রাজনীতির ময়দানে তিনি খেলছেন প্রায় চার দশক। একাধিকবার কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক সামাল দিয়ে এখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবারে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতার প্রতিফলন দেখা গেল জাতীয় রাজধানীর প্রেস ক্লাবে।
আলোচিত ব্যক্তি হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার বিরুদ্ধে একসময় অজ্ঞতার অভিযোগ তুলতেন বাম-কংগ্রেসের নেতারা। তখন অবশ্য বিরোধী রাজনীতিতে ছিলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও অপ্রিয় কথা বা প্রশ্ন না শুনতে পারার মতো গুরতর অভিযোগ ছিল বঙ্গতনয়ার বিরুদ্ধে।
সেই সকল যাবতীয় বোলিং অ্যাটাক সামাল দিয়ে রাজধানীতে এক সুদীর্ঘ ইনিংস খেললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে মাঠ ছাড়লেন নট আউট হিসেবে। যা বুঝিয়ে দিল অভিজ্ঞতার গভীরতা। খুব দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিলেন বাউন্সার, পেস এবং স্পিন বোলিং অ্যাটাক। শুধু সামাল দেওয়ায় নয়, চার-ছক্কায় বাউন্ডারিও হাঁকিয়েছেন। লম্বা ইনিংসে কখনও ব্যাট করেছেন রাহুল দ্রাবিড়ের স্টাইলে, কখনও আবার ক্রিস গেইলের কায়দায়। ক্রিজে থাকাকালীন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন ঠান্ডা মাথায়।
লক্ষ্মীবারের বিকেলে সংসদ ভবনের অদূরে দিল্লি প্রেস ক্লাবে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। কর্মসূচীতে সাংবাদিক বৈঠক না থাকলেও তিনি সকলের মুখোমুখি হয়ে প্রশ্ন করতে বলেন। ওই দিনেই যন্তরমন্তরে বাংলার চিট ফান্ড ক্ষতিগ্রস্তরা ধর্নায় বসেছিলেন। সেই সংক্রান্ত প্রশ্ন শুনে চটে গিয়েও আক্রমণের পথা হাঁটেননি মমতা। বিষয়টি সম্পর্কে তাঁর জানা নেই বলে এড়িয়ে যান।
পালটা প্রশ্ন করা হয়, ‘রাজীব কুমারের জন্য আপনি ধর্নায় বসেছিলেন, এই আমানতকারীদের জন্যেও কী ধর্না দেবেন?’ বেজায় চটে গেলেও হাসি মুখে তিনি বলেন, “চিট ফান্ড বাম জমানায় চালু হয়। আমরা অপরাধীদের গ্রেফতার করেছি। ওই সব সংস্থার সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরাতে চাই। তবে বিষয়টা আদালতের বিচারাধীন।”
বিজেপি নেতাদের বাংলায় সভা করতে দিচ্ছে না মমতার প্রশাসন। এই অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন শুনে খুব সাবধানতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন অমিত শাহ সহ অন্যান্য বিজেপি নেতাদের বাংলায় সভা করার পরিসংখ্যান। তবে এই ধরনের প্রশ্ন যে তাঁর পছন্দ হয়নি তা অল্প সময়ের জন্য হলেও বোঝা গিয়েছিল। তবে সেই সকল প্রশ্নের কৌশলী উত্তরে হাসির রোল ওঠে দিল্লি প্রেস ক্লাবে।
এক সময় এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভামঞ্চে অপ্রিয় প্রশ্ন শুনে এক ব্যক্তিকে মাওবাদি তকমা দিয়ে দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজের অনুষ্ঠানে এক পড়ুয়ার প্রশ্নে চটে গিয়ে অনুষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। এদিন কিন্তু তেমন কিছু হয়নি। খুব দক্ষতার সঙ্গে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। কখনও আবার প্রশ্নকর্তার দিকে আঙুল দেখিয়ে বলেছেন, “খামোস।” আবারও সবাই হেসে ফেলেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৩২:৫১ ২০৬ বার পঠিত