১৯শে মমতার ‘টার্নিং পয়েন্টে’র সামনে রয়েছে একাধিক ‘বাম্পার’

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » ১৯শে মমতার ‘টার্নিং পয়েন্টে’র সামনে রয়েছে একাধিক ‘বাম্পার’
শনিবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৮



---১৯ জানুয়ারির ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডই হবে ভারতীয় রাজনীতির ‘‘Turning Point’’ – বক্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের সাধারণ পরিষদের বর্ধিত সভায় নেত্রীর বর্ধিত বক্তব্যে রয়েছে, ইতিমধ্যেই দেশের সিংহভাগ নেতৃত্ব এই সভায় যোগদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷

কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘শেষের শুরু’ হবে ১৯শের ব্রিগেডের স্টেজ থেকে৷ মমতার গলায় আত্মবিশ্বাসের যে সুর শোনা গিয়েছে, তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কানে পৌঁছেচে৷ মোদী-বিরোধী জোটের শুভ সূচনা করে কলকাতায় পরিবর্তনের ইতিহাস রচনা করতে চাওয়া মমতার স্বপ্ন বুমেরাংয়ের মতো তাঁকেই আক্রমণ শানাবে, মতামত গেরুয়া শিবিরের৷

তবে একথা ঠিক, দেশে মোদী বিরোধী ফেডারেল ফ্রন্টের আহ্বান মমতার মুখ থেকেই শোনা গিয়েছিল৷ ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে মমতার প্রস্তাবিত ‘ফেডারেল ফ্রন্টে’র ডাকে সারা দিয়েছিলেন সারা দেশের বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা৷ কিন্তু দেশের বিরোধীদল কংগ্রেসের সঙ্গে ফেডারেল ফ্রন্টের রাজনৈতিক সমীকরণ কী হবে তা পরিষ্কার হয়নি মমতার শুক্রবারের সভায়৷

রাজনৈতিক সূত্রে যা খবর, সোনিয়া গান্ধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ প্যাটেলের সঙ্গে কথা হয়েছে মমতার৷ কিন্তু ১৯শের ‘মেগা-ব্রিগেডে’র মঞ্চে সোনিয়া গান্ধী সপুত্র পদার্পণ করবেন, এমন কোনও নিশ্চয়তা মমতাকে দিতে পারেননি প্যাটেল৷ কিছুটা সেই কারণেই, শুক্রবারে নেতাজি ইন্ডোরের সভায় কার্যত কংগ্রেসকে গুরুত্বই দেননি মমতা৷ কংগ্রেস নিয়ে শব্দ খবর করেননি৷ হয়তো আগামী ২২ নভেম্বর দিল্লির অন্ধ্রভবনে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার পরই ফেডারেল ফ্রন্টে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে কোনও মতামত দেবেন মমতা৷

মমতার ফেডারেল ফ্রন্টের আসন চেহারা কী তা স্পষ্ট না হলেও যে নেতাদের সঙ্গে মমতা কথা বলেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল – মোদী বিরোধী লড়াইয়ে যাঁকে মমতা বিশেষ পছন্দ করেন৷ ১৯শের মঞ্চে কেজরিওয়ালকে না দেখলেই বরং অবাক হবেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷

সমাজপাদী পার্টির মাথা মুলায়ম সিং যাদব এবং তার ছেলে অখিলেশের সঙ্গে মমতার সুসম্পর্ক রয়েছে বহুদিনের৷ মাসখানেক আগেই উত্তরপ্রদেশের সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ হরিশ চ্যাটার্জী স্ট্রিটে মমতার বাসভবনে তার সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন৷ বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী কী মমতার পাশে দাড়াবেন তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে৷

কিছুদিন আগে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কালভাকুন্তলা চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর) মমতার সঙ্গে নবান্নে দেখা করে বিজেপি বিরোধী জোটের বার্তা দিয়েও পিছিয়ে এসেছিলেন৷ কেসিআর এখন এনডিএ-তে সামিল হওয়ার মুখে৷ ঠিক এই সময় জাতীয় রাজনীতির আঙিনায় নতুন করে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে উঠে এসেছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নারা চন্দ্রবাবু নাইডু৷ জাতীয় রাজনীতিতে মোদী-বিরোধী মুখ হিসেবে পরিচিত চন্দ্রবাবু ইতিমধ্যেই রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দিল্লিতে হাত মিলিয়ে এসেছেন৷ বলেছেন, কলকাতায় গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করবেন৷ কথামতো নবান্নে এসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে দেখাও করেন তিনি৷

স্বাভাবিক ভাবেই লোকসভা ভোটমুথী দেশে জোট-অঙ্কের সমাধান করতে এই সাক্ষাৎ কিছুটা হলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সাহায্য করবে৷ ইতিমধ্যেই বিজেপি বিরোধী জোটে কংগ্রেসকে পাশে পেতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে চন্দ্রবাবু৷ রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা, তিনি বিজেপি বিরোধী জোটে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হতে চান৷ অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কেও রাজধানীতে এই আলোচনা এক সময় তুঙ্গে উঠেছিল৷ মমতা অবশ্য বলেছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব চান না৷ বাংলা বিপ্লবের জন্ম দিয়েছে৷ দেশের এই সন্ধিক্ষণে তিনি Kingmaker হতে চান৷

তবে, ২০১৯ লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণার আগেই সারা দেশের নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে দেখা করে বেড়াচ্ছেন চন্দ্রবাবু৷ তবে বহুজন সমাজ পার্টি নেত্রী মায়াবতি তাঁকে কোনও প্রতিশ্রুতি না দিতে পারলেও তৃণমূল নেত্রী তাঁকে বিজেপি বিরোধী জোটে এগিয়ে চলার মানসিক জোর জোগাবেন, তা প্রায় নিশ্চিত৷ কিন্তু বিজেপি নেতারা বলছেন, এই যে ফ্রন্টের কথা বলা হচ্ছে, তার নীতি বা আদর্শ বলে কিছুই নেই৷ খালি মিডিয়াতেই এর কথা শোনা যায়৷ এই সব আঞ্চলিক দলগুলি জানে, ভোটের তাদের কাছে যা আসন আছে তাও থাকবে না৷ তখন এই দর কষাকষি করার ক্ষমতাও হারাবে৷

কলকাতায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষতো ভবিষ্যতবাণী করে রেখেছেন – তেলেঙ্গানার চন্দ্রশেখর রাওয়ের মতো পালটি খাবেন চন্দ্রবাবু নাইডুও৷ বাংলায় তিনি আসছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতিবেশী মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাওয়ের রাস্তায় হেঁটে তিনি মোদী-ক্যাম্পেই যোগ দেবেন৷

ইতিমধ্যেই তেলেঙ্গানা হতাস করেছে মমতাকে৷ কিন্তু তামিলনাড়ুতে এআইএডিএমকে এনডিএ-তে সামিল হবে সেবিষয়টা এখনও পরিষ্কার নয়৷ তবে নিজের বক্তব্যে ফেডারেল ফ্রন্টকে ব্যাখ্যা করতে দিয়ে মমতা বারবার বলেছেন, অন্ধ্রপ্রদেশে ডিএমকে-এরই জেতার সম্ভাবনা বেশি৷ সেক্ষেত্রে ফেডারেল ফ্রন্টের ‘Rule of thumb’ – ‘যে যেখানে শক্তিশালী, সে সেখানে লড়াই করবে এবং ফ্রন্টের আসন সংখ্যা বাড়াবে’- এই তত্ত্ব মেনে চললে দাক্ষিণাত্য নিয়ে মমতার হতাশা আরও বাড়েছে৷

কারণ ডিএমকে ইতিমধ্যেই সিপিআইএমের সঙ্গে জোটের কথা ঘোষণা করেছে৷ সেক্ষেত্রে সব থেকে বড় প্রশ্ন মমতার জোটে ডিএমকে এবং সিপিএমের সমর্থন থাকবে কিনা৷ ‘‘পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকিয়ে সিপিএম যে মমতাকে সরাসরি সমর্থন করবে না তা মমতা ভালো করেই জানে৷ কিন্তু, লোকসভার ফলপ্রকাশের পর বিজেপি বিরোধী জোটে সিপিএমের জন্য বৃহত্তর স্বার্থে দরজা খোলা রাখতে চায় মমতা৷

সেই কারণেই কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনরাই বিজয়নকে ১৯শের সভায় নিমন্ত্রণ করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে তৃণমূল৷ শুক্রবারের সভায় মমতাও ভালো সিপিএম-খারাপ সিপিএম বেছে দলে যুক্ত করার কথা বলেছে সিপিএম৷

শুক্রবারের সভায় ইতিমধ্যেই ১৯ জানুয়ারির ব্রিগেডকে সফল করার যাবতীয় দায়িত্ব দলের অন্যান্য নেতাদের ভাগ করে দিয়েছেন মমতা৷ বলেছেন, রাজস্থান থেকে ধাড়খণ্ড, বিহার থেকে ওড়িশা, সব জায়গা থেকে নেতৃত্ব আসবেন৷ Accomodation কমিটিতে রয়েছেন – সুব্রত বক্সি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, জাভেদ খান এবং অর্জুন সিং, Reception কমিটিতে রয়েছেন ডেরেক ওব্রায়ন, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশি পাঁজা, অপরূপা পোদ্দার প্রমুখ৷ Transport কমিটির মাথায় শুভেন্দু অধিকারি৷ তাকবেন স্বর্ণকোমল সাহা৷ Medical কমিটিতে থাকবেন, নির্মল মাঝি অন্য দলের অন্যান্য চিখিৎসক সদস্যরা৷

তবে দিদিমণি মমতা জানেন, ২০১৯ সালে কেন্দ্রে পরিবর্তন আনতে ১৯ জানুয়ারির সভাকে উনি Turning Point – এ পরিণত করতে গেলে রাস্তায় অনেক ‘বাম্পার’ রয়েছে৷ সাবধানে ১৯শের রথ চালাতে হবে সাবধানে৷

বাংলাদেশ সময়: ০:০৩:২৫   ২৪৫ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


কানাডায় এলোপাথাড়ি গোলাগুলি, চার বাংলাদেশি আহত
মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে চায় জাতিসংঘ - গুতেরেস
ব্রাজিলে করোনায় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৩ জনের মৃত্যু
করোনায় বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখ ৭৬ হাজার ছাড়াল
ঘরের মাঠে টানা দ্বিতীয় হার লিভারপুলের
ফেসবুক বন্ধ করল মিয়ানমারে সামরিক জান্তা
করোনার বিরুদ্ধে ৯২ শতাংশ কার্যকর স্পুটনিক ভি
করোনার ছোবলে থামছে না প্রাণহানি, মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখ ৪৭ হাজার
মিয়ানমার ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আজ
তুর্কি নিয়ন্ত্রিত উত্তর সিরিয়ায় গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত

আর্কাইভ