পিত্তথলিতে পাথর হওয়া অতিসাধারণ অসুখ। এ অসুখ বিশ্বজুড়ে ক্রমে বেড়েই চলেছে। মূলত আমাদের জীবনযাপনের ধারা পরিবর্তনের সঙ্গে এ রোগের বৃদ্ধি লক্ষণীয়। ইদানীং পিত্তনালিতে পাথরের আধিক্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে লিভারে পাথর সমস্যায় ভুগছেন। শাহানা বেগমের (ছদ্মনাম) কথাই ধরা যাক। বয়স ৪০ বছর। চাকরি করেন। ইতোমধ্যে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। পেটব্যথা। ব্যথা বাড়লে ওষুধ খান। ওষুধে ব্যথা কমে বলে রোগ আমল দেন না। ভালোই চলছিল। দিন যত যাচ্ছিল, ব্যথার তীব্রতা তত বাড়ছিল। ওষুধে আর কাজ হচ্ছিল না। সঙ্গে নতুন নতুন উপসর্গ যুক্ত হয়েছে। যেমন জ্বর, বমি ও বমি ভাব। জ্বর, যা ব্যথার সঙ্গে যোগ হলো। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। কয়েক ঘণ্টা থাকে। এরপর ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে। প্রথম দিকে ৫/৬ মাস পর পর ব্যথা হতো। ব্যথার সঙ্গে জ্বর আসত। এরপর প্রতিমাসে ব্যথা হচ্ছে। হাসপাতালেও ভর্তি হতে হচ্ছে। একটি পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা গেল রোগটি। আল্ট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্টে দেখা গেল, লিভারের বাম লোবের দুটি সেগমেন্ট (যা সেগমেন্ট ২ ও ৩ নামে পরিচিত) অসংখ্য পাথর। লিভারের এ অংশটি বাকি অংশের ৮ ভাগের দুভাগ মাত্র। ইংরেজিতে বলে বাম লেটারাল সেক্টর। তার পিত্তনালি ও পিত্তথলিতে পাথর। পিত্তনালির এ পাথর আকারে মার্বেল পাথরের মতো। যখন ব্লক করে, তখনই জ্বর হয়। ব্যথা হয়। বমি হয়। জন্ডিস হয় মাঝে মধ্যে। এরপর লিভার ফাংশন টেস্ট, সিটিস্ক্যান, এমআরসিপিসহ বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হলো রোগটি ক্যানসারে রূপ নিয়েছে কিনা। রোগী অপারেশনের উপযোগী কিনা, এ জন্য আরও কিছু পরীক্ষা করানো হলো। অপারেশনের পর রোগী এখন পুরোপুরি সুস্থ। তবে ভবিষ্যতে যাতে রোগটি আর জটিল হয়ে না ওঠে বা ক্যানসারে রূপ না নেয়, এ জন্য লিভারের দুটি সেগমেন্ট (২ ও ৩ একত্রে) ফেলে দেওয়া হয়। পিত্তথলি ফেলে দেওয়া হয়েছে। পিত্তনালির পাথরটিও বের করে দেওয়া হয়েছে। রোগী এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন।
লেখক : অধ্যাপক, হেপাটোবিলিয়ারি প্যানক্রিয়েটিক অ্যান্ড লিভার ট্রান্সপ্লান্ট
সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব
মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
চেম্বার : লিভার গ্যাস্ট্রিক স্পেশালাইজড হাসপাতাল, বাড়ি-৭৫, রোড
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩১:০২ ৩২২ বার পঠিত