আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষে সংবাদ সম্মেলন করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। বলেন, ‘সংলাপ শেষে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করবেন। সম্ভবত ৮ তারিখ বা ৯ তারিখ (নভেম্বর)। … কী দাঁড়ালো, এত দলের সাথে ডায়লাগ হচ্ছে, ডায়লগের রেজাল্ট কী, ফলাফলটা কি… সে সম্পর্কে নেত্রী নিজেই প্রেস কনফারেন্সে জানাবেন।’
গত ১ নভেম্বর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংলাপ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। পরদিন তিনি বসেন সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে। এক দিন বিরতির পর রবিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করেন ক্ষমতাসীন জোটের শরিক ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে।
আজ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার দল ও জোটের ৩২ নেতাকে নিয়ে যাচ্ছেন গণভবনে। মঙ্গলবার দুপুরে কওমি মাদ্রসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল ইসলামী ঐক্যজোট এবং সন্ধ্যায় সিপিবির নেতৃত্বে আটদলীয় বাম জোটকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আবার প্রথম দফা সংলাপ শেষে বুধবার সকালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আবারও আলোচনার জন্য সময় পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। আর পরদিন ঘোষণা করা হবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল।
আলোচনায় অংশ নেওয়া দলগুলোর দাবি কতটুকু মেনে নেওয়া হবে এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘দাবি তো আমরা দুই-তিনটি মেনে নিয়েছি। আমরা কোন কোন বিষয়ে ঐক্যমত হতে পারি তা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে পরিস্কার করা হয়েছে। আমরাও বলেছি এই এই বিষয়ে দাবি মানতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিছু কিছু বিষয় আছে তা নির্বাচন কমিশনের বিষয়। যেমন বিদেশি পর্যবেক্ষক। এ বিষয়ে ইলেকশন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে সরকার কোনবাধা দেবে না।’
গত ১ নভেম্বরের সংলাপ শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আগামী বুধবার আবার সংলাপে বসতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। আর সংবিধানের ভেতরে থেকেই কীভাবে সংসদ ভেঙে ভোট করা যায়, সেই যুক্তি তুলে ধরার কথা জানিয়েছেন নেতারা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সংবিধানের ভেতরে আর কোন পরিবর্তনের পক্ষে যক্তিসংগত কোন প্রস্তাব করেন তা গ্রহণ করার মতো হলে তা আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান করা হবে।’
বিষয়টি নিয়ে আইনজ্ঞ শাহদীন মালিকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। আর শাহদীন দাবি করেছেন, সংবিধানেই সংসদ ভেঙে নির্বাচনের সুযোগ আছে।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘দেখুন দুনিয়ার সব দেশে যেভাবে হয় বাংলাদেশে তার ব্যতিক্রম হবে না। এক্যফন্ট যেটা বলেছে, সংসদ নিষ্ক্রিয় করে দিতে হবে। সেটা হবে। সংসদ সদস্যদের কোন কার্যকারিতা থাকবে না।’
‘সংবিধান বহির্ভূত কোন দাবি তারা করবে না বলে আমি মনে করি। সংবিধানের বাইরে কোন দাবি মেনে নেওয়ার সুযোগ এই মহূর্তে নেই’- যোগ করে কাদের।
সংলাপ ভাবনার অতীত ছিল কাদেরের
এক প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে আলোচনায় বসবেন, সেই সিদ্ধান্তের কথা শুনে তিনি হতবাক হয়েছেন। ‘বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্যফ্রন্ট ছাড়াও অন্যান্য দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সংলাপের পক্ষে ছিল না। কিন্তু আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূরদর্শিতার মাধ্যমে সংলাপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিষয়টি দলমত নির্বিশেষে দেশের অধিকাংশ মানুষ পছন্দ করেছেন।’
‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আগে আমরা ভাবতেও পারিনি আলোচনা হবে। আমরা তার মুখে শুনে অবাক হয়েছি। আমাদের লিডারের সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের আস্থা শতভাগ। আমরা একযোগে এখন ডাইলোগের পক্ষে কথা বলছি। নেত্রী যা বলবেন আমরা সেটাকেই গুরুত্ব দেব।’
‘শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা পাবলকি পারসেপশনকে ইগনোর করতে পারি না। আমারা জনগণের মনে যাতে সংশয় তৈরি না হয় সেকারণে আমি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে সরকার প্রধান হিসেবে ডায়লগের উদ্যোগ নিয়েছি। ড. কামাল হোসেনর প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিয়েছি। এমনকি অন্যদেরও আবেদনকে গুরুত্ব দিয়েছি।’
সরকার সম্পূর্ণরুপে উৎফুল্ল জানিয়ে কাদের বলেন, ঐক্যফন্টের লোকেরাই একেকজন একেক কথা বলছেন। ঐক্যফন্টের প্রধান বলেছেন, ভাল আলোচনা হয়েছে। আবার তাদেরই অনেকে বলে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৫:৩৪ ১৭০ বার পঠিত