জেলার ছোট বড় খাল- বিল, বাড়ির পাশের ডোবায় এখন ফুটেছে দৃষ্টিনন্দন কচুরিপানা ফুল। সৌন্দর্য বর্ধক, দৃষ্টিনন্দন, উপকারী কচুরিপানা নদী-নালা-খাল বিল, পুকুর, ডোবায় ও জলাশয়ে ফুটে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে। কচুরিপানা জৈব সার তৈরিতে সাহায্য করে। কচুরিপানা ও এর ফুল জনপ্রিয় না হলেও বিভিন্ন সময়ে মাছ, গবাদিপশুর খাদ্য ও জৈব সার হিসেবে এর ব্যবহার হয়ে থাকে।
আমাদের দেশের কৃষকেরা আলু, পটোলসহ বিভিন্ন সবজি চাষে কচুরিপানার সার ব্যবহার করে থাকেন। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা জলাশয় থেকে কচুরিপানার ফুল উঠিয়ে খেলা করে। মেয়েরা খোপায় বাঁধে। কচুরিপানার সাতটি প্রজাতি আছে। এর পুরু চকচকে এবং ডিম্বাকৃতির পাতা পানির উপরি ভাগে প্রায় ১ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর কা- দীর্ঘ, বহু বিভক্তি মূল বের হয়। যার রঙ বেগুনি, সাদা, গোলাপি ও হলুদ। একটি পুষ্প থেকে ৯ থেকে ১৫টি আকর্ষণীয় পাপড়ির ফুলের থোকা বের হয়। কচুরিপানা খুব দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে। এটি প্রচুর পরিমাণে বীজ তৈরি করে। ৩০ বছর পরও অঙ্কুরোদগম ঘটাতে পারে। কৃষি বর্জ্য থেকে জৈব সার তৈরি করতে সময় লাগে ৭০ দিন; কিন্তু কচুরিপানা থেকে সময় লাগে ৫৫ দিন। কচুরিপানাতে বড় বড় কুঠুরি থাকে যা পানিতে পরিপূর্ণ সামান্য আগাতে সহজে ভেঙে যায়।
মেহেরপুরের বয়োবৃদ্ধ বিল্লাল হোসেন জানান- আগেকার দিনে বাড়ির ছাদ নির্মাণের পর ছাদের চারদিক কাদা দিয়ে বাঁধ দেয়া হতো। সেই বাঁধে পানি দেয়ার পর কচুরিপানা বিছিয়ে রাখা হতো। এতে পানি রোদে বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে পারতো না। তাছাড়া কচুরিপানা পচিয়ে জৈবসার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করা হতো।
মেহেরপুরের প্রবীন সাংবাদিক তোজাম্মেল আযম জানান- অর্কিড সাদৃশ্য ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে স্কনক নামে এক ব্রাজিলিয়ন পর্যটক ১৮ শ’ শতাব্দীতে বাংলায় নিয়ে আসেন কচুরিপানা। এরপর থেকেই বাংলার প্রায় প্রতিটি জলাশয়ে ভরে যায় কচুরিপানাতে। পরবর্তী সময় কচুরিপানার কারণে নৌকা চলাচল, পাট, ধান চাষে অযোগ্য হয়ে পড়ে খাল বিল। এজন্য ১৯৩৬ সালে কচুরিপানা আইন জারি করা হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও ব্যক্তি উদ্যোগে কচুরিপানা পরিষ্কার করা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। দেশের হাওড়, বিল ও জলাশয় থেকে কৃষকেরা কচুরিপানা উঠিয়ে জমিতে ফলানো আলু, পটলসহ বিভিন্ন সবজি চাষে ব্যবহার করছেন। এখনও বাংলার খাল বিলে এ কচুরিপানার দৃষ্টিনন্দন ফুল ফুটে প্রকৃতিকে আকর্ষণীয় করে তোলে। মেহেরপুরের কুষ্টিয়া সড়কের দু‘পাশের জলাশয়ে কচুরিপানার ফুল মুগ্ধ করে পথচারীদের।
কচুরিপানা থেকে এখন তৈরি হচ্ছে জৈব সার। ফলে কৃষক ফসল উৎপাদনে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। এছাড়া মাটির শক্তি যোগাতে ভূমিকা রাখছে কচুরিপানা। কৃষকদের কচুরিপানা থেকে জৈবসার উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দিলে জৈবসার ব্যবহার যেমন কৃষক উপকৃত হবে অপরদিকে বিদেশের রাসায়নিক সার নির্ভরশলতা কমবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩৬:৫৩ ২৬৩ বার পঠিত