ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ভালো করলেও পাঁচ দিনের ম্যাচে উল্টা পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। হতাশাজনক পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বারবার। টেস্ট পারফরম্যান্সের গ্রাফ ক্রমেই নি¤œমুখী। বিশেষ করে চলতি বছরে। এই বছর টেস্ট ক্রিকেটে একেবারেই ভালো করতে পারছে না বাংলাদেশ। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে সর্বশেষ চার ম্যাচে আট ইনিংসে বাংলাদেশের রান ২০০ এর নিচে। সর্বশেষ আট ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ১৬৯, সর্বনি¤œ ৪৩। এই চার ম্যাচেই বাংলাদেশ হেরেছে বড় ব্যবধানে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২১৫ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে দুই ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১১০ ও ১২৩। গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে লজ্জার রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। ওই সফরে সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ও ২১৯ রানে।
এই ম্যাচের দুই ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪৩ ও ১৪৪। এই ৪৩ রান টেস্টে বাংলাদেশের সর্বনি¤œ রানের ইনিংস। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ১৬৬ রানে। দুই ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর ছিল যথাক্রমে ১৪৯ ও ১৬৮।
সর্বশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লজ্জাজনকভাবে হেরেছে বাংলাদেশ। গত ৩-৬ নভেম্বর সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত টেস্ট ম্যাচে জিম্বাবুয়ের কাছে বাংলাদেশ হারে ১৫১ রানে। ম্যাচটিতে দুই ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর যথাক্রমে ১৪৩ ও ১৬৯।
টেস্ট ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ের কাছে এমন হার মোটেও মেনে নেয়ার মতো নয়। আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কার মতো দলকে হারানোর পর জিম্বাবুয়ের কাছে এমন হার লজ্জাজনক। আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে ৬৭ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে এখন নবম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দুই পয়েন্ট নিয়ে দশম অবস্থানে রয়েছে জিম্বাবুয়ে। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের উপরে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৭৬ পয়েন্ট নিয়ে অষ্টম অবস্থানে আছে ক্যারিবীয়রা।
১৭ বছর পর বিদেশের মাটিতে টেস্টে জয় পেয়েছে জিম্বাবুয়ে। টেস্টে বাংলাদেশের মাটিতে তাদের আগের জয়টি এসেছিল এই বাংলাদেশের বিপক্ষেই। ২০০১ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে তারা টেস্টে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল। তখন জিম্বাবুয়ে দল অনেক শক্তিশালী ছিল। অপরদিকে বাংলাদেশ দল ছিল একেবারেই সাদামাটা। টাইগাররা এখন যেমন হরহামেশাই জয় পায় তখনকার পরিস্থিতি এমন ছিল না। তখন একটি জয় পেতে বাংলাদেশকে অনেক অপেক্ষা করতে হতো।
সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের এখন পর্যন্ত ১৫টি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে টাইগাররা পাঁচটিতে জয় পেয়েছে, তিনটিতে ড্র করেছে ও সাতটিতে হেরেছে। টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এর আগে বাংলাদেশ সর্বশেষ সিরিজ খেলেছিল ২০১৪ সালে। সেবার তিন ম্যাচের সিরিজে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল টাইগাররা। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ওই সিরিজে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে তিন ম্যাচেই জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ।
টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ যে কয়টি সিরিজ খেলেছে তার মধ্যে দুইটিতে জয় পেয়েছে। ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত দুই ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে ও ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জয় করেছিল টাইগাররা। দুইটি সিরিজই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। এবার অবশ্য জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের কোনো সম্ভাবনাই নেই। কারণ দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে। সুতরাং, সিরিজ হার এড়াতে হলে দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের কোনো বিকল্প নেই।
ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন ধারাবাহিত সাফল্য পাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে রানার্স আপ হয় বাংলাদেশ। এরপর দেশে ফিরে জিম্বাবুয়েকে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে টাইগাররা। কিন্ত ওয়ানডেতে টানা এমন সাফল্যের পর টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ।
বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য দুই ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল এখন ইনজুরিতে। জিম্বাবুয়ে সিরিজে তারা দুজন নেই। ওয়ানডে সিরিজে তাদের অনুপস্থিতি টের পাওয়া না গেলেও টেস্টে ঠিকই পাওয়া গেল।
গত ৩ নভেম্বর সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হয় বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ। ম্যাচটিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২৮২ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। পরে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ইনিংসের ব্যাট করতে নেমে ১৪৩ রানে অলআউট হয়। দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ে অলআউট হয় ১৮১ রান করে। ফলে জিততে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২১ রান। কিন্তু ১৬৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। সিলেটে খারাপ করলেও এখন দেখা যাক ঢাকা টেস্টে টাইগাররা ভালো করতে পারে কিনা? আগামী ১১ নভেম্বর মিরপুরে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় তথা শেষ ম্যাচ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৬:০৫ ২৩১ বার পঠিত