আব্দুস সালাম মূর্শেদী। খেলাধূলা বিশেষ করে ফুটবল বিষয়ে যাদের এতটুকুর আগ্রহ রয়েছে তাদের প্রায় সকলেই এই নামটির সাথে বিশেষভাবে পরিচিত। কেননা তার বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল লীগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ২৭ গোলের রেকর্ড আজও অক্ষুন্ন। জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় এবং ক্যাপটেইন হিসেবে দক্ষতার পরিচয় রেখেছেন অসংখ্যবার। সেই কৈশোর-যৌবনে যেমন দাপটের সাথে বেড়িয়েছেন এদেশের ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল এক নক্ষত্র হিসেবে একইভাবে দক্ষতা আর নৈপুণ্যতার ছাপ রেখেছেন জীবনের সকল ক্ষেত্রে। একজন সফল খেলোয়াড়, ব্যবসায়ী কিংবা সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত সালাম মূর্শেদী সম্প্রতি দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আইন পরিষদ জাতীয় সংসদের একজন সদস্য হিসেবে।
খুলনা-৪ আসনের (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই এক সময়ের তারকা ফুটবলার আব্দুস সালাম মূর্শেদী বলেন, আমি শাসক হতে চাই না, হতে চাই জনগণের সেবক। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমার জন্মস্থান তথা খুলনার নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নের একটি নজির স্থাপন করতে চাই। অবহেলিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে বদলে দিতে চাই। গত ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে শপথ বাক্য পাঠ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি আরো বলেন, আমি হয়ত এত কম সময়ে সবকিছু পারব না, তবে কাজ শুরু করতে পারব।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বিনা প্রতিদ্বিন্দ্বিতায় নির্বাচত এই সংসদ সদস্য বলেন, আমি আপনাদের (সাংবাদিক) স্মরণ করিয়ে দিতে চাই জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন শাসক নন, তিনি জনগণের সেবক হিসেবে রাতদিন কাজ করছেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ আজ বিশ্বের বুকে সম্মানের সঙ্গে মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে। আমি তাকেই অনুসরণ করব। তিনি আরো বলেন, আমি থাকতে আমার এলাকার কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না। টাকার অভাবে কারো লেখাপড় বন্ধ হবে না। ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির আশা প্রকাশ করেন তিনি।
খুলনার রূপসা থেকে কেবলমাত্র ফুটবল খেলাকে ভালোবেসেই সত্তর দশকের শেষ ভাগে পাড়ি জমিয়েছিলেন রাজধানী ঢাকায়। সেই সময়ের দাপুটে এই ফুটবলার সালাম মূর্শেদী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একাধিক অ্যাওয়ার্ড এবং সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেছেন। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের পক্ষ থেকে তাকে এএফসি সিলভার স্টার-২০১৩ এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক এই খেলোয়াড় বাংলাদেশ ফুটলব ফেডারেশনের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি হিসেবে তিন বার নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালনে দক্ষতার নজির স্থাপন করেছেন।
সালাম মূর্শেদী দায়িত্ব পালনে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বিজিএমইএ-এর সভাপতি হিসেবে। পালন করেছেন ইএবি’র সভাপতির দায়িত্ব। একইসাথে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনসহ ব্যক্তিগত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোও তার তত্ত্বাবধানে আরো গতিশীল হয়েছে। ব্যক্তিগত খেলাধুলার মাধ্যমে একদিকে জয় করেছেন লাখো ভক্তের ভালোবাসা অপরদিকে নিজের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার পরিবারের দারিদ্র্য ঘুচিয়েছেন। সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে সরকারের কর বাহাদুর পরিবারের খেতাবও অর্জন করেছেন।
আর এবারে গণতন্ত্রেও মানসকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে একজন সংসদ সদস্য হিসেবে উন্নয়নের নজির স্থাপনের ঘোষণা দিয়ে সালাম মূর্শেদী বলেন, আমার এলাকার উন্নয়নে ইতিমধ্যেই একটি স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সেই সাথে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আমি চাইব মংলা বন্দর পুরোপুরি কাজে লাগাতে। সে জন্য যেখানে যা করা দরকার হবে আমি তাই করব। আপনারা জানেন স্বপ্নের পদ্মাসেতু এখন বাস্তবে রূপ নেওয়ার পথে। এই সেতু চালু হলে মংলা বন্দর হবে অর্থনীতির একটি বড় প্রাণ। মংলা বন্দর এক সময় অকেজো হয়ে পড়েছিল। তা এখন পুরোপুরি সচল। এই বন্দর কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনেক কিছুই আছে। সরকারি দলের একজন সংসদ সদস্য হিসেবে মংলাকে কার্যকর বন্দরে রূপ দিতে আশাব্যক্ত করেন তিনি। একইসাথে পদ্মাসেতুকে খুলনাসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ উল্লেখ করে পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলে খুলনাঞ্চলে পাইপ লাইনে গ্যাস সংযোগ চালু হওয়ার আশা ব্যক্ত করেন। গ্যাস ভিত্তিক শিল্প-কলকারাখানা গড়ে তোলার মাধ্যমে এই অঞ্চলকে দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক অঞ্চলে রূপ দেয়ার আশা প্রকাশ করেন।
নবীন এই সংসদ সদস্য বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী মানুষ হিসেবে চাইবো মংলা বন্দর পুরোপুরি কাজে লাগাতে। সজন্য যা যা করার দরকার আমি করব। খুলনার উন্নয়ন হলে ওই অঞ্চলের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমার লক্ষ্য হবে বিনিয়োগকারীদের খুলনায় বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে সেই কাজ আমার জন্য খুব কঠিন হবে না। তাছাড়া আমাদের ব্যবসায়ী বন্ধুরাও বিনিয়োগে অত্যান্ত আগ্রহী। তিনি আরো বলেন, আগে যারা এই অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন, তারা সবাই চেস্টা করেছেন। কিন্তু উন্নয়নের যথাযথ প্রতিফলন হয়নি। যেভাবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে হয়েছে। আগামী ১০ বছরে খুলনা হবে ‘বিজনেস হাব’। দ্বিতীয় বৃহত্তর শিল্প নগরী খুলনার মর্যদা পুন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি এলাকার সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সাবেক এই ফুটবলারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। যুবসমাজকে খেলাধুলা-শরীরচর্চার মধ্যে ব্যস্ত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন. বর্তমান সরকার ক্রীড়াবান্ধব সরকার। প্রধানমন্ত্রী মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে অভ্যস্ত। সুতরাং এমন একটি সরকারের হাতে ক্রীড়ার উন্নতি ঘটবে-এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, যুব সমাজকে খেলাধূলার মাধ্যমে ব্যস্ত রাখতে চাই। এতে সমাজ মাদক ও জঙ্গি মুক্ত হবে। তিনি ফুটবলকে একটি আধুনিক ফুটবলে রুপন্তারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ব্যক্তিগত জীবন আচরণে অত্যান্ত বিনয়ী এই নেতা প্রথমে ফুটবল খেলা এবং পরবর্তীতে ব্যবসায়িক কারণে দীর্ঘদিন নিজের জন্মস্থান থেকে রাজধানীতে থাকলেও নিয়মিতই ছুটে গেছেন শিকড়ের টানে। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে এলাকায় গেছেন মানুষের দু:খ-কষ্টে সাধ্যমতো এগিয়ে গেছেন। আর তাইতো সংসদ সদস্য হিসেবে সংবাদকর্মীদের সামনে কথা বলার সময়, বারবার শ্রদ্বার সাথে স্মরণ করেছেন খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সদ্য প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা রশিদী সুজাকে। খুলনার জনগণের মতো সালাম মূর্শেদীও প্রয়াত সুজাকে ‘ভাইজান’ বলেই সম্বোধন করে বলেন, ভাইজানের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার মাধ্যমেই তাকে শ্রদ্ধা জানাতে চাই। তিনি আরো বলেন, নেতা কর্মীদের নতুন অবিভাবক হিসেবে তিনি প্রায়ত নেতা মোস্তফা রশিদী সুজা’র শুন্য স্থান পূরণে সচেষ্টা থাকবেন। তেরখাদা, রুপসা ও দিঘলীয়ার শিক্ষা, শিল্প, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্ঠা করবেন। দলের সিনিয়র নেতা, জেলা কমিটির নেতা ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীদের সাথে পরামর্শ করে এলাকায় উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করবেন বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, সালাম মূর্শেদীর বাড়ি খুলনার রূপসা উপজেলায়। তিনি বাংলাদেশে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ইএবি) সভাপতি, এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি। দশম জাতীয় সংসদের তিনিই সর্বশেষ এমপি। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার পর নতুন এমপিরা শপথ নেওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন। আওয়ামী লীগ খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার মৃত্যুতে শূন্য ঘোষিত খুলনা-৪ আসনের উপনির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৯:৫৬ ২৩০ বার পঠিত