সেই কবে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গেয়ে গেছেন, ‘আমি ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম আমার ঠিকানা’! বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের স্বপ্নের ঠিকানাও যেন রাখা ‘চার ঝড়’-এর কাছে। ক্রিস গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্স, অ্যালেক্স হেলস ও রাইলি রুশো। আগের ম্যাচে ঘূর্ণি ওঠে দুজনের ব্যাটে; কালও তাণ্ডব দুজনে। তাতেই ঢাকা ডায়নামাইটসের মতো প্রবল প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে কাল জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে যায় রংপুর রাইডার্স।
আট উইকেটের এ জয়ে সেরা চারে থাকার রেসে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের এখন প্রবল উপস্থিতি। ১১ খেলায় তাদের ১২ পয়েন্ট। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও চিটাগং ভাইকিংস এক ম্যাচ কম খেলেও একই পয়েন্টে। তবে রান রেটে এগিয়ে থাকায় টেবিলের সবার ওপরের নামটি রংপুর রাইডার্স। ৯ খেলায় ১০ পয়েন্ট নিয়ে ঢাকা ডায়নামাইটস আছে চতুর্থতে।
ক্রিস গেইলের বারুদে বিস্ফোরণ হচ্ছে না কিছুতেই। খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে ম্যাচে ৫৫ রানটাই যা বলার মতো স্কোর। বিপিএলের বাকি সাত ইনিংস মিলিয়ে তো তিনি করতে পারেন না ৪২ রানের বেশি। কালও ছয় বলে এক রান করে আউট এই ব্যাটিং দানব। রংপুর রাইডার্সের দানবীয় ব্যাটিং লাইনের অবশ্য তাতে কিছু যায়-আসেনি। গেইলের বারুদ ভিজে গেছে, আসরজুড়ে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা দেখানো গত ম্যাচে সেঞ্চুরিয়ান রাইলি রুশোও না হয় প্রথম বলেই বোল্ড—তো হয়েছেটা কী! ডি ভিলিয়ার্স ও হেলস রয়েছেন না! তাঁদের দুজনের গড়া টি-টোয়েন্টিতে তৃতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ অবিচ্ছিন্ন ১৮৪ রানের জুটিতে ঢাকার ছুড়ে দেওয়া বিশাল লক্ষ্যও হয়ে যায় ছেলেখেলা।
ছেলেখেলা নয়তো কী! চার-ছক্কায়, রানে রানে দুই ব্যাটসম্যান এগোচ্ছিলেন সমান ছন্দে। ১৬তম ওভার শেষের অবস্থা দেখুন। রংপুরের তখন জয়ের জন্য ২৪ বলে ৩১ রান প্রয়োজন হওয়ায় ম্যাচের ফল নিয়ে কারো আগ্রহ নেই। আগ্রহের জায়গা একটিই— কোনো একজনের সেঞ্চুরি হবে কি না। ৪১ বলে ৭৪ রানে থাকা ডি ভিলিয়ার্সের যেমন সম্ভাবনা, তেমনি ৪৮ বলে ৭৮ রানে থাকা হেলসেরও। কিন্তু রুবেল হোসেনের করা ১৭তম ওভারের প্রথম তিন বলে চার, ছক্কা, চার মারায় আশার রোদ্দুরের সবটাই লুটে পড়ে ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাটে।
পরের ওভারের প্রথম বলে আরেক ছক্কায় তিনি পৌঁছে যান ৯৬-তে। দলীয় রান-বলের সমীকরণ বদলে যায় প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি হবে কী হবে না? জেতার জন্য রংপুর রাইডার্সের প্রয়োজন আট রান, তিন অঙ্কে পৌঁছতে ডি ভিলিয়ার্সের দরকার ৪ রান। পরের বলে এক রান নেওয়ায় আবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামজুড়ে আনন্দমাখা উদ্বেগ। এখন যদি ছক্কা মেরে দেন হেলস! তা কী আর হয়! এক রান নিয়ে সতীর্থকে স্ট্রাইক ফিরিয়ে দেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান। পরের বলে দুই এবং এর পরের বলে এক রান নিয়ে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ ডি ভিলিয়ার্সের। মাত্র ৫০ বলে।
তবে শেষ পর্যন্ত যে ১০ বল হাতে রেখে আট উইকেটের সহজ জয় পাবে রংপুর রাইডার্স, তা বোঝা যায়নি। চট্টগ্রামের উইকেট কুড়ি-বিশের ফরম্যাটের উপযোগী হলেই-বা কী, ঢাকার ছয় উইকেটে ১৮৬ রান তো কম নয়। যে স্কোরে রনি তালুকদারের ৩২ বলে ৫২ রানের অবদান সবচেয়ে বেশি। হযরতউল্লাহ জাজাই (১৭), সুনীল নারিন (২৮), আন্দ্রে রাসেল (১৪), কাইরন পোলার্ডরা (২৩ বলে ৩৭*) পার্শ্বচরিত্রে। চার বিদেশির কেউ মূল নায়ক হয়ে উঠতে পারেননি বলেই হয়তো ঢাকা ডায়নামাইটসের রান ২০০ পেরোয়নি। ভালো কিছুর প্রতিশ্রুতি দিয়েও ১২ বলে ২৫ রান করে সাকিব আল হাসানের আউটেরও ভূমিকা রয়েছে তাতে।
তবু পাঁচ রানের মধ্যে গেইল ও রুশোকে আউটে রোমাঞ্চকর ম্যাচেও সুবাস ছিল। তা সেই রোমাঞ্চের মঞ্চ কালকের স্টেডিয়াম হয়েছে বটে, তবে ম্যাচের প্রতিদ্বন্দ্বিতার হিসেবে নয়। ডি ভিলিয়ার্স (৫০ বলে ১০০*) ও হেলসের (৫৩ বলে ৮৫*) খুনে ব্যাটিংয়ের উন্মত্ত প্রদর্শনীতে।
আরো বেশি করে হয়তো ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি পাবেন কী পাবেন না—শেষ দিকের সেই দোলাচলে!
বাংলাদেশ সময়: ১২:০৫:১১ ২২৭ বার পঠিত