।
‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ এর মাধ্যমে ঘরে বসেই তরুণদের বৈদেশিক মুদ্রা কামানোর সুযোগ আছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এজন্য তরুণদের মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা এবং প্রযুক্তির আপডেট জ্ঞান লাভ করার প্রতি তাগিদ দেন তিনি।
ট্যাক্স কমানোর দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কথায় কথায় ট্যাক্স কমানোর দাবি করলে উন্নয়ন হবে কীভাবে! ট্যাক্স দিচ্ছে বলেই বাজেট সাত গুণ বৃদ্ধি করতে পেরেছি। সবচেয়ে বড় কথা বাইরের কাছে হাত পাততে হচ্ছে না। এটা আমাদের জন্য সম্মানের। সেই সম্মানটা ধরে রাখতে চাই। আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।’ তবে অর্থমন্ত্রী ট্যাক্স মাফ করে দিলে তার করার কিছু নেই বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে আইসিটি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমদ পলকসহ সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং মোবাইল অপারেটরগুলোর শীর্ষ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৯:৪৪ ১৮৯ বার পঠিত