রফতানি বাণিজ্যে গতিশীলতা সৃষ্টি, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিযোগিতামূলক করা এবং প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে মন্ত্রিসভা আজ রফতানি নীতি-২০১৮-২১-এর খসড়া অনুমোদন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
মন্ত্রি পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, বর্তমান রফতানি নীতি ২০১৫-১৮ হালনাগাদ করে নতুন রফতানি নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন রফতানি নীতিতে আগের নীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সংজ্ঞা বিষয়ক একটি পৃথক ও নতুন অধ্যায় সংযুক্ত করা হয়েছে এবং নমুনা, সুগন্ধী চাল ও পরোক্ষ রফতানির মত বিষয়গুলো সম্পর্কে নতুন সংজ্ঞা যুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, পাশাপাশি, ডেনিম, একটিভ ফার্মাসিটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস (এপিআই) এবং রি-এজেন্ট (চামড়া, অ-চামড়া এবং সিনথেটিক থেকে তৈরি জুতা)-এর মত তিনটি নতুন খাত যোগ করা হয়েছে। যার ফলে বর্তমানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত খাতের সংখ্যা ১৫টিতে দাঁড়িয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, হালকা প্রকৌশল পণ্য (মটর সাইকেল, ব্যাটারি), ফটোভলটাইক মোডিউল (সোলার এনার্জি), কাজু বাদাম (কাঁচা ও প্রক্রিয়াজাত) জ্যান্ত ও প্রক্রিয়াজাত কাঁকড়া এবং খেলনার মত পাচঁটি নতুন পণ্য বিশেষ উন্নয়ন ভিত্তিক খাত হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি, ওয়েট ব্লু চামড়ার উপজাত পণ্য ওয়েট ব্লু স্পিøট লেদারকে রফতানিযোগ্য পণ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন এই রফতানি নীতিতে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রণোদনা হিসেবে বিদ্যমান ৪০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ১৯৯৬ সালের বিদ্যমান আইনটিকে হালনাগাদ করে ‘বাংলাদেশ সুগারক্রপ রিসার্চ ইন্সটিটিউট অ্যাক্ট, ২০১৮’-এর খসড়াকে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
আলম বলেন, আগে সাধারণত আখ থেকেই চিনি উৎপাদিত হতো। বর্তমানে অন্যান্য বিভিন্ন চিনিশস্য থেকেও চিনি তৈরি হয়। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী আঁখ, সুগার বীট, খেজুর, স্টেভিয়া, পাম ও অন্যান্য মিষ্টিশস্য চিনিশস্য হিসেবে পরিচিত হবে।
খসড়া আইনে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বোর্ডের প্রধানকে মহাপরিচালক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বছরে তিনবার বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে।
মন্ত্রিসভা ১৯৬১ সালের আইন হালনাগাদ করে ‘বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অ্যাক্ট-২০১৮’ খসড়াটিরও নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিদ্যমান আইনে কর্পোরেশনের অনুমোদিত মূলধন ছিল মাত্র ৬ কোটি টাকা। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে তা ১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রায় ১০০ কোটি টাকার শেয়ার রাখা হয়েছে, যেখানে প্রতিটি শেয়ারের মূল্যমান ১০ টাকা করে। এ ছাড়াও, বৈঠক শুরুর আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের কার্যক্রম নিয়ে তৈরি বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করা হয়।
প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য সকল ক্ষেত্রেই সাফল্য অর্জন করেছে। এ ছাড়া এ সময় অর্থনীতির সূচকে অগ্রগামী ও প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক ধারাও অব্যাহত ছিল।
তিনি বলেন, ২০১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ জিডিপি অর্জন করেছে।এবছর মাথাপিছু আয় হয় ১,৭৫১ মার্কিন ডলার, যা ২০১৭ অর্থবছরে ১,৬০২ মার্কিন ডলার।
গত আর্থিক বছরে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিসহ রফতানি খাতে মোট ৪১ দশমিক ০১ বিলিয়ন আয় হয়। পাশাপাশি মোট ১৪.৯৮ বিলিয়ন রেমিট্যান্স আসে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০১৮ সালে দারিদ্র্যের হার ২১.৮ শতাংশ ও অতি দারিদ্র্যের হার ১১.৩ শতাংশে নেমে আসে, যা ২০১৭ সালে ছিল যথাক্রমে ২৩.১ ও ১২.১ শতাংশ।
এক প্রশ্নের উত্তরে আলম বলেন, যে কোন নির্বাচনকালীন সরকারের সময় মন্ত্রিপরিষদের সভা অব্যাহত থাকবে, এতে কোন রকম বিধি-নিষেধ নেই।
বৈঠকে কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সাফ ইউ-১৫ চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনাল খেলায় পাকিস্তানকে পেনাল্টিতে ৩-২ গোলে পরাজিত করায় বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানানো হয়। এছাড়া বৈঠকে ‘প্রধানমন্ত্রীর ১০ উদ্যোগ’-এর প্রকাশিত বইয়ের কপি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়।
বৈঠকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০:১৬:০৯ ২০৮ বার পঠিত