দলের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে অনেক শত্রু। যারা নিজেদের বন্ধু বলেই দাবি করছে। কিন্তু এই ‘বিষাক্ত’ মানুষদের শীঘ্রই চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে তৃণমূল কংগ্রেসকে।
সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এমনই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। বাইরের শত্রুদের তৃণমূল চিনতে পারলেও এখনও ঘরের শত্রুদের চিনতে পারেনি বলে দাবি করেছেন তিনি।
এই কুণাল ঘোষকে নিয়ে কম বিড়ম্বনা পোহাতে হয়নি তৃণমূল কংগ্রেসকে। সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দীর্ঘদিন জেলেও থেকেছেন কুণাল। যদিও তাঁর জীবনের এই প্রতিকূলতার জন্য দলের অনেক নেতাদেরকেও কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। যদিও সর্বদাঁ নিজেকে তৃণমূলের সৈনিক বলেই দাবি করে এসেছেন কুণালবাবু। দলের পক্ষ থেকে সাসপেন্ড করার কথা বলা হলেও তিনি তা কখনই মানেননি।
চলতি বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার আবেদন করেছিলেন কুণাল ঘোষ। প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি ওই কথা বলেছিলেন। এরপরে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চেও দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের প্রাক্তন এই সাংসদকে। এরপরে বিভিন্ন সময়ে তৃণমুলের নানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও একমঞ্চে দেখা গিয়েছে কুণাল ঘোষকে।
মুকুল রায় তৃণমূলের সঙ্গ ত্যাগ করার পরে কুণাল ঘোষের বিজেপি যোগ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। যদিও সেই জল্পনায় অনেক আগেই জল ঢেলে দিয়েছেন কুণাল। তবে এই মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেসের অনেকেই বিজেপি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন বলে অভিযোগ করেছেন কুণাল। পাশাপাশি এই লোকেরাই নিজেদের স্বার্থে ফের তৃণমূলে থেকেও যেতে পারেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
আদতে এই ধরনার মানুষ দলের পক্ষে খুবই ভয়ঙ্কর বলে মনে করেন কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছেন, “যাঁরা এখনও তৃণমূলের মধ্যে থেকে মুকুলদা বা অন্য কোনো বিজেপি নেতার সঙ্গে দেখা করছেন ; যোগাযোগ রাখছেন ; বিজেপিতে লোকসভার আগে বা পরে যাব বলে কথা দিচ্ছেন; জল মাপছেন; আর এদিকে ভালো সেজে ক্ষমতা ভোগ করছেন। যদি তৃণমূল দারুণ ফল করে, এঁরা হাঁকডাক করে থেকে যাবেন। যদি সামান্য এদিকওদিক হয়, এঁদের ছটফটানি বাড়বে। কংগ্রেসের বাড়ির ঠিকানা খোঁজাও শুরু করেছেন কেউ কেউ।”
এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের একদা দুই নম্বর মুকুল রায়ের প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন কুণাল। রাজনৈতিক বিচারে বর্তমানে বিজেপির জাতীয় নেতা মুকুল রায়কে অন্যান্য নেতাদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রেখেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “মুকুল রায় আমার পুরোন পরিচিত। তাঁর প্রতি আমার কিছু অভিযোগ, অভিমান আছে। আমি তাঁর রাজনৈতিক যাত্রাপথের সঙ্গী বা সমর্থক নই। বরং তাঁর কিছু কাজে আমার বিরোধিতা আছে। কিন্তু তবু বলব, ঠিক হোক ভুল হোক সময় বলবে ; মুকুলদা অন্তত এখন শেষ পর্যন্ত তৃণমূল ছেড়ে প্রকাশ্যে বিজেপির মঞ্চে রাজনীতি করছেন। এনিয়ে বিরোধিতার জায়গা থাকলেও অবস্থানটা চোখে দেখা যাচ্ছে।”
তৃণমূল কংগ্রেসের অনেক নেতা দলবদল করতে মুখিয়ে আছেন বলে বারবার দাবি করে বিজেপি নেতারা। সম্প্রতি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির মুখেও সেই একই সুর শোনা গিয়েছে। এই ধরনের ‘বিষ’ চিনতে তৃণমূলের আরও সময় লাগবে বলে মনে করছেন কুণাল। তাঁর কথায়, “মুকুল রায়ের থেকেও আপত্তিকর রাজনীতি করছেন এরকম কয়েকজন। তৃণমূল বাইরের শত্রুকে চিনতে পারছে। ঘরের শত্রু যে আরও বিষ নিয়ে বসে, বুঝতে আরেকটু সময় লাগবে।”
লোক চিনতে ভুল হওয়ার থেকে দেরি হওয়াকে বেশি ক্ষতিকারক বলে মনে করছেন তৃণমূল কংগ্র্বেসের এই প্রাক্তন সাংসদ। সেই সঙ্গে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিচারে তৃণমূল অন্যান্যদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে বলেও দাবি করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। অর্থাৎ তৃণমূল সার্বিকভাবে অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু বিপদ বুঝতে বেশি দেরি না হয়ে যায় ! আত্মসন্তুষ্টি এবং প্রশাসননির্ভরতা এক্ষেত্রে ক্ষতিকারক হতে পারে।”
বাংলাদেশ সময়: ২১:৪৫:০০ ২০০ বার পঠিত