জাতীয় শিল্পনীতির আওতায় এসএমই নীতিমালা ২০১৯’র খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এটি নতুন সংযোজন এবং জাতীয় শিল্পনীতির আলোকেই এটি করা হয়েছে। এই সেক্টরে ৭৮ লাখ অতি ক্ষুদ্র (মাইক্রে) এবং ক্ষুদ্র (স্মল) ও মাঝারি (মিডিয়াম) শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং জিডিপিতে এই খাতের অবদান প্রায় ২৫ শতাংশ।
আজ প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই নীতিমালার খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, ‘এই খাতের আওতায় ৭৮ লাখ শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং জিডিপি’র এক চতুর্থাংশ এই খাত থেকে অর্জিত হয়।’
শফিউল আলম বলেন, নতুন নীতিমালায় মূলত ৬টি বিষয়কে সামনে রাখা হয়েছে। এই ৬টি বিষয়ের প্রতিই মূলত ফোকাস করা হবে। যেগুলো হচ্ছে-
১. যারা এর বিনিয়োগকারী হবেন তাদের অর্থ প্রাপ্তির সুযোগটি সামনে রাখা,
২. প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সুযোগ,
৩. বাজারে প্রবেশের সুযোগ,
৪. শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ,
৫. ব্যবসায়ে সহায়তা প্রদান (এক্সেস টু বিজনেস সাপোর্ট সার্ভিসেস),
৬. তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ (এক্সেস টু ইনফরমেশন)
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই ৬টি বিষয় যেন উদ্যোক্তাদের সামনে সুযোগ করে দেওয়া হয় সেই লক্ষ্যকে সামনে রখেই এই নীতিমালাটা প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এখানে আমরা এসএমই বলতে যা বুঝি তার সঙ্গে আরো কয়েকটি বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। যেমন- মাইক্রো, কুটির শিল্প। অর্থাৎ মাইক্রো,কুটির ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প এসএসই। সমগ্র পৃথিবীতেই এভাবেই এসএসই কে সংজ্ঞায়িত করা হয়। সচিব বলেন, অনেকগুলো নতুন বিষয় এই নীতিমালার আওতায় আনা হয়েছে । যেমন- বাস্তবায়ন কৌশল এর ৪ এর (২) কৌশলগত এসএমই’র অর্থপ্রাপ্তিতে এর সুযোগ বৃদ্ধি করা। আরো রয়েছে এসএমই খাতে ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি করা, অর্থায়নের ব্যবস্থা করা, একটি নতুন প্রস্তাব এখানে রয়েছে, যেমন- এসএসই ক্রেডিট গ্যারান্টি ফান্ড চালু করা। (এটি চালু হলে মর্টগেজের ব্যবস্থা থাকবে না, একটু সহজীকরণ হবে।)
তিনি বলেন, সহজ শর্তে ও অল্প সুদে ঋণ প্রদানের কথা বলা হয়েছে। কৌশলগত লক্ষ্যের মধ্যে আরেকটি বিষয় রয়েছে। যেটি হচ্ছে- নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করার ক্ষেত্রে সহায়তা করা (স্টার্টআপ)। অনলাইনে ডিজিটাল প্রত্রিয়া চালুর মাধ্যমে স্টার্টআপ প্রত্রিয়া সহজ করা। তথ্য প্রযুুক্তির ব্যবহার নিয়ে বলা হয়েছে-ই কমার্স, অন লাইন সাপোর্ট, আউট সোর্সিং এবং আইটি ভিত্তিক অ্যাপলিকেশেনের মাধ্যমে এসএসইদেও সহায়তা দেওয়ার একটি ফোকাস থাকবে।
এই নীতিমালায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৬ ধরনের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তা হচ্ছে- নারী উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিন জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। তাদেরকে ঋণ দেওয়া। তাদের জন্য তহবিল গঠন।তাদেও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, তাদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং কাজের জন্য বাজার সংযোগের সুযোগ বৃদ্ধি করা। ফরোয়ার্ড এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের ব্যবস্থাও এখানে রাখা হয়েছে।
এছাড়া, ইনফো ডাইরেক্টরী তৈরীর বিষয়ে একটি গাইড লাইন দেওয়া হয়েছে, এসএমই তথ্য ভান্ডার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
তিনি বলেন, পরিবেশ বান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠায় এসএমই দের উৎসাহিত করা, শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এসএমইদের প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা দেওয়া এবং পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহার বিধি সম্পর্কেও এই নীতিমালায় বলা হয়েছে।
শফিউল আলম বলেন, এই নীতি বাস্তবায়নে দুই ধরনের পর্ষদের প্রস্তাব করা হয়েছে। একটি হচ্ছে শিল্প মন্ত্রী এবং অপরটি সচিবের নেতৃত্বাধীন।
মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন পর্ষদে শিল্পমন্ত্রী সভাপতি এবং প্রতিমন্ত্রী সহ সভাপতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, যেমন- বাণিজ্য ,অর্থ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পরিকল্পনা, পররাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, বস্ত্র ও পাট, সচিব বাউশি, সচিব কারিগরি, সচিব মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সচিব মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ, সচিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সচিব পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সহ এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানকে এই পর্ষদে রাখা হয়েছে। আর বেসরকারী খাতে ৫ জন প্রতিনিধি যেমন- সভাপতি এফবিসিসিআই এবং শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত ৩চন সহ মোট ৫ জন বেসরকারী ব্যক্তি। মোট ৩৭ জন কমিটির সদস্য হবেন।
অন্যদিকে সচিবের নেতৃত্বে যে কমিটি সেখানে ২৯ জন সদস্য থাকবেন। এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এখানে সদস্য রাখা হয়েছে। নির্বাহী পরিচালক বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বিবিএস’র পরিচালক, বিসিক’র চেয়ারম্যান, ইপিবি’র মহাপরিচালক বিডা’র একজন সদস্য, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একজন সদস্য, সদস্য বিসিএসআইআর, মহাপরিচালক বিটাক এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সদস্যগণ রয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই নীতিটা ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কার্যকর করা হবে।
এদিন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীর নৌ পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আইন-২০১৯ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পাকিস্তান আমলে প্রণীত হয় এই আইনটি। ১৯৭২ সালে এ সম্পর্কিত প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার জারি হয় (বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন অর্ডার-১৯৭২) এবং ১৯৭৬ সালে এবং ১৯৭৯ সালে এর ওপর দুটি সংশোধনী আনা হয় অর্ডিন্যান্স আকারে। যেহেতু এগুলো সামরিক আমলে জারিকৃত তাই নতুন আইনে এগুলোকে যুগোপযোগী করে বাংলায় প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের যে প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার তারসঙ্গে প্রস্তাবিত আইনে খুব বেশি ব্যবধান নেই কারণ এটি ক্রমান্বয়ে আপডেটেড হয়েই এ পর্যায়ে এসেছে।
সচিব বলেন, আইনে যে পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে তা হচ্ছে- এই কর্পোরেশনের অনুমোদিত মূলধন আগে ছিল ৫ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন সম্পর্কে বলা হয়েছিল- সরকার কতৃর্ক সময় সময় যেটা জোগান দেওয়া হবে সেটাই পরিশোধিত মূলধন। যা বাড়তে বাড়তে ৪৫ কোটি টাকায় এসে ঠেকেছে।
নতুন আইনে বলা হয়েছে কর্পোরেশনের অনুমোদিত মূলধন হবে ৫’শ কোটি টাকা আর পরিশোধিত মূলধনও সরকার জোগান দিয়ে একে ৫’শ কোটি টাকায় উন্নীত করবে।
পরিষদের গঠন- আগে একজন চেয়ারম্যান এবং ৪ জন সদস্য নিয়ে গঠিত ছিল। এখন প্রস্তাব করা হয়েছে একজন চেয়ারম্যান এবং ৪ জন পরিচালক এবং এর সাথে একজন খন্ডকালীন পরিচালক যুক্ত হবেন। যিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়য়ের যুগ্ম সচিব হবেন।
পরিষদের সভা, তারিখ এবং স্থান চেয়ারম্যান কর্তৃক নির্ধারিত হবে। আর সভায় চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে তিনি যাকে ক্ষমতা দেন সেরকম একজন সার্বক্ষণিক পরিচালক সভায় সভাপতিত্ব করবেন। আর সেই পরিচালকও যদি অনুপস্থিত থাকেন তাহলে সভায় উপস্থিত পরিচালকগণ কতৃর্ক মনোনীত একজন পরিচালক সভাপতিত্ব করবেন। কর্পোরেশনের কোন পাওনা থাকলে তা ১৯১৩ সালের পিডিআর’র অ্যাক্ট (পাবলিক ডিমান্ড রিকভারী অ্যাক্ট-১৯১৩) অনুযায়ী আদায় যোগ্য হবে।
গঠনতন্ত্র সম্পর্কে সচিব আরো জানান, চেয়ারম্যান সহ ৩ জন উপস্থিত থাকলে কোরাম হবে। বার্ষিক একটি প্রতিবেদন দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে, যেটি পরবর্তী অর্থবছর শেষ হওয়ার ৬ মাস আগেই সম্পন্œ করতে হবে। কর্পোরেশননের চেয়ারম্যান, কর্মকর্তা, কর্মচারিরা জনসেবক (পাবলিক সার্ভেন্ট) হিসেবে গণ্য হবেন। যেটি আগে ছিল না।
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল নারী টি টোয়িন্ট বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূল পর্বে সুযোগ পাওয়ায় মন্ত্রিসভা এদিন দলের কোচ, মাানেজার এবং অধিনায়ক সহ সকল খেলোযাড়কে অভিনন্দন জানিয়েছে। একটি শোক প্রস্তাবও প্রহণ করে মন্ত্রিসভা।
শফিউল আলম বলেন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নঈম চৌধুরীর মৃত্যুতে মন্ত্রিসভা গভীর শোক প্রকাশ করেছে।
এছাড়া বেশ কিছু বিষয় মন্ত্রিসভাকে অবহিত করণ করা হয় বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১:০৫:৪৩ ১০৬ বার পঠিত