আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ছাত্রজীবন থেকেই আমার রাজনীতি শুরু। কিন্তু কোনো বড় পোস্টে ছিলাম না, কখনও বড় পোস্ট চাইওনি। পদ তৈরি করা এবং সবাইকে পদে বসানোর দায়িত্বই পালন করতাম। ’৭৫-এর পর দলের যে এত বড় দায়িত্ব আমাকে নিতে হবে, সেটা কখনও ভাবিওনি, চাইওনি। এমন দায়িত্ব নেয়ার কথা চিন্তাতেও ছিল না।
শুক্রবার সকালে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩৯তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এলে তিনি এসব কথা বলেন।
শুরুতেই দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
দলের সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, স্কুলজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পরে কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে ছাত্রলীগেরই সদস্য ছিলাম। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটির সদস্য ছিলাম। পদ নিয়ে চিন্তা করিনি।
শুরুতে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় থেকে দেশের জন্য কাজ করার কারণেই মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ। এ কারণে দেশে নয়, গোটা উপমহাদেশে আ’লীগ শুধু রাজনৈতিক দল নয় বরং প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, দেশবিরোধীরা ’৭৫-এর পর স্বাধীনতার চেতনা ব্যাহত করেছে। যারা স্বাধীনতা ও দেশের চেতনায় বিশ্বাস করে না ’৭৫-পরবর্তী সময়ে তারা ক্ষমতায় থাকায় যে আদর্শ নিয়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল তা বাস্তবায়ন হয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জন্য কাজ করতে এবং গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতেই দেশে ফিরে আসি। এর জন্য দিনের পর দিন সংগ্রাম করেছি। কেননা গণতান্ত্রিক ধারা ছাড়া দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি সম্ভব নয়।
১৯৮১ সালের ১৭ মের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, যেদিন দেশে ফিরি, সেদিন আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল। বিমানটি বাংলার মাটি ছুঁয়েছে, ট্রাকে করে আমাদের নিয়ে আসা হচ্ছে। ওই সময় ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ এসেছিল। এয়ারপোর্ট থেকে সংসদ ভবন পর্যন্ত মানুষের ঢল নেমেছিল। ওইটুকু পথ পারি দিতে প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় লেগেছিল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সেই নির্মম ঘটনার স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, মাত্র ১৫ দিন আগে, জুলাই মাসের ৩০ তারিখে রেহানাকে নিয়ে জার্মানিতে গিয়েছিলাম। রেহানা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কলেজে গেলাম। সবাইকে রেখে গিয়েছিলাম, কামাল, জামাল, রাসেল। মাত্র ১৫ দিনের মাথায় শুনলাম, আমাদের কেউ নেই, আমরা নিঃস্ব। আমাদের দেশেও আসতে দেয়া হল না। একপর্যায়ে চাচা এসে আমাদের নিয়ে যায়।
দেশের জন্য কিছু করার তাগিদ থেকেই ফিরে আসি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে আসব। আমি জানি না কী করব, কোথায় থাকব, কই যাব। অনেক বাধা, অনেক বিপত্তি। তবু সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাকে আসতেই হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতির কাজ করে যেতাম আব্বার আদর্শ নিয়ে। তিনি দেশের জন্য কাজ করেছেন। বছরের পর বছর জেল খেটেছেন। আমরা কখনও টানা দুই বছরও আব্বাকে জেলের বাইরে পাইনি। এ নিয়ে আমাদের কোনো হা-হুতাশ ছিল না। আমার মা খুব চিন্তাশীল ছিলেন, তিনি বাসাও দেখতেন, বাহিরও সামলাতেন। সাংসারিক কোনো ঝামেলা তিনি আব্বাকে দিতে চাইতেন না। আমাদের দাদা-দাদি, চাচারা পারস্পরিক সহযোগিতা করতেন। কাজেই এমন একটি পরিবেশ থেকে আমরা উঠে এসেছি, যে মাথাতেই ছিল দেশের জন্য কিছু একটা করে যেতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে ফেরার পর থেকেই পদে পদে বাধা। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ১৯টি ক্যু হয়েছিল। এক সামরিক শাসকের মৃত্যুর পর আরেক সামরিক শাসক এলো। গণতন্ত্রের জন্য একটার পর একটা সংগ্রাম করেই গেছি। আমাদের বিশ্বাস ছিল, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা বলেন, আজ দেশে আ’লীগ এক নম্বর পলিটিক্যাল পার্টি। যে পার্টি মানুষের আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় থাকলে সাধারণত মানুষের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। আমরা ক্ষমতায় এসে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি বলেই ভোট পেয়েছি।
জনপ্রিয়তার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে মানুষের জন্য কাজ করেছি, উন্নয়ন করেছি, মানুষের ভাগ্য গড়ার জন্য কাজ করেছি। মানুষ তা উপলব্ধি করতে পেরেছে। এটা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো রাজনৈতিক নেতার জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতায় থেকেও মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি এটাও কিন্তু বিশাল অর্জন।
শেখ হাসিনা বলেন, নেতাকর্মীদের কাছে এটুকু চাইব, এই আস্থা ও বিশ্বাস যেন আমরা ধরে রাখতে পারি। ব্যক্তিগত জীবনে কি পেলাম, না পেলাম সে চিন্তা করিনি। দেশের মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, কতটুকু দিতে পারলাম সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, যারা বারবার আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল তারা সফল হয়নি। আওয়ামী লীগ কিন্তু আওয়ামী লীগের মতোই ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে।
১৯৮১ সাল থেকে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসা শেখ হাসিনা বলেন, একটা দলের সভাপতি হিসেবে ৩৮ বছর- এটা বোধহয় একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে।
এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত নেতাকর্মীরা সমস্বরে ‘না’ বলে ওঠেন।
তিনি বলেন, ৩৮ বছরে বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হোক, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হোক, এমন কোনো কাজ আমি বা আমার পরিবারের কোনো সদস্য কখনও করিনি। নিজেদের চাওয়া-পাওয়ার জন্য কাজ করিনি, কাজ করেছি মানুষের জন্য। সব সময় চিন্তা করেছি কি দিতে পারলাম, কতটুকু করতে পারলাম।
ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ক্ষমতা যেন আর স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের হাতে না যায়। কেউ যেন দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। ’৭৫-র পরবর্তী সময় ছাড়াও ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে নির্যাতন করার পরও দলকে টিকিয়ে রাখতে যারা অবদান রেখেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৩:০০ ১৯৪ বার পঠিত