প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, দুর্নীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেল করেই নিজস্ব অর্থায়নে দেশের বৃহত্তর পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। এটকু বলতে পারি মাথায় (সরকার প্রধান) পচন নেই, যদি শরীরের কোথাও একটু (সরকারের মন্ত্রী) ঘা-টা থাকে তবে তা আমরা সারিয়ে ফেলতে পারবো। তিনি আরো বলেন, দুর্নীতি হলে দেশের প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের উপরে হতো না। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ ডলারে উন্নীত হতো না।
বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি একথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে এসংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নিতে নয়, দিতে এসেছি। দেশের জন্য আমার বাবা-মা, ভাইসহ সবাই জীবন দিয়ে গেছেন। স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেন উন্নত-সমৃদ্ধ হয়, বিশ্ব দরবারে যেন মর্যাদার সঙ্গে চলে- এটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।
শেখ হাসিনা বলেন, ধন-সম্পদ চিরদিন থাকে না। মানুষকে মরতে হয়। সব রেখে চলে যেতে হয়। তবু মানুষ অবুঝ হয়ে সম্পদের লোভে অস্থির হয়ে পড়ে। এটা মানুষের একটা প্রবৃত্তি, এই প্রবৃত্তিটা যিনি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, সেই দেশ ও জনগণকে কিছু দিতে পারেন। আমরা জনগণকে কিছু দিতে এসেছি। এতো রাস্তাঘাট, এতো বড় বড় প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করছি, দুর্নীতি হলে এতো অল্প সময়ের মধ্যে সেটা আমরা করতে পারতাম না। তাই রিপোর্টটা যাই দিক, আমার নিজের মর্যাদার থেকে বাংলাদেশের মর্যাদাটা তো উন্নত হয়েছে, সেটাই আমার কাছে বড় পাওয়া।
প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্পুরক প্রশ্নের সুযোগ নিয়ে জাতীয় পার্টির মো. ফখরুল ইমাম সম্প্রতি পিপলস এ্যান্ড পলিটিক্স নামক একটি আন্তর্জাজিত সংস্থার গবেষণা রিপোর্ট সংসদে তুলে ধরে বলেন, ওই রিপোর্টে সৎ সরকার প্রধান হিসেবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাবিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। আর সারা পৃথিবীর মধ্যে কর্মঠ সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ স্থান অর্জন করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনুভূতি এটা আগেও বলেছি এখনো বলব- কি পেলাম, কি পেলাম না সেই হিসাব মেলাতে আমি আসিনি। কে আমাকে রিকগনাইজড (স্বীকৃতি) করল কি করল না সেই হিসাব আমার নাই। আমার একটাই হিসাব এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কতটুক কাজ করতে পারলাম, সেটাই আমার কাছে বড়। যাদের সঙ্গে তুলনা করার হয়েছে, তাদের দেশে জনসংখ্যা কত? আর আমার দেশের জনসংখ্যা কত? এইটা যদি তারা একটু তুলনা করতেন তাহলে হয়তো অন্য হিসাব আসতো।
সরকার প্রধান আরও বলেন, যারা জরিপটি চালিয়েছেন তারা যদি আমাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করতেন, তাহলে হয়তো রেজাল্ডটা (ফলাফল) অন্য রকমও হতে পারতো। কারণ আমাদের যে প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলতে হয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য সরকার বা রাষ্ট্র প্রধানদের সেই অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলতে হয়নি। আর আমাদের দেশে কখনো ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত ছিল না। প্রতিবারই বাঁধা এসেছে, আবার আমাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে। আন্দোলন করে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। সেই গণতন্ত্র চর্চার মধ্য দিয়েই কিন্তু আজ দেশের এতো উন্নতি। মাত্র ৫৪ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে ১৬ কোটি মানুষ। যদি অন্য রাষ্ট্র প্রধানদের দেশ চালাতে হতো তাদের অবস্থা যে কি হতো সেটা বোধ হয় আপনারা চিন্তাও করতে পারেন না। আর কাজের ক্ষেত্রে আমার ১৮ ঘণ্টা, ১৪ বা ১২ ঘণ্টার হিসাব নাই। অনেক সময় এমনও দিন যায় রাতে ৩ থেকে সাড়ে তিন ঘন্টার বেশি ঘুমাতে পারি কি না সন্দেহ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই কাজ আসে সেটা করে যাই, তার কারণ আমি কাজ করি মনের টানে। আমার বাবা দেশটা স্বাধীন করে গেছেন। তাঁর একটা স্বপ্ন ছিল ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন। তিনি তাঁর স্বপ্ন সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে জীবন দিতে হয়েছে। তাই আমার একটাই চ্যালেঞ্জ যে, যে কাজটা আমার বাবা করে যেতে পারেননি, সেই অধরা কাজটা আমি সম্পন্ন করে যেতে চাই। দেশকে ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তবুও বলবো যারা হিসাব নিকাশ (গবেষণা) করেছেন তারা তাদের মত করেছেন। এজন্য ধন্যবাদ।
সরকারের বিরুদ্ধে কিছু দুর্নীতির অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দেশে মিলিটারি ডিক্টেটরশীপ (সামরিক স্বৈরতন্ত্র) চলে, যে দেশে গণতন্ত্রের অভাব থাকে, যে দেশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব থাকে- সেই দেশে দুর্নীতিটা শিকড়ে গেড়ে যায়। সেই শিকড় উপড়ে ফেলা কঠিন হয়ে যায়। ৭৫’ পর থেকে ২১টা বছর এই অবস্থাই দেশে বিরাজমান ছিল। মিলিটারি ডিক্টেটরশীপ ও তাদের অনিয়ম-অবিচার-অত্যাচারের কারণে দুর্নীতি নামক দুর্নামের এখনো আমাদের হতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৫৩:৫৭ ৩৫৫ বার পঠিত