নগরপাল রাজীব কুমারের পাঁশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে সিবিআই অভিযান আসলে কেন্দ্রের শাসক বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল এবং তা সংবিধানের অবমাননা বলে অভিযোগ করেছেন মমতা। এই অভিযোগে মহানগর কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে ধর্নাতেও বসেছেন তিনি।
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি এটা ঠিক করলেন? এই প্রশ্নটাই ঘুরছে সমগ্র দেশের সকল প্রান্তে। সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের মুখেই রয়েছে এই এক প্রশ্ন। তালিকায় ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডের মহা সমাবেশের মঞ্চে উপস্থিত সকল রাজনৈতিক দলের নেতারা রয়েছেন। মমতাকে সমর্থন জানিয়ে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অবস্থান নিয়ে জাতীয় রাজধানী দিল্লির প্রতিটি অলিগলিতে শুরু হয়েছে চর্চা। এই একই ছবি দেখা গিয়েছে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সদর দফতরেও। শতাব্দী প্রাচীন দেশের সবথেকে পুরনো রাজনৈতিক দলের সদর দফতরের প্রতিটি কোনায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে এই প্রশ্ন, “মমতা দিদি কি ঠিক করছেন?”
নয়াদিল্লির ২৪ নম্বর আকবর রোড। এটিই ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সদর দফতরের ঠিকানা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নেতারা নিত্যদিন এই কার্যালয়ে আসেন। সকাল থেকে রাত-পর্যন্ত লোকজনের আনাগোনা লেগেই থাকে। নিজের প্রদেশে নেতৃত্বের ক্রিয়াকলাপ নিয়েই মূলত আলোচনা হয়। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
কিন্তু গত রবিবার থেকে বদলে গিয়েছে আলোচনার বিষয়বস্তু। মুখ্য আলোচনার বিষয় এখন তৃনমূল নেত্রী এবং তাঁর ধর্না। তিন থেকে চার জন নেতা সমগ্র কংগ্রেস দফতরের বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে বা বসে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। একটু কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে যে সকলেরই আলোচ্য বিষয় এক।
গলায় সংবাদ মাধ্যমের পরিচয়পত্র এবং সেখানে কলকাতা লেখা দেখে এগিয়ে এলেন একজন। নিজেই জানতে চাইলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী ঠিক করছেন?” তাঁকে দেখে আশেপাশের অনেকেই এগিয়ে এলেন। সকলেই ওই উত্তরটা জানতে আগ্রহী। তাঁদের মধ্যেই একজন বলে উঠলেন, “চোরেদের পাশে দাঁড়ানো উচিত নয়।”
কিন্তু রাহুল গান্ধী তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করেছেন। পালটা এই জবাবে, উলটো দিক থেকে উত্তর এল, “সেটা তো মহাজোটের বাধ্যবাধকতায় রাহুল গান্ধীকে করতে হয়েছে।” একই সঙ্গে আরও শোনা গেল, “মহাজোট এখন খুব জরুরি। সেই স্বার্থেই মমতা দিদিকে সমর্থন করতে বাধ্য হয়েছেন রাহুল।”
পেশার উত্তেজনাতেই বক্তাদের নাম এবং পদ জানার পরেই তাঁদের বক্তব্য রেকর্ড করতে ক্যামেরা অন করতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তাঁরা বাধা দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দিলেন যে তাঁদের যেন সংবাদ আকারে প্রকাশ না করা হয়। নাম না প্রকাশ করার শর্তে অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরে রাজি হয়েছিলেন একদল কংগ্রেস নেতা। এই তালিকায় কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানের নেতা যেমন ছিলেন, সেই সঙ্গে ছিলেন বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্রের নেতা। টিআরএস শাসিত তেলেঙ্গানার নেতাও ছিলেন। যাদের অনেকে এআইসিসি-র প্রাক্তন সদস্য, কেউ আবার বর্তমান।
শর্ত মেনেই জিজ্ঞাসা করলাম, “রাহুল গান্ধীর এই সিদ্ধান্তে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ নেতৃত্ব বেকায়দায় পড়েছেন। সেটার কী হবে?” রাজস্থানের এক নেতা বললেন, “হাইকম্যান্ডের নির্দেশ উপেক্ষা করা যায় না। আর রাহুল গান্ধী ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের মামলার উপরে ভিত্তি করেই সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে যথা সময়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানালেন মহারাষ্ট্রের এক নেতা। অন্যদিকে তেলেঙ্গানার এক কংগ্রেস নেতা আবার বললেন, “সবাই জানে যে চিট ফান্ডের মূল খেলাটা মুকুল রায়ের। তাঁকে কিন্ত সিবিআই ধরছে না। সে এখন বিজেপিতে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতাদের থেকে একটু অন্য সুরে কথা বললেন কংগ্রেস সদর দফতরের নিরাপত্তারক্ষী রাধে শ্যাম। তাঁর কথায়, “রাহুল গান্ধী কখনই চোর বা চুরিকে সমর্থন করেননি। আর বাধ্য হয়েও মমতা দিদিকে সমর্থন করেননি।” রাহুল গান্ধীর তালাবন্ধ ঘরের সামনে চেয়ারে বসে তিনি বললেন, “ভোটের মুখে সিবিআই অভিযানের শুধু বিরোধিতা করেছেন রাহুল জি।” প্রবীণ এই ব্যক্তি কংগ্রেসের সমর্থক হলেও কর্মী নন। এমনই দাবি করেছেন কংগ্রেস সদর দফতরের নিরাপত্তারক্ষী রাধে শ্যাম। পাশাপাশি নেতাদের মতো নাম প্রকাশেও তাঁর অনীহা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৯:৩০ ১৮৯ বার পঠিত