সংরক্ষিত নারী আসনের জাতীয় পার্টি মনোনীত টানা দুইবারের সংসদ সদস্য মাহজাবীন মোরশেদ। ছাত্রজীবনেই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা, দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত রাখতে শিক্ষকদের নির্দেশনা ও আদেশ-উপদেশ অসহায়-দরিদ্র মানুষদের সাহায্য সহযোগিতায় উৎসাহিত করে তোলে। মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার আকাক্সক্ষা থেকেই তখন স্কুলের পকেট মানি বাঁচিয়ে কিংবা ঈদের সময় বড়দের কাছ থেকে পাওয়া সালামী ঈদে নিজে খরচ না করে বিলিয়ে দিতেন বাসার গৃহপরিচারিকা ও স্কুলের কর্তব্যরত দারোয়ানদের।
সংসদ সদস্য মাহজাবীনের শিক্ষাজীবন শুরু হয় ভিকারুন্নেছা স্কুলে এন্ড কলেজে। শিশু বয়স থেকেই খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছিলো তার সরব পদচারনা। ভলিবল, ব্যাডমিন্টন খেলা, চিত্রাঙ্কন, নতুন কুঁড়ি আসরে অংশগ্রহণ এসব কিছু তাঁকে একজন মানবিক মানুষ হয়ে উঠতে পথ দেখিয়েছে। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইডেন কলেজে থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন মাহজাবীন। আর এই শিক্ষা সম্পন্ন করার পিছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তার পরিবার বিশেষ করে শ্বশুর বাড়ির সকলে।
উচ্চ মাধ্যমিক পড়াকালীন সময়েই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহীমের সাথে বিয়ে হয়। ফলে পারিবারিকভাবেই মাহজাবীন মোরশেদ রাজনীতির সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। শ্বশুর মরহুম আলহাজ্ব সেকান্দর হোসেন মিয়া সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রথম প্রশাসক, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র প্রেসিডেন্ট, চিটাগং ক্লাব লিমিটেডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশস্থ কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের অনারারী কনসাল এবং চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। যদিও মাহজাবীন বিয়ের আগেই বাবা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুক্তিযোদ্ধা সানাউল্লাহ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু সেকান্দর হোসেন মিয়ার সমাজসেবামূলক কর্মকান্ড সম্পর্কে জানতেন।
শিশুকাল থেকেই দেখেছেন বাবা এবং তার এই বন্ধু উভয়েই এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল কলেজ, রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ যে কোন অসহায় দরিদ্র মানুষের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিশোর মনে সেইসব মহতি কাজ যেমন ইতিবাচক দাগ কেটেছে, অন্যদিকে রতœগর্ভা মা উম্মে সালমা চৌধুরির দুইভাই কবি শামসুর রহমান এবং যুদ্ধকালীণ বিএলএফ-এর সক্রিয় সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ওয়াকিলুর রহমান মুরাদের সংস্পর্শেই আত্মস্থ করেছেন স্বদেশ প্রেশ ও দেশ সেবার মন্ত্র বলে জানালেন মাহজাবীন মোরশেদ এমপি।
রাজধানীর গোপীবাগে নানার বাড়িতে ১৯৬৯ সালে জন্ম নেওয়া মাহজাবীন মোরশেদের মা উম্মে সালমা চৌধুরী ২০১০ সালে রত্মগর্ভা উপাধিতে ভূষিত হন। আট ভাই-বোনের মধ্যে ৬ষ্ঠ মাহজাবীন মোরশেদ পরিবারের সকলের স্নেহ-ভালোবাসার পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্নেহাশীষ নিয়েই মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। একই সাথে প্রতিটি সামাজিক কর্মকান্ডে শ^শুর বাড়ির সকলের কাছ থেকেও উৎসাহ আর সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি।
সংসদ সদস্য মাহজাবীন মোরশেদ ব্যক্তিগত জীবনের এসব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অদূর ভবিষ্যতে একটি উন্নত বাংলাদেশ দেখার স্বপ্ন আর মানব সেবার ব্রত নিয়ে সক্রিয় রাজনীতি শুরু করেন ২০০৮ সাল থেকে। এক্ষেত্রে শ্বশুরের রাজনৈতিক আদর্শ এবং জাতীয় পার্টির নেতা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ব্যাবসায়ী নেতা জীবনসঙ্গী মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের পরামর্শ অন্যতম পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে বলে জানান তিনি।
আর সক্রিয় রাজনীতিতে আসার পরপরই নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে সকলের নজরে আসেন মাহজাবীন। জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তার উন্নয়ন কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতায় একইভাবে কাজ করে যাচ্ছেন পুনরায় ১০ম জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে। সংসদ সদস্য হিসেবে মাহজাবীন মোরশেদ নিয়মিত সংসদ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। জরুরি জনগুরুত্বসম্পন্ন মনোযোগ আকর্ষনীয় নোটিশ, প্রশ্নোত্তর পর্ব, সিদ্ধান্ত প্রস্তাব ছাড়াও আইন প্রণয়ন কার্যাবলীতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তিনি।
কথা প্রসঙ্গে নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে করেন বলেও জানান তিনি। কেননা বলা যায় শৈশব, কৈশোর বয়স থেকেই মানুষের সেবায় নিয়োজিত রাখলেও সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে পথ চলা হয়ে ওঠেনি কখনো। আর ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যোগ দেয়ার পরপরই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ আইন পরিষদ জাতীয় সংসদে এলাকাবাসীর সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। অষ্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন নবম সংসদ থেকে। পূর্ণমেয়াদ পূরণের পর দ্বিতীয়বার জাতীয় পার্টি থেকে তিনিই একমাত্র মনোনীত হন। আর বর্তমানে তিনি পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রামের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন। তিনি রাজনৈতিক পূর্বসূরীদের অনুকরণে সংসদ সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় গিয়ে দূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ান। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশে-বিদেশে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
সংসদ সদস্য মাহজাবীন মোরশেদ জাতীয় পার্টি ও জাতীয় মহিলা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের সাথে যুক্ত রয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে। তিনি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগ্রাবাদ মহিলা কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শিশু স্বর্গের দাতা সদস্য, সেকান্দার হোসেন মিয়া স্মৃতি সংসদের উপদেষ্টা, বাকলিয়া থানার সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতি বিরোধী সংগঠন ‘আমরা বাকলিয়াবাসী’- এর উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জননী মাহজাবীন মোরশেদ শত ব্যস্ততার মধ্যে দিয়েও সন্তানদের লালন-পালনের দায়িত্ব নিজেই পালন করেন। একজন সচেতন মা হিসেবে তিনি মনে করেন, সন্তানদের আদর্শ মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার এখনই সময়। আর তাই একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষাও অত্যন্ত জরুরি। মাহজাবীনের বড় ছেলে সমীর সেকান্দার ও ছোট ছেলে তাহের সেকান্দার এবং একমাত্র কন্যা সানজিদা মেহেরীন।
সংসদ সদস্য মাহজাবীন মোরশেদের এলাকার উন্নয়ন, এলাকাবাসীর কল্যাণ আর দেশের সুখ-সমৃদ্ধি নিয়ে প্রতিনিয়তই স্বপ্ন দেখেন। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য তথা আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সর্বোপরি দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি মনে করেন দেশের বিরাজমান শান্তি শৃঙ্খলা, বিরোদী দলের গঠনমূলক সালোচনা, শিল্পবান্ধব পরিবেশ, প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের ফলে কল-কারখানায় পর্যাপ্ত উৎপাদন, অনিয়ম-দূর্নীতি মুক্ত অফিস আদালত হওয়ায় পূর্বের যেকোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিজেদের কাজ নির্বিঘেœ করতে পারছে।
বিরোধী দলের একজন সংসদ সদস্য মাহজাবীন দেশের বিপুল সংখ্যক জনগণকে জনসম্পদে পরিণত করাতে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির প্রশংসা করে বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা যারা দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে চেয়েছিলো। দেশকে পিছিয়ে দিতে চেষ্টা করেছিলো। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচারের মাধ্যমে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করেছেন। দেশের উন্নয়ন সময়িক ব্যাহত হলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে। বিশে^র দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান করছে।
তিনি আরো জানান, এই উন্নয়নে ছোঁয়া থেকে কোন অংশে পিছিয়ে নেই তার নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-৮ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসন। এই আসন থেকে ৮৬ ও ৮৮ সালে মাহজাবীনের শ্বশুর সেকান্দর হোসেন মিয়া সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, এর পাশাপাশি চট্টগ্রাম-৪, ৯ ও ১০ আসনের উন্নয়নে বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, রাস্তাঘাটের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অগ্নিদূর্গত, শীতার্ত, পানিবন্দী, দুর্যোগপূর্ণ পাহাড়ের মানুষদের রক্ষা, পথ শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ, নদী ভাঙ্গন মানুষের উন্নয়ন ও এলাকার সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সাধ্যমত কাজ করছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তার নির্বাচনী এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠির শিক্ষা, চিকিৎসা, ধর্মীয় অবকাঠামোসহ সার্বিক উন্নয়নে কাজ করার আশা ব্যক্ত করেন।
সংসদ সদস্য মাহজাবীন মোরশেদ চট্টগ্রামকে ঘিরে তার বিশেষ কয়েকটি স্বপ্ন বাস্তবায়নের আশা ব্যক্ত করে বলেন, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকীকরণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং পথশিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা, জলাবদ্ধতা নিরসন, নাজিরহাট রেল লাইনের সংস্কার ও উন্নয়ন, জঙ্গীবাদ ও মাদক থেকে যুব সমাজকে রক্ষা, নারীদের আতœনির্ভরশীল হতে উদ্বুদ্ধ করা। এসময় তিনি বলেন, এসব বিষয়ে সংসদে কথা বলার সময়টিই তার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মুহুর্ত।
উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকেও আগামী ২০২১ সালের মধ্যে একটি অনন্য উচ্চতায় দেখতে চান সংসদ সদস্য মাহজাবীন মোরশেদ। অন্ততঃপক্ষে মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরের অনুকরণে এগিয়ে যাবে দেশ। সন্ত্রাস-দুর্নীতি মুক্ত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা মধ্য দিয়ে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সেই লক্ষ্য অর্জনে সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:১৭:৪০ ৩০৪ বার পঠিত