১৯ জানুয়ারির ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডই হবে ভারতীয় রাজনীতির ‘‘Turning Point’’ – বক্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের সাধারণ পরিষদের বর্ধিত সভায় নেত্রীর বর্ধিত বক্তব্যে রয়েছে, ইতিমধ্যেই দেশের সিংহভাগ নেতৃত্ব এই সভায় যোগদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘শেষের শুরু’ হবে ১৯শের ব্রিগেডের স্টেজ থেকে৷ মমতার গলায় আত্মবিশ্বাসের যে সুর শোনা গিয়েছে, তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কানে পৌঁছেচে৷ মোদী-বিরোধী জোটের শুভ সূচনা করে কলকাতায় পরিবর্তনের ইতিহাস রচনা করতে চাওয়া মমতার স্বপ্ন বুমেরাংয়ের মতো তাঁকেই আক্রমণ শানাবে, মতামত গেরুয়া শিবিরের৷
তবে একথা ঠিক, দেশে মোদী বিরোধী ফেডারেল ফ্রন্টের আহ্বান মমতার মুখ থেকেই শোনা গিয়েছিল৷ ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে মমতার প্রস্তাবিত ‘ফেডারেল ফ্রন্টে’র ডাকে সারা দিয়েছিলেন সারা দেশের বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা৷ কিন্তু দেশের বিরোধীদল কংগ্রেসের সঙ্গে ফেডারেল ফ্রন্টের রাজনৈতিক সমীকরণ কী হবে তা পরিষ্কার হয়নি মমতার শুক্রবারের সভায়৷
রাজনৈতিক সূত্রে যা খবর, সোনিয়া গান্ধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ প্যাটেলের সঙ্গে কথা হয়েছে মমতার৷ কিন্তু ১৯শের ‘মেগা-ব্রিগেডে’র মঞ্চে সোনিয়া গান্ধী সপুত্র পদার্পণ করবেন, এমন কোনও নিশ্চয়তা মমতাকে দিতে পারেননি প্যাটেল৷ কিছুটা সেই কারণেই, শুক্রবারে নেতাজি ইন্ডোরের সভায় কার্যত কংগ্রেসকে গুরুত্বই দেননি মমতা৷ কংগ্রেস নিয়ে শব্দ খবর করেননি৷ হয়তো আগামী ২২ নভেম্বর দিল্লির অন্ধ্রভবনে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার পরই ফেডারেল ফ্রন্টে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে কোনও মতামত দেবেন মমতা৷
মমতার ফেডারেল ফ্রন্টের আসন চেহারা কী তা স্পষ্ট না হলেও যে নেতাদের সঙ্গে মমতা কথা বলেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল – মোদী বিরোধী লড়াইয়ে যাঁকে মমতা বিশেষ পছন্দ করেন৷ ১৯শের মঞ্চে কেজরিওয়ালকে না দেখলেই বরং অবাক হবেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷
সমাজপাদী পার্টির মাথা মুলায়ম সিং যাদব এবং তার ছেলে অখিলেশের সঙ্গে মমতার সুসম্পর্ক রয়েছে বহুদিনের৷ মাসখানেক আগেই উত্তরপ্রদেশের সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ হরিশ চ্যাটার্জী স্ট্রিটে মমতার বাসভবনে তার সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন৷ বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী কী মমতার পাশে দাড়াবেন তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে৷
কিছুদিন আগে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কালভাকুন্তলা চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর) মমতার সঙ্গে নবান্নে দেখা করে বিজেপি বিরোধী জোটের বার্তা দিয়েও পিছিয়ে এসেছিলেন৷ কেসিআর এখন এনডিএ-তে সামিল হওয়ার মুখে৷ ঠিক এই সময় জাতীয় রাজনীতির আঙিনায় নতুন করে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে উঠে এসেছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নারা চন্দ্রবাবু নাইডু৷ জাতীয় রাজনীতিতে মোদী-বিরোধী মুখ হিসেবে পরিচিত চন্দ্রবাবু ইতিমধ্যেই রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দিল্লিতে হাত মিলিয়ে এসেছেন৷ বলেছেন, কলকাতায় গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করবেন৷ কথামতো নবান্নে এসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে দেখাও করেন তিনি৷
স্বাভাবিক ভাবেই লোকসভা ভোটমুথী দেশে জোট-অঙ্কের সমাধান করতে এই সাক্ষাৎ কিছুটা হলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সাহায্য করবে৷ ইতিমধ্যেই বিজেপি বিরোধী জোটে কংগ্রেসকে পাশে পেতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে চন্দ্রবাবু৷ রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা, তিনি বিজেপি বিরোধী জোটে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হতে চান৷ অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কেও রাজধানীতে এই আলোচনা এক সময় তুঙ্গে উঠেছিল৷ মমতা অবশ্য বলেছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব চান না৷ বাংলা বিপ্লবের জন্ম দিয়েছে৷ দেশের এই সন্ধিক্ষণে তিনি Kingmaker হতে চান৷
তবে, ২০১৯ লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণার আগেই সারা দেশের নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে দেখা করে বেড়াচ্ছেন চন্দ্রবাবু৷ তবে বহুজন সমাজ পার্টি নেত্রী মায়াবতি তাঁকে কোনও প্রতিশ্রুতি না দিতে পারলেও তৃণমূল নেত্রী তাঁকে বিজেপি বিরোধী জোটে এগিয়ে চলার মানসিক জোর জোগাবেন, তা প্রায় নিশ্চিত৷ কিন্তু বিজেপি নেতারা বলছেন, এই যে ফ্রন্টের কথা বলা হচ্ছে, তার নীতি বা আদর্শ বলে কিছুই নেই৷ খালি মিডিয়াতেই এর কথা শোনা যায়৷ এই সব আঞ্চলিক দলগুলি জানে, ভোটের তাদের কাছে যা আসন আছে তাও থাকবে না৷ তখন এই দর কষাকষি করার ক্ষমতাও হারাবে৷
কলকাতায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষতো ভবিষ্যতবাণী করে রেখেছেন – তেলেঙ্গানার চন্দ্রশেখর রাওয়ের মতো পালটি খাবেন চন্দ্রবাবু নাইডুও৷ বাংলায় তিনি আসছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতিবেশী মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাওয়ের রাস্তায় হেঁটে তিনি মোদী-ক্যাম্পেই যোগ দেবেন৷
ইতিমধ্যেই তেলেঙ্গানা হতাস করেছে মমতাকে৷ কিন্তু তামিলনাড়ুতে এআইএডিএমকে এনডিএ-তে সামিল হবে সেবিষয়টা এখনও পরিষ্কার নয়৷ তবে নিজের বক্তব্যে ফেডারেল ফ্রন্টকে ব্যাখ্যা করতে দিয়ে মমতা বারবার বলেছেন, অন্ধ্রপ্রদেশে ডিএমকে-এরই জেতার সম্ভাবনা বেশি৷ সেক্ষেত্রে ফেডারেল ফ্রন্টের ‘Rule of thumb’ – ‘যে যেখানে শক্তিশালী, সে সেখানে লড়াই করবে এবং ফ্রন্টের আসন সংখ্যা বাড়াবে’- এই তত্ত্ব মেনে চললে দাক্ষিণাত্য নিয়ে মমতার হতাশা আরও বাড়েছে৷
কারণ ডিএমকে ইতিমধ্যেই সিপিআইএমের সঙ্গে জোটের কথা ঘোষণা করেছে৷ সেক্ষেত্রে সব থেকে বড় প্রশ্ন মমতার জোটে ডিএমকে এবং সিপিএমের সমর্থন থাকবে কিনা৷ ‘‘পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকিয়ে সিপিএম যে মমতাকে সরাসরি সমর্থন করবে না তা মমতা ভালো করেই জানে৷ কিন্তু, লোকসভার ফলপ্রকাশের পর বিজেপি বিরোধী জোটে সিপিএমের জন্য বৃহত্তর স্বার্থে দরজা খোলা রাখতে চায় মমতা৷
সেই কারণেই কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনরাই বিজয়নকে ১৯শের সভায় নিমন্ত্রণ করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে তৃণমূল৷ শুক্রবারের সভায় মমতাও ভালো সিপিএম-খারাপ সিপিএম বেছে দলে যুক্ত করার কথা বলেছে সিপিএম৷
শুক্রবারের সভায় ইতিমধ্যেই ১৯ জানুয়ারির ব্রিগেডকে সফল করার যাবতীয় দায়িত্ব দলের অন্যান্য নেতাদের ভাগ করে দিয়েছেন মমতা৷ বলেছেন, রাজস্থান থেকে ধাড়খণ্ড, বিহার থেকে ওড়িশা, সব জায়গা থেকে নেতৃত্ব আসবেন৷ Accomodation কমিটিতে রয়েছেন – সুব্রত বক্সি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, জাভেদ খান এবং অর্জুন সিং, Reception কমিটিতে রয়েছেন ডেরেক ওব্রায়ন, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশি পাঁজা, অপরূপা পোদ্দার প্রমুখ৷ Transport কমিটির মাথায় শুভেন্দু অধিকারি৷ তাকবেন স্বর্ণকোমল সাহা৷ Medical কমিটিতে থাকবেন, নির্মল মাঝি অন্য দলের অন্যান্য চিখিৎসক সদস্যরা৷
তবে দিদিমণি মমতা জানেন, ২০১৯ সালে কেন্দ্রে পরিবর্তন আনতে ১৯ জানুয়ারির সভাকে উনি Turning Point – এ পরিণত করতে গেলে রাস্তায় অনেক ‘বাম্পার’ রয়েছে৷ সাবধানে ১৯শের রথ চালাতে হবে সাবধানে৷
বাংলাদেশ সময়: ০:০৩:২৫ ২৪৫ বার পঠিত