সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়াদের ৫৪ শতাংশই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘অনলাইনে শিশু যৌন হয়রানি প্রতিরোধ : আইনি পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ গবেষণার তথ্য জানানো হয়। ১৩৩ জন নারী ও পুরুষের ওপর এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।
আলোচনা সভায় গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন আসক’র শিশু অধিকার ইউনিটের সমন্বয়কারী অম্বিকা রায়। তিনি বলেন, ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সালের অাগস্ট পর্যন্ত ৬৮ জন শিশু অনলাইনে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অভিযোগ দায়ের করা ৭ শতাংশ ভিকটিম আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ৪৪ শতাংশ ভিকটিম মনে করেন, দোষীদের বিচারের আওতায় আনা গেলে অনলাইনে যৌন হয়রানির সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে।
হয়রানির ভয়ে যৌন হয়রানির পরও অনেকে বিষয়টি প্রকাশ করেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনলাইনে যৌন হয়রানির শিকার ২৩ শতাংশ ভিকটিম আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরও ব্যাপারটা প্রকাশ করেন না হয়রানির ভয়ে। ১৭ শতাংশ ভিকটিম লোকলজ্জার ভয়ে পুরো ব্যাপারটিই প্রকাশ করা কিংবা অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকেন। আর স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভয়ে ৫ শতাংশ ভিকটিম নীরব থাকেন। এ ছাড়া ৩০ শতাংশই জানেন না অনলাইনে যৌন হয়রানির শিকার হলে কোথায় এবং কীভাবে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সাইবার অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম, ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সাইবার সিকউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম) মিশুক চাকমা, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক সাইমুন রেজা পিয়াস, টিডিএইচ নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশ অফিসের রিসার্চ অ্যান্ড নলেজ মেনেজমেন্ট প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট কার্তিক চন্দ্র মন্ডল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সভায় শিশু যৌন হয়রানির বিষয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, তথ্যপ্রযুক্তি আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের পর্যালোচনা করেন সাইমুম রেজা পিয়সা। তিনি বলেন, অনলাইনে শিশুদের অপরাধ বা অপরাধের শিকার শিশুদের বিচার নিয়ে বাংলাদেশে কোনো আইনে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। বিভিন্ন আইনে অফলাইনে শিশুদের যেসব অধিকার সুরক্ষিত আছে এগুলো অনলাইনেও রাখা উচিত।
সাইমুম রেজা বলেন, সাইবার ট্রাইব্যুনালে দেখা যায়, কোনো মামলায় শিশু সংশ্লিষ্টতা থাকলে ট্রাইব্যুনাল স্ব উদ্যোগে এসব মামলা শিশু আদালতে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে সদ্য প্রণীতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা অন্য আইনে উল্লেখ নেই।
সাইবার অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম বলেন, এ কোর্টে সাজার হার ৮ থেকে ৯ শতাংশ। এর কারণে অনলাইনে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর অপরাধী সেগুলো তদন্তের আগে মুছে ফেলে। ফলে পরে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকে তার ইন্টারনেট ভিত্তিক ডিভাইসকে নিজ দায়িত্বে নিরাপদ রাখতে হবে। সব ধরনের ডিভাইসের নিবন্ধনের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে ১৮ বছরের কম কাউকে অ্যান্ড্রয়েড ফোন দেওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। সবাইকে সাইবার বিষয়ে সচেতন করা দরকার।
ডিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার (সাইবার সিকউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম) মিশুক চাকমা বলেন, একজন ভিকটিম সমাজে টিকে থাকার অবস্থা যখন হারিয়ে ফেলেন তখনই তিনি পুলিশের কাছে যান। সাইবার অপরাধ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ঢাকা শহরের ৬৫ শতাংশ সাইবার ক্রাইম আমাদের পক্ষে টাচই করা সম্ভব হয় না, এর প্রধান শিকার হচ্ছেন মেয়েরা।
তিনি আরও বলেন, শহরের চেয়ে গ্রামে সাইবার অপরাধের শিকার বেশি। কারণ, গ্রামে গোসলের যে জায়গা রয়েছে তা অনেকটাই উন্মুক্ত। ফলে কেউ গোপনে একজনের গোসল করার দৃশ্য ভিডিও করে তা ইন্টারনেটে সহজেই ছেড়ে দিতে পারে। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে এসব অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:২৮:২৪ ২৫৫ বার পঠিত