মানিকগঞ্জে প্রায় ১১ বছর ধরে নিখোঁজ একমাত্র সন্তানের ফেরার অপেক্ষায় আছেন এক দুঃখিনী মা। ছেলে কী অবস্থায় আছে তা জানা না থাকলেও হাজেরা বেগম (৬০) নামে ওই মায়ের আশা একদিন সে তার বুকে ফিরবে। এই আশা দিয়েই বড় করছেন একমাত্র নাতনি আমিনা আক্তারকেও। জন্মের পর যার সৌভাগ্য হয়নি বাবার মুখ দেখার। পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় চরম কষ্টে কাটছে দাদি-নাতিনের সংসার।
জেলার ঘিওর উপজেলার কুস্তা গ্রামে ধলেশ্বরী নদী তীরে বসবাস করেন হাজেরা বেগম। নিজের বসত ভিটা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর অন্যের জমিতে ছোট একটি ঘর তুলে আশ্রয় নিয়েছেন। এক যুগ আগে মারা গেছেন হাজেরা বেগমের স্বামী। একমাত্র ছেলে আমিন মিয়া নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় ১১ বছর ধরে। নাতনি আমিনা আক্তারকে (১০) নিয়েই বসবাস করেন তিনি।
হাজেরা বেগম জানান, আমিন মিয়া ঢাকার একটি জুতার কারখানায় কাজ করতেন। কিন্তু একদিন বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়েই হঠাৎ নিখোঁজ হন আমিন। তার স্ত্রীর গর্ভে তখন অনাগত সন্তান আমিনা। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান না পেয়ে আর থানা পুলিশও করেননি হাজেরা বেগম।
নিখোঁজের ৬ বছর পর আমিনের স্ত্রীকে দ্বিতীয় বিয়ে দেন তার স্বজনরা। সেই থেকে নাতনি আমিনা হাজেরা বেগমের কাছেই বড় হচ্ছে। হাজেরা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। অনেক কষ্টে নাতনিকে স্থানীয় একটি প্রাইমারি স্কুলে পড়াচ্ছেন। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী সে।
ছেলের বিয়ের সময়কার কয়েকটি ছবিই এখন স্মৃতি হাজেরা বেগমের। সময় পেলেই বের করে তা দেখেন। বাবা-মায়ের ছবি দেখে নাতিন কাঁদে বলে ছবি লুকিয়ে রাখেন তিনি।
Manik-2
ছেলের স্মৃতি আর সংসারের পরিস্থিতি বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাজেরা বেগম। পাশে বসে কাদঁছিল শিশু আমিনাও।
হাজেরা বেগম বলেন, বয়স হয়েছে। প্রায়ই অসুস্থ থাকি। এজন্য ঠিকমতো কাজ করতে পারি না। কাজ না করতে পারলে দাদি-নাতনিকে মাঝে মধ্যে না খেয়েই থাকতে হয়। মানুষের কাছে খাতা-কলম চেয়ে নাতনিকে পড়াচ্ছি। ঈদের সময় দেয়া যাকাতের কাপড়েই সারাবছর চালিয়ে নিই। নাতনিকেও ভালো পোশাক কিনে দিতে পারি না।
চোঁখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ছেলেটা কাছে থাকলেও অন্তত আমাদের দেখত। এখন আমাকে মা বলার কেউ নেই। মরলে মাটি দেয়ারও মানুষ থাকবে না। ভবিষ্যতে নাতনিটার কী হবে এই ভাবনাতেই ঘুম আসে না।
আমিনা আক্তার জানায়, জন্মের পর বাবাকে দেখেনি সে। দাদির কাছে ছবি দেখেই বাবাকে চিনেছে। যখন অন্য শিশুদের বাবার আদর পেতে দেখে তখন তার খুব কষ্ট হয়।
আমিনা লেখাপড়া শিখে বড় হয়ে দাদির দুঃখ ঘুচাতে চায়। কিন্তু সে জানে না তার এই স্বপ্ন পূরণ হবে কিভাবে?
স্থানীয় বাসিন্দা শিল্পী বেগম জানান, হাজেরা বেগম নাতনিকে নিয়ে খুবই কষ্ট করে সংসার চালান। তার স্বামী নেই, সন্তান নেই। বাড়ি ঘরও নেই। অথচ তাকে বিধবা কিংবা বয়স্ক ভাতা দেয়া হয় না। মেয়েটির ইচ্ছা লেখাপড়া করার। কিন্তু যেখানে খাবারই জোটে না সেখানে লেখাপড়া চলবে কিভাবে।
ঘিওর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল আগামীতে হাজেরা বেগমকে বিধবা অথবা বয়স্কভাতার তালিকায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:০৫:৪৩ ২৯৭ বার পঠিত