বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে এবং সমস্যা সমাধানভিত্তিক গণিত শিক্ষা প্রবর্তনের প্রত্যয় নিয়ে শুরু হলো গণিত অলিম্পিয়াড পদ্ধতির সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প। গতকাল ২১ অক্টোবর সকালে থেকে শুরু হওয়া প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এই প্রকল্পের উদ্বোধনী এবং অবহিতকরণ কর্মশালায় বক্তারা এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, আমাদের প্রজন্মদের যে স্বপ্নগুলো পূরণ করতে পারি নাই সেগুলো পূরণ করবে ভবিষ্যত প্রজন্ম। আমাদের অপূর্ণতাগুলোকে শিক্ষার্থীরাই পূরণ করবে। শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন আপনাদের চিন্তাকে প্রসারিত করতে হবে। শুধু নিজের জন্য বা পরিবারের জন্য ভাবলে হবে না। ভাবতে হব দেশ ও দশের কথা। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। শিক্ষায় আনতে হবে আনন্দযোগ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন। বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, আমরা অনেকদিন ধরে গণিতের এই আন্দোলন করে আসছি। গত দেড় যুগে গণিত অলিম্পিয়াড করতে গিয়েই তৈরি হয়েছে গণিত অলিম্পিয়াড পদ্ধতি। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দে গণিত শিক্ষার প্রবর্তন করবে। আর একজন শিক্ষার্থী গণিতে আনন্দ পেলে আজীবন এর সুফল পেয়ে যাবে। তিনি জানান, তাঁর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক ছোটবেলার গণিত শিক্ষকই। ওই শিক্ষকের অনুপ্রেরণা থেকে আমার যে সংখ্যার প্রতি ভালোবাসা, গণিতের প্রতি ভালোবাসা তা এখনও বিদ্যমান। তাই প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিতের ভালোবাসা তৈরিতে এই উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহ-সভাপতি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, এই প্রকল্পটি খুবই ব্যতিক্রম। এর আগে সবসময় দেখেছি বিদেশিরা এসে আমাদের উন্নয়নের পরামর্শ দেয়। এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে আমাদের দেশেই তৈরি গণিত অলিম্পিয়াড পদ্ধতি একদম ছোট্ট শিশুদের মধ্যে প্রয়োগের জন্য। এমন সাহসি পদক্ষেপের জন্য আমি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাই। সকাল বেলা যখন ছেলে-মেয়েরা বইখাতা নিয়ে স্কুলে যায় এর চাইতে সুন্দর দৃশ্য আমি কখনও দেখি নাই। এই শিশুদের জন্য যদি আনন্দদায়ক একটা শিক্ষা ব্যবস্থা না করতে পারি তবে এর দায় আমাদের সবার। আমাদের মনে রাখতে হবে, শহুরে সুবিধাপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই দেশের বাইরে পাড়ি জমায়। কিন্তু এ দেশের সেবায় নিয়োজিত হয় এইসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই। তাই তাঁদের জন্য এ ধরনের প্রকল্প ভবিষ্যত নেতৃত্ব এবং দেশ গড়তে ভূমিকা রাখবে।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. এ এফ এম মনজুর কাদির, অতিরিক্ত সচিব( উন্নয়ন) মোঃ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল, এনডিসি, গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান ও এটুআই-এর ই-লার্নিং স্পেশালিস্ট অধ্যাপক ফারুক আহমেদ। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা রাখেন প্রকল্প পরিচালক মো. নুরুন্নবী। । গণিত অলিম্পিয়াড পদ্ধতিতে পাঠ পরিকল্পনা প্রনয়ণ করে আগামী জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত নির্বাচিত আশিটি স্কুলের ২৪০ জন প্রশিক্ষিত শিক্ষকের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে পাঠদান পরিচালনা করা হবে। যা থেকে প্রাপ্ত পূর্ণাঙ্গ পাঠদান পদ্ধতি প্রস্তুত করে পরবর্তিতে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে সকল বিদ্যালয়ে ছড়িয়ে দেয়া হবে। এই পদ্ধতিতে পাঠদান করতে পারলে বিজ্ঞানমনস্ক ও তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়ে উঠবে।
মুনির হাসান জানান, গণিত অলিম্পিয়াড পদ্ধতি হলো গণিতের প্রতি শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা তৈরির মাধ্যম। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা গণিত শিখবে খেলতে খেলতে। অনুশীলনী তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য। অথচ বর্তমানে শিক্ষকই গণিত বইয়ের অনুশীলনী করে দেন। এই পদ্ধতি চালু হলে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই অনুশীলনীর অংক করবে। শিক্ষক শুধু ধরিয়ে দিবেন কীভাবে শিখতে হবে। অর্থাত্ আমরা শেখাবো, কীভাবে শিখতে হয়। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই শিখবে বাকিটা। বক্তৃতার শেষে গণিত অলিম্পিয়াড পদ্ধতির উপর মুনির হাসান একটি ভিডিও প্রদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম এবং একমাত্র স্বর্ণপদক জয়ী আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরীকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, “গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের গাণিতিক দক্ষতা বৃদ্ধির সম্ভাব্যতা যাচাই”শীর্ষক এই সমীক্ষা প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের উদ্বোধনী এবং অবহিতকরণ কর্মশালায় অংশ নেন প্রকল্পের আওতাধীন ৮০টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, ১৭ টি জেলার ১৭টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাবৃন্দ এবং পিটিআইসমূহের সুপারিন্টেনডেন্টগণ। এই প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক ভাবে ৮০ টি স্কুলের ২৪০ জন শিক্ষককে গণিত অলিম্পিয়াদ পদ্ধতি প্রয়োগ করে গণিত পাঠদান প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। শিক্ষকেরা প্রশিক্ষণ পরবর্তী সময়ে নিজ নিজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ প্রশিক্ষণের প্রয়োগ করবেন।
উদ্বোধনী পবের্র পরে অনুষ্ঠিত হয় অবহিতকরণ কর্মশালা। এই কর্মশালা পরিচালনা করেন মুনির হাসান। তিনি সবার সামনে গণিত অলিম্পিয়াড পদ্ধতির খুঁটিনাটি তুলে ধরেন। এসময় শিক্ষকগণ ও কর্মকর্তারাও আলোচনায় অংশ নেন, তাঁরা এ বিষয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:০৩:০৫ ২০৩ বার পঠিত