ইতিহাসের এই দিনে

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » ইতিহাসের এই দিনে
রবিবার, ২ ডিসেম্বর ২০১৮



---

আজ (রোববার) ০২ ডিসেম্বর’২০১৮

(বিশ্ব দাসত্ব বিলোপ দিবস)
বিশ্বে ক্রীতদাস বা দাস প্রথার বিরুদ্ধে ২ ডিসেম্বর একটি মাইলফলক। বিভিন্ন ঘটনা ও আন্দোলন পরিক্রমার মধ্য দিয়ে ক্রীতদাস প্রথা এখন বিশ্ব থেকে বিলুপ্ত। কিন্তু সম্পদশালী ভূমি মালিকের জমি চাষে কৃষক ক্রীতদাস এখনো খুঁজে পাওয়া যাবে। পৃথিবীর বহু দেশে শিশু শ্রম অবলীলায় চলছে। অবলীলায় চলছে শ্রমিকের ন্যায্য পারিশ্রমিক না দিয়ে তাকে আটকে রেখে কাজ করানো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলছে জোরপূর্বক বিয়ে। জোরপূর্বক বিয়ে ব্যক্তি স্বাধীনতাকে প্রত্যাখ্যান করে সূচনা করে দাসত্বের। এরূপে নানা আঙ্গিকের দাসত্ব চর্চার প্রেক্ষিতে বিশ্ববাসী নতুন করে উদ্বিগ্ন। আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী শিশু দাসত্ব, জবরদস্তি শ্রম, পাচার,বন্ধক, পতিতাবৃত্তি, পর্নোগ্রাফি, ভূমি দাস এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ও শোষণমূলক কাজ নিষিদ্ধ। বাংলাদেশে ১৪ বছর বয়সী শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৬৩ লাখ এবং ১৭ বছরের নিচে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৮০ লাখ । এর অবসানও আন্তর্জাতিক দাসত্ব বিলোপ দিবসের আহবান।
ক্রীতদাস প্রথা বিলুপ্তির আন্দোলন প্রথম শুরু হয় ব্রিটেন ও অন্যান্য কিছু অঞ্চলে। ১৯ শতাব্দীতে ব্রিটিশ নেভি আফ্রিকার দাস বাণিজ্য দমন করে । ১৮০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আইনগতভাবে দাস প্রথা বিলোপ করা হয়। উত্তর দক্ষিণ যুদ্ধের (১৮৬১-১৮৬৫)পর আমেরিকায় বরণকারী সকল বন্দীকে মুক্তি দেয়া হয় সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর প্রেক্ষিতে। কিন্তু জোরপূর্বক শ্রম থেকেই যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে । ২০ শতাব্দীতেও নাজি জার্মান ও সোভিয়েত ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে জোরপূর্বক শ্রম আদায় বিদ্যমান ছিলো। ঔপনিবেশিক আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতেও এরকম উদাহরণ আছে, অনুন্নত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দৃষ্টির আড়ালে আজও ক্রীতদাস দেখা যায়। বিশেষ করে আফ্রিকা, আরব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় । ১৯৪৯ সালের ২ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ব্যক্তি বেচাকেনা এবং শোষণ দমনের বিষয়ে কনভেনশন গৃহীত হয়। কনভেনশন গৃহীত হওয়ার এই দিনটিকে স্মরণে প্রতি বছর ২ ডিসেম্বর পালিত হয় আন্তর্জাতিক দাসত্ব বিলোপ দিবসটি। আর যেনো কোনভাবেই নতুন করে বা নতুন রূপে অনুরূপ শোষণ ও নিষ্ঠুরতাকে সুযোগ দেয়া না হয় এবং দাসত্ব সবার ক্ষেত্রেই চিরদিনের জন্য বিলুপ্ত হয়ে গেছে কথাটি বিশ্ববাসীকে পুনঃপুনঃ জ্ঞাত করানের মানসে পালিত হয় দিবস। জেরপূর্বক শ্রম আদায়ের মাধ্যমে শোষণ ও নিষ্ঠুরতা এবং বিভিন্ন আঙ্গিকে ব্যক্তি বেচাকেনার বিষয়টি পৃথিবীতে পরিলক্ষিত হচ্ছে বলেই জাতিসংঘ এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন এবং এরূপ ঘৃণ্য চর্চার বিরুদ্ধে আইন জারী ও পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রসমূহকে আহবান জানায় যাতে নতুন রূপের দাসত্ব চর্চার সুযোগ না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায় ।
একটা সময় ছিলো যখন মানুষ সম্পদের মতো বেচা-কেনা হতো। একজন মানুষ অন্য একজনের মালিকানা ধারণ করা ছিলো বৈধ চর্চা। এভাবে ক্রীত মানুষ ছিলে মানুষেরই শেকলে বাধা যারা ক্রীতদাস। ক্রীতদাসকে দিয়ে কাজ করানো হতে মজুরি ছাড়াই, শান্তি দেয়া হতো ইচ্ছে মতো। তাদের জীবন এবং মৃত্যুর মালিকও ক্রীতদাসের কর্তা। পরে অতিতে বিভিন্ন দেশেই মারাত্বক ভাবে প্রশার ঘটে ছির ক্রীতদাস প্রথার। বিভিন্ন সময় রিভিন্ন কারণে প্রসার ঘটে এই ক্রীতদাস প্রথার। যুদ্ধে পরাজিতদের কখনো কখনো বরণ করতে হয়েছে ক্রীতদাস জীবন। ঋণগ্রস্ত হয়ে অনেকে বাধ্য হয়ে বরণ করেছে গোলামিৎ। অপরাধের শাস্তি হিসেবেও অনেকে হতো ক্রীতদাস। আর দাস পিতা-মাতার সম্ভানরাও অনুসরণ করেছে তাদের বাবা-মার পেশা-বরণ করেছে দাসত্ব। এরূপ ক্রীতদাসেরা শিকার হয়েছে নানারূপ নিষ্ঠুরতার।

১৯৫৪ সালের ২রা ডিসেম্বর এশিয়ার দেশ লাওস পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। ঐ বছরই জেনেভায় বৃহৎ শক্তিগুলোর বৈঠকে লাওসের স্বাধীনতার বিষয়টি চুড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়। ১৮৯৩ সাল থেকে লাওস আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। ইন্দোচীন অঞ্চলে স্বাধীনতা আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠার কারণে ১৯৪৯ সালে ফ্রান্স লাওসকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হয়। ফ্রান্স লাওসে একটি ক্রীড়নক সরকারকে ক্ষমতায় বসায়। কিন্তু সেদেশের জনগণ ঐ পুতুল সরকার ও ফরাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু করে। এর ফলে ১৯৫৪ সালের আজকের দিনে ফ্রান্স লাওস ছেড়ে চলে যায়। ২ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশ লাওসের সাথে চীন, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার ও কম্বোডিয়ার সীমান্ত রয়েছে।

১৯৫৬ সালের ২রা ডিসেম্বর কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল কাস্ট্রো স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করেন। সে সময় কিউবায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদলেহী স্বৈরাচারী বাতিস্তা সরকার ক্ষমতায় ছিল। ক্যাস্ট্রো বাতিস্তা সরকারের পতন ঘটিয়ে প্রকারান্তরে কিউবার ওপর মার্কিন আধিপত্যের অবসান ঘটানোর আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৫৬ সালের এই দিনে কিছু অনুসারীসহ তিনি একটি সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালান। কিন্তু বাতিস্তার অনুসারী সেনারা প্রচন্ড রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের পর ক্যাস্ট্রোকে গ্রেফতার করে। পরে ক্যাস্ট্রোকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। নির্বাসনে থাকা অবস্থায় তিনি পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে দেশে ফিরে আসেন এবং সারাদেশে সরকারী অবস্থানগুলোতে একের পর এক হামলা চালিয়ে বাতিস্তা সরকারকে পর্যদুস্ত করে তোলেন। ধীরে ধীরে ক্যাস্ট্রোর নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হাতে কিউবার একের পর এক এলাকার পতন হতে থাকে। তৎকালীন শাসক বাতিস্তা প্রথমে কিউবায় মোতায়েন মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে আশ্রয় নেন এবং পরে দেশ থেকে পালিয়ে যান। ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্যাস্টো কিউবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৭৬ সালে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। শারিরীক অসুস্থতার কারণে বর্তমানে ক্যাস্ট্রো রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে দূরে থাকলেও দেশের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে তার ভাই বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রোকে দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।

১৯৭১ সালের ২রা ডিসেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাত বৃটিশ উপনিবেশবাদ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। এ দিনটি আরব আমিরাতে জাতীয় দিসব হিসেবে উদযাপিত হয়। ১৯২০ সাল থেকে আরব আমিরাত বৃটিশ শাসনাধীনে ছিল। তবে সে সময়ে আরব আমিরাতেরই কোন একজন শেইখ বৃটিশদের সাথে সম্পাদিত চুক্তির ভিত্তিতে দেশ শাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী বৃটিশ সরকারের অবস্থান দূর্বল হয়ে পড়ে এবং উপমহাদেশের মত পারস্য উপসাগরীয় এলাকা থেকেও সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।

ফার্সি ১৩৫৮ সালের ১২ই অযার অনুষ্ঠিত এক গণভোটে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে সংবিধান অনুমোদিত হয়। ইসলামী শিক্ষা ও মূল্যবোধ, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টিকে ভিত্তি করে ইসলামী ইরানের সংবিধান প্রণীত হয়েছে। পরবর্তীতে ফার্সি ১৩৬৮ সালে এ সংবিধানে কিছু সম্পূরক বিষয় যুক্ত করা হয়, যা বিশেষজ্ঞ পরিষদের অনুমোদনের পর গণভোটের মাধ্যমে জনস্বীকৃতি লাভ করে। ইসলামী ইরানের বর্তমান সংবিধানে ১৪টি অধ্যায় এবং ১৭৭টি মূল ধারা রয়েছে।

৩৬২ হিজরির আজকের দিনে ইরানের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আবু রায়হান বিরুনী তৎকালীন ইরানের খাওয়ারেযম এলাকার বিরুন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইতিহাস, ভূগোল, জ্যোতির্বিদা ও গনিতশাস্ত্রে সেকালের সেরা পন্ডিতে পরিণত হয়েছিলেন। আবু রায়হান ভারত সফরে গিয়ে সংস্কৃত ভাষা রপ্ত করেছিলেন। সংস্কৃত ভাষায় লিখিত একটি বইয়ে তিনি ভারতীয় জনগোষ্ঠির কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও বিশ্বাস সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন। এছাড়া জ্যোতির্বিজ্ঞান, যুক্তবিদ্যা ও দর্শনের ওপর তার লিখিত অসংখ্য বই রয়েছে। বর্তমান যুগের সেরা ইতিহাসবিদ ও গবেষকরা আল বিরুনির লেখা বইগুলোকে নির্ভরযোগ্য দলিল হিসেবে ব্যবহার করেন। জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যামিতি সংক্রান্ত তার একটি বিখ্যাত বইয়ের নাম আল তাফহিম। এ বইয়ে বিভিন্ন হিসাব নিকাশ ও দলিল প্রমাণ তুলে ধরে তিনি পৃথিবীর ঘুর্নয়ন এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিষয়টি প্রমাণ করেছেন। ভূগোল ও জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক তার একটি বইয়ের নাম কানুনে মাসউদ। ৪৪০ হিজরিতে ৭৮ বছর বয়সে ইরানের এই মহান বিজ্ঞানী বর্তমান আফগানিস্তানের গজনি এলাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

ব্রিটেন ও নেপালের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর (১৮১৫)
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেমস মনারার ইউরোপীয় সম্প্রসারণবাদ বিরোধী মনরো মতবাদ ঘোষণা (১৮২৩)
ফ্রান্স ও স্পেনের সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর (১৮৫৬)
আমেরিকার দাস বিদ্রোহী ও সমাজ সংস্কারক জন ব্রাউনের ফাঁসি কার্যকর (১৮৫৯)
পটুয়া চিত্রশিল্প কামরুল হাসানের জন্ম (১৯২১)
ভিপি সিং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত (১৯৮৯)
জার্মানিতে ১৯৩২ সালের পর প্রথম নির্বাচনের চ্যান্সেলর হেলমুট কোলের মধ্য ডান কোয়ালিশন পুনঃ নির্বাচিত (১৯৯০)
বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য বিচ্ছিন্নতাবাদী শান্তি বাহিনীর সঙ্গে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর (১৯৯৭)

বাংলাদেশ সময়: ১১:৪১:৫৭   ৩০৫ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


কানাডায় এলোপাথাড়ি গোলাগুলি, চার বাংলাদেশি আহত
মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে চায় জাতিসংঘ - গুতেরেস
ব্রাজিলে করোনায় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৩ জনের মৃত্যু
করোনায় বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখ ৭৬ হাজার ছাড়াল
ঘরের মাঠে টানা দ্বিতীয় হার লিভারপুলের
ফেসবুক বন্ধ করল মিয়ানমারে সামরিক জান্তা
করোনার বিরুদ্ধে ৯২ শতাংশ কার্যকর স্পুটনিক ভি
করোনার ছোবলে থামছে না প্রাণহানি, মৃত্যুর সংখ্যা ২২ লাখ ৪৭ হাজার
মিয়ানমার ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আজ
তুর্কি নিয়ন্ত্রিত উত্তর সিরিয়ায় গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত

আর্কাইভ