সকল শ্রেণির মানুষের সমন্বিত তৎপরতায় এবং সরকারের দক্ষতায় দেশের অর্থনীতি
অসাধারণ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। গত দশ বছর গড়ে ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ হারে
জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এখন প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
স্বাধীনতার পর অর্থনীতির আকার ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে ৩৮ বছর লেগেছে।
আর মাত্র সাত বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে ২০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এখন তা ২৭৪
বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। সরকারি বিনিয়োগ জিডিপি’র ৫ দশমিক ৬
শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ ২০০৫-০৬
এর ৯৯ হাজার ২৭১ কোটি টাকা হতে প্রায় চার গুণ বেড়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪ লাখ
৫০ হাজার ৭৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের
পরিমাণ ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে ছিল ৭৪৪ মিলিয়ন ডলার যা তিন গুণ বেড়ে ২ বিলিয়ন
ডলার ছাড়িয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি, ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে
মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তিন গুণ
বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলারে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ কুমিল্লার লালমাইয়ে আসন্ন
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ এর লক্ষ্যে গঠিত নির্বাচনি আসন কুমিল্লা-১০ এর
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের
সমাবেশে বর্তমান সরকারের গত দশ বছরের অর্থনৈতিক এলাকার উন্নয়নের
তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব তথ্য তুলে ধরেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন, চার দলীয় জোট সরকারের শেষ বছরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭
দশমিক ১৭ শতাংশ এবং ১/১১-এর সরকারের সময় ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে ১২ দশমিক ৩
শতাংশ। গত তিন বছর সাত শতাংশের ওপর জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও
মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক শূন্য শতাংশের নিচে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব হয়েছে। দারিদ্র্যের হার
২০০৫ সালের ৪০ দশমিক শূন্য শতাংশ থেকে ২২ দশমিক শূন্য শতাংশে এবং আর অতি-
দারিদ্র্যের হার ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। ১৯৯২
সালের পর হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট যত লোক দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে তার
প্রায় ৫০ শতাংশই ঘটেছে বর্তমান সরকারের সময়কালে। ২০০১-০৬ সময়কালের তুলনায়
২০০৯-১৭ সময়কালে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বাজেট বরাদ্দ এবং
সুবিধাভোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৬৬ দশমিক
৫ বছর থেকে বেড়ে হয়েছে ৭২ দশমিক শূন্য বছর। একই সময়ে শিশু মৃত্যুহার প্রতি
হাজার জীবিত জন্মে ২০০৬ সালে ছিল ৪৫ জন, যা এখন ২৮ জনে নেমে এসেছে।
২০০৫-০৬ অর্থ বছরের বাজেটের আকার ছিল ৬৪ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। চলতি
২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সাত গুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬৫ হাজার
কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থ বছরের তুলনায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এডিপি বরাদ্দ এবং
ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় চার গুণ। বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের সংখ্যাও এই সময়ে প্রায়
৪২ শতাশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গড়ে এ সময় প্রতিবছর প্রায় ৯৩ শতাংশ এডিপি ব্যয়িত
হয়েছে। রাজস্ব-জিডিপি’র অনুপাত ৯ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ১০ দশমিক ৮ শতাংশে
দাঁড়িয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থ বছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থ বছর পর্যন্ত নয় বছরে রাজস্ব
আয়ের পরিমাণ তিন গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে রপ্তানি আয়ের
পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। দশ বছরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ চার গুণ
বৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সেবা খাতসহ মোট রপ্তানী আয় ৪০ বিলিয়ন
ডলার ছাড়িয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ তিন গুণ বেড়ে
দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার যা ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে ছিল ৪ দশমিক ৮০
বিলিয়ন ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ দশমিক ৪৮
বিলিয়ন ডলার যা এখন দশ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৫ বিলিয়ন
ডলারে, যা প্রায় সাত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ। বিদ্যুৎ উৎপাদন
সক্ষমতা বেড়েছে চার গুণ।
উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন
ধরে রাখতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা রাখতে হবে। কেননা অতীত ইতিহাস এবং
বর্তমানের তুলনামূলক চিত্রই বলে দেয় বাংলাদেশকে উন্নত দেশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই, আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নেই। তাই সকল ষড়যন্ত্র
নস্যাৎ করে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৫০:১৮ ১৯৮ বার পঠিত