দীর্ঘ দুই দশক পর শুটিংয়ের কাজে কলকাতা থেকে দেশে এসেছেন ‘বেদের মেয়ে জোসনা’খ্যাত অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি অংশ নেবেন নির্মাতা সাঈদুর রহমান সাঈদের ‘মধুর ক্যান্টিন’ ছবির শুটিংয়ে। দীর্ঘ সময় দেশীয় সিনেমা থেকে দূরে থাকলেও অঞ্জু ভুলে যাননি অতীতের স্মৃতিমাখা এই রুপালি ভুবনকে। দৈনিক আমাদের সময় অনলাইন-এর কাছে তুলে ধরেছেন সেসব কথা।
দুই দশক পর শুটিংয়ের কাজে দেশে এলেন। এরই মধ্যে ঘুরে এলেন পাবনা ও কুষ্টিয়া থেকে। কেমন ছিল এই সফর?
সাংঘাতিক ভালো লেগেছে। সব জায়গায় মাকে খুঁজে পাচ্ছি। দারুণ কিছু সময় কাটিয়েছি সেখানে। যা মুখে বললে বোঝানো যাবে না। আমার তো ইচ্ছে করে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে। কিন্তু এবারও খুব একটা সময় নিয়ে আসতে পারিনি। তাই আর কোথাও যাওয়া হবে না। পরবর্তীতে আসলে ঠিকই সময় নিয়ে আসবো।
আপনাকে দেখার জন্য তো ভক্তরা সেখানে রীতিমতো ভিড় জমিয়েছিল…
আমিও অবাক হয়েছি ভক্তদের ভালোবাসা দেখে। আমার পাবনা যাওয়ার খবর পরিচিতজন ছাড়া তেমন কেউ জানতো না। কিন্তু আমি যখন পাবনা গিয়ে নামলাম, দেখলাম আমাকে দেখার জন্য কতশত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক একই রকম হয়েছে কুষ্টিয়া সফরেও। যেখানেই গিয়েছি, সেখানেই মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এতো ভালোবাসা পাবো, তা আমার ধারনা ছিল না।
দেশিয় সিনেমায় আপনি অসংখ্য দর্শকপ্রিয় ছবি উপহার দিয়েছেন। এখানে আপনার ভক্ত সংখ্যাও অনেক। বাংলা সিনেমায় আপনি সেলিব্রেটি। তবে কেন হঠাৎ আড়াল হলেন, থেকে গেলেন কলকাতায়?
অনেকটা ইমোশনাল হয়ে সেখানে থেকে যাওয়া। ওই সময় মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে মূলত দুদিনের জন্য কলকাতায় গিয়েছিলাম। বাবা মারা গেলেন। যেহেতু যাওয়া হলো, তাই সেখানে আটকে গেলাম। শুধুমাত্র মায়ের কারণে। মায়ের জন্য যদি একটু সময় না-ই দিতে পারি, তবে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে কোনো লাভ নেই। আমার ভাইও কানাডা থেকে চলে আসে মায়ের কারণে। কলকাতায় আমার থেকে যাওয়া, শুধুমাত্র মায়ের কারণে।
আপনি চলে যাওয়ার কারণে এখানকার দর্শক আপনার ছবি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আপনি কি মনে করেন, তাদের আপনি বঞ্চিত করেছেন?
আমি এখানে আসার পর দেখতে পেলাম, এই জেনারেশন, আগের জেনারেশন আমাকে এতো ভালোবাসে। যখন তারা বলছিল, আবার আমাকে তারা দেখতে চায়, আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। তখন আমার মনে হয়েছে, আমি আসলেই তাদের বঞ্চিত করেছি। আমার ভুল হয়েছে। কলকাতায় যাওয়ার পর আমি কিন্তু ওখানেও অভিনয় করেছি।
আপনার অভিনীত প্রায় সব ছবিই দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। অভিনয়ের আগে আপনি কি ভেবেছিলেন যে ছবিগুলো এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেবে?
অভিনয়ের আগে আমি কখনো তা ভাবিনা। আমার কাজ অভিনয় করা। আমি মনপ্রাণ দিয়ে অভিনয় করি। মাটি ও মানুষের গল্প হলে মানুষ ঠিকই তা গ্রহণ করবে। আর তা ঠিক লক্ষ্যে পৌছাবেই।
‘মধুর ক্যান্টিন’ ছবির সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন?
এটা আমার থেকে নির্মাতা সাঈদ ভাই ভালো বলতে পারবেন। সাঈদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিবারিক একটা সম্পর্ক। সাঈদ ভাই যখন আমাদের বাড়িতে গেলেন, তখনই উনার একটা ছবিতে কাজ করার কথা হয়। অনেক আগেই এ ছবিটি করার কথা ছিল। কিন্তু যেভাবেই হোক দেরি হয়ে গেছে।
আমরা জানি, ছবিতে আপনি মধুসূদন দে’র স্ত্রী যোগমায়ার চরিত্রে অভিনয় করবেন। চরিত্রটি সম্পর্কে যদি একটু বলতেন…
আসলে চরিত্র সম্পর্কে আগেভাগে বলা ঠিক না। আমি মনে করি, একটা ছবির গল্প ও চরিত্রই হচ্ছে ছবির মূল। তা আগে বলে দিলে ছবির গুরুত্বটা কমে যায়। আপনারা যতটুকু জেনেছেন আপাতত তা-ই থাকুক। আমি স্ক্রিপ্ট এখনো হাতে পাইনি। চরিত্র সম্পর্কে না জেনে, ভুল কিছু বলা ঠিক হবে না।
গত বছর আপনি দেশে এসেছিলেন। তখন অনেকে বলেছে, আপনি এখানের বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ‘মধুর ক্যান্টিন’ ছাড়া আর কোনো ছবিতে কি অভিনয় করবেন?
বাংলাদেশের সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক। যা ছেড়ে বা ভুলে থাকা সম্ভব না। মনের মতো গল্প হলে অবশ্যই কাজ করব। তবে ‘মধুর ক্যান্টিন’ ছাড়া আপাতত আর কোনো ছবিতে কাজ করছি না। কারও সঙ্গে কাজের ব্যাপারে কথাও হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৭:৫৯ ১৯০ বার পঠিত