স্কুল সাইট টেস্ট প্রোগ্রাম’ –উন্নত বিশ্বে এই কথাটি বহুল প্রচলিত হলেও বাংলাদেশে এটা একেবারেই নতুন। স্কুলে যাওয়া ছোট ছোট বাচ্চাদের চোখ পরীক্ষা করেই তাদের ভর্তি করে উন্নত দেশের স্কুলগুলোতে। ঢাকার কিছু কিছু নামিদামি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে ‘স্কুল সাইট টেস্ট’ থাকলেও প্রান্তিক পর্যায়ে এটা একেবারেই নেই।
ফরিদপুরে এই ব্যতিক্রম উদ্যোগটি নিয়েছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দেশে এই প্রথম প্রান্তিক পর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে চোখ পরীক্ষা করে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার দিনব্যাপী ফরিদপুরের পশ্চিম খাবাসপুর রিয়াজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে এ চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।
সকালে এই সেবা ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামচুল আলম, প্রফেসর এম এ সামাদ, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু আহাদ মিয়া, ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী প্রমুখ।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শামচুল আলম বলেন, নৈতিক শিক্ষা প্রসারে আমরা জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা স্কুলগুলোর সাথে কাজ করার সময় বাচ্চাদের শারীরিক নানা সমস্যার কথা জানতে পারি। তখন বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি উন্নত বিশ্বের বাচ্চাদের চক্ষু সেবায় এধরনের ব্যবস্থা নেয়। তাই প্রান্তিক শিশুদের সেবাদানের লক্ষ্যে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়ার উদ্যোগে জেলা প্রশাসন এ মহতি কাজটি হাতে নিয়েছে।
এ ব্যাপারে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি ৮-১০ বছর পর্যন্ত এই বাচ্চাদের চোখের কোন সমস্যা আছে কিনা, সেটা ভিশন টেস্ট ছাড়া, অভিভাবকেরা বুঝতে পারেন না। ফলে শিশুদের চোখের সমস্যায় নানা ধরনের উপসর্গ যেমন মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব দেখা দেয়। আর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এই বাচ্চাদের চোখের সমস্যা নিয়ে বড় হতে হয়। উন্নত বিশ্বে সকল শিশুর চোখ পরীক্ষা করে স্কুলে ভর্তি করা হয়। আমাদের দেশে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই প্রথম স্কুল সাইট টেস্ট প্রোগ্রামটি করেছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন।
এসময় জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, আমদের এই শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ওরা যাতে ওদের সুন্দর চোখ দিয়ে সুন্দর পৃথিবী দেখতে পারে সে কারণেই এ উদ্যোগ। আর টেকসই উন্নয়নে শিশু স্বাস্থ্যসেবা ও নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নেই। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে এ উদ্যোগ যাতে অব্যাহত রাখা যায়।
পরে দিনব্যাপী স্কুলের ২৮০ শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক চোখ পরীক্ষা করে তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হয়। এর মধ্যে ২২ জন শিক্ষার্থীর চোখে সমস্যা পান চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল। তাদেরকে ১৭ নভেম্বর বিএনএসবি জহুরুল হক চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে পরবর্তী পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এই বাচ্চাদের অভিভাবকেরাও তাদের এই সমস্যার কথা জানত না।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং বিএনএসবি জহুরুল হক চক্ষু হাসপাতালের সার্বিক সহযোগিতায় স্কুল সাইট টেস্ট প্রোগ্রামে-২০১৭র (পাইলট প্রকল্প) আওতায় এ সেবা প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫৪:৪৬ ৫২৯ বার পঠিত