ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া ছয়বারের সংসদ সদস্য। একাধিকবার জিতেছেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের হয়ে। এবারও তিনি ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনও জোরেশোরে নেমেছেন নৌকার মাঝি হতে আর তার পাশে আছে দলের একটি বড় অংশ।
এই আসনের সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৮৬ সাল থেকে জাতীয় পার্টি থেকে চারবার এবং ২০০৮ থেকে নৌকা নিয়ে জিতেছেন দুইবার। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন। পরে হন আইন ও বিচার প্রতিমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন। ২০০১ সালে দল পাল্টে আসেন আওয়ামী লীগে। তবে হেরে যান লাঙ্গলের প্রার্থী রওশন এরশাদের কাছে। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে রওশনকে প্রায় চার হাজার ভোটের হারিয়ে নেন প্রতিশোধ।
প্রবীণ এই নেতা বলেন, ‘আমার শক্তি ফুলছড়ি-সাঘাটার সাধারণ মানুষের ভালোবাসা। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করার ফলেই মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে পেরেছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, বিভিন্ন ভবন নির্মাণ করেছি। ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বালাশী-ফুলছড়ি গণকবর পর্যন্ত কয়েকটি স্থানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে কাজ চলছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা মনোনয়ন দিলে আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরে তুলে দিতে পারব।
তবে ফজলে রাব্বীর মনোনয়ন নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না রিপনের কারণে। দুটি উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশই তার পক্ষে।
এক-এগারোর সংকটকালে শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন রিপন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও তিনি এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে হাজির হন। এ জন্য তার গ্রহণযোগ্যতা গড়ে উঠেছে।
সাঘাটা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়ারেছ আলী প্রধান বলেন, ‘মাহমুদ হাসান রিপন এলাকাতে এসে রাজনীতিতে অংশ নেয়ায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।’
রিপন বলেন, ‘ত্যাগী এবং জনকল্যাণে নিবেদিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণে সফল হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরুণ নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিয়ে আগামী দিনে তাদের সামনের কাতারে নিয়ে আসার কথা সবসময় বলে থাকেন। নিশ্চয় তিনি আমাকে মূল্যায়ন করবেন।’
আওয়ামী লীগের শরিক জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা চিকিৎসক একরাম হোসেনও এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। যদিও তিনি ভোটে শেষ পর্যন্ত থাকবেন কি না-এটা দলের সিদ্ধান্ত।
সুযোগ দেখছে জাপা
আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও নবীন নেতার মধ্যে এই প্রতিযোগিতায় আবার সুযোগ খুঁজছে জাতীয় পার্টি। আসনটিতে এমনিতেই তাদের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। ২০০৮ সালে সারাদেশে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হলেও এই আসনটিতে লড়াই হয়েছে উন্মুক্ত।
দলীয় চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এরই মধ্যে আসনটিতে সাঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জুর নাম ঘোষণা করেছেন। নেতাকর্মীরা তার মাধ্যমেই আসনটি পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখছেন।
রঞ্জু কলেজ জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি গাইবান্ধা কলেজ শাখার সম্পাদক এবং পরে জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।
গোলাম শহীদ রঞ্জু বলেন, ‘জাতীয় পার্টির শাসনামলেই ফুলছড়ি-সাঘাটার প্রচুর উন্নয়ন কাজ হয়েছে। তাই সাধারণ মানুষ জাতীয় পার্টির প্রার্থীকেই সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চায়। এজন্য তিনি দলীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশে ব্যাপক জনসংযোগের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
বিএনপির অবস্থান দুর্বল
জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে আসনটি থেকে নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা রোস্তম আলী মোল্লা। ওই একবারই জয় পায় ধানের শীষ। এরপর কোনো নির্বাচনেই দলটির প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেনি।
তবে এবার ভোট নিয়ে তোড়জোর শুরু হয়েছে বিএনপিতে। সাঘাটা উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা রাহিদুল ইসলাম রাহী ইতিমধ্যে জনসংযোগ শুরু করেছে।
এছাড়াও আছেন সাঘাটা উপজেলা সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সাবেক ছাত্রদল নেতা ময়নুল হোসেন শামীম, নাজেমুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের কেন্দ্রী নেতা এ বি এম সাইদুর রহমান রয়েল।
রয়েল বলেন, ‘হাইস্কুল থেকেই রাজনীতির সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। সভা সমাবেশ ছাড়াও নিজ উদ্যোগে জনকল্যাণমূলক কাজে সময় দিচ্ছি। এবার প্রথম বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইব। মার্কা পেলে ভালো করব।’
গাইবান্ধা জেলায় জামায়াতের ভালো শক্তি থাকলেও এই আসনটিতে তাদের তেমন কোনো তৎপরতা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৫৪:০০ ১৭৩ বার পঠিত