একথা আগেও বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তবে ইদানিং তাঁর মুখে এই কথা শোনা যেত না৷ শনিবার তিনি বলেছেন, ‘‘দরকার হলে জেলে যাব … কিন্তু মাথানত করব না৷’’ রাজ্যে দুই দফায় সভা করে এদিন নরেন্দ্র মোদী মমতাকে যে ভাবে বাক্যবাণে বিদ্ধ করেছেন – তা মোদী-মমতা দ্বৈরথকে অন্য মাত্রা দিয়েছেন৷
শনিবারের বার বেলাতে মোদী বলেছেন – ‘‘দিদি আপনি সিবিআইয়ের মতো এজেন্সিকে রাজ্যে আটকাচ্ছেন কেন? কিসের ভয়ে আটকাচ্ছেন? আরে দিদি … আগর কুছ গলত কিয়া হি নেহি তো ডর কিস বাতকা …৷’’ মমতার মুখেও পালটা শোনা গিয়ছে – ‘‘ওর (নরেন্দ্র মোদী) মতো প্রধানমন্ত্রীর দরকার নেই৷ পাঁচ বছর ধরে মানুষকে শোষণ করেছে সিবিআই দিয়ে আর ইডি দিয়ে …দাঙ্গা করেছে, কৃষক হত্যা করেছে, বেকার যুবকদের ভবিষ্যত কেড়ে নিয়েছে, গোরক্ষকের নামে দাঙ্গা, পুলিশ হত্যা, মানুষ হত্যা করেছে৷’’
যদি পাঁচ বছর পিছিয়ে যাওয়া যায় তবে মোদীর সঙ্গে মমতার বাক্যযুদ্ধের শুরুতে পৌছানো যাবে৷ ২০১৪ সালে কলকাতায় মোদী জনসভা থেকে বলেছিলেন , দিদি আপকে তো দোনো হাতো মে লাড্ডু৷ এখানে আপনি মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রে আমি থাকব প্রধানমন্ত্রী৷ রাষ্ট্রপতি (তখন প্রণব মুখোপাধ্যায়) আপনাদেরই লোক৷ সংখ্যালঘু ভোটের দিকে তাকিয়ে লাড্ডু খাননি মমতা৷ মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রকাশ্যে অভিনন্দন জানাননি৷ জনসভায় মোদীকে পালটা আক্রমণ শানিয়ে বলেছিলেন, দাঙ্গাবাজকে কোমরে দড়ি বেঁধে রাখা উচিত৷ এর পরে ফিরতি জনসভায় মোদী মমতাকে আক্রমণ করেন৷
লোকসভা নির্বাচনের আগে সারদা, নারদা ইস্যু আবার চাগিয়ে তুলেছে বিজেপি৷ বিভিন্ন জনসভায় নেতারা পুরানো ইস্যুকে সামনে রেখেই বক্তব্য রাখছেন৷ মমতা ঘনিষ্ট চলচিত্র নির্মাতা শ্রীকান্ত মোহতাকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই৷ বৃহস্পতিবার সকালেই মমতার রাজনৈতিক জীবনের পুরানো সঙ্গী মানিক মজুমদারের বাড়িতে সিবিআই এবং ইডি হানা দিয়েছে৷ মানিকবাবু মমতার প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক৷
মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন কালীঘাটের ৩০বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের কাছাকাছিই থাকেন মানিকবাবু৷ সিবিআই সূত্রে যা খবর, আগে সিবিআইয়ের ডাক পেলেও দফতরে গিয়ে অফিসারদের সঙ্গে তিনি দেখা করেননি৷ তাঁর বয়সই সিপিআই দফতরে যাওয়ার জন্য বাধা হয়েছে – বারবার বলেছেন মানিক৷ তবে বৃহস্পতিবার সিবিআই এবং ইডি’র অফিসাররা মানিকবাবুর বাড়িতে ঢোকার মুখে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন৷ তল্লাশি কিছুটা অসমাপ্ত রেখেই ফিরে যায় গোয়েন্দারা৷ সূত্রের খবর, তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি তহবিল এবং মুখ্যমন্ত্রীর ছবি বিক্রি সংক্রান্ত তথ্য মানিক মজুমদারের থেকে জানতে চায় সিবিআই৷
রাজনৈতিক সভাতে বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি অমিত শাহ মমতাকে ছবি নিয়ে আক্রমণ করেছেন৷ বলেছেন, মমতার ছবির খদ্দেরা হলেন চিটফান্ডের মালিকরা৷ সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নোটিশ ধরিয়েছিলেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রীমা ভট্টাচার্য৷ চন্দ্রীমা বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিটফান্ড কর্তাদের ছবি বিক্রি করেছেন তা প্রমাণ করে দেখাক অমিত শাহ৷ কাঁথির মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে উনি যা যা বলেছেন, প্রমাণ না করতে পারলে মানহানির মামলা করা হবে৷ বুধবার রামপুরহাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা অমিত শাহকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে বলেছিলেন, অর্ধশিক্ষিত …গর্ধশিক্ষিতরা বাংলার ব্যাপারে কী বা জানে …৷ ‘‘রাজ্যের হাতেও সিআইডি আছে, এসটিএফ আছে৷ আর্থিক দূর্নীতি ধরার ব্যবস্থা আছে৷ আমরাও চাইলে তদন্ত শুরু করতে পারি৷’’ এই সব কিছুর থেকে মমতার হয়তো অনুমান, সিবিআই বা এজেন্সি নিয়ে তাঁকেও টার্গেট করতে পারে বিজেপি৷
বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৬:৫৭ ১৯৩ বার পঠিত