আটলান্টিক পাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের দেশ পর্তুগাল। আগামী ৬ অক্টোবর জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্র করে প্রচারণায় রাজনৈতিক দলগুলো। পর্তুগালের জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচত করে থাকেন। আর বিভিন্ন জেলা থেকে ২৩০ আসনে এমপি’রা নির্বাচনে অংশ নেন। মেয়াদ ৪ বছরের।

পর্তুগালের সংসদের নাম এসাম্বলিয়া দ্য রিপাবলিকা। সংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর চুড়ান্ত হয় প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘ বিপ্লবী ইতিহাসের সাক্ষী পর্তুগিজদের সংসদ ইউরোপের অন্যতম আলোচিত সংসদ।

১৯৭৪ সালের গণতান্ত্রিক বিজয়ের পর এবারের ১৬তম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পর্তুগালে। এবারের নির্বাচনে পিএস সম্পাদক বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এন্তোনিও কস্তা ও প্রধান বিরোধী দল পিএইচডির রুই রিয়োর দলের মাঝে চলছে প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

মাসব্যাপী বিভিন্ন ডিবেটে অংশ নিয়ে ইতিমধ্যেই নির্বাচনী আমেজকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে সব রাজনৈতিক দলের প্রধানরা। ইতিমধ্যেই ৪ অক্টোবর শেষ হয়েছে শেষ নির্বাচনী প্রচারণা।

নির্বাচনকে সামনে রেখে সব জনমত জরিপে এগিয়ে আছে বর্তমান ক্ষমতাসীন স্যোসালিস্ট পার্টি। বিগত চার বছরে অর্থনৈতিক ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এই সরকারের আমলে এছাড়াও শহরগুলোতে এসেছে অবকাঠামোগত ব্যাপক পরিবর্তন। পুরনো ঐতিহ্যের বহু স্থাপনা সংস্কারের মাধ্যমে পর্যটন স্পটগুলোয় উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। তবে অতিরিক্ত পর্যটকদের চাপে লিসবন সহ পর্তুগালের বড় শহরগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র আবাসন সংকট। স্থানীয় অনেক নাগরিকরা ছাড়তে হয়েছে নিজেদের আবাসন। তাই এবারের নির্বাচনে শহরকেন্দ্রিক আবাসন একটি বড় ইস্যু সব বড় দলের জন্য।

পর্তুগাল শান্তিপ্রিয় দেশ। এখানে ইউরোপের অন্য দেশগুলোর মতো কট্টরপন্থী কোনো এজেন্ডা নিয়ে আসেন না কোনো দল। পর্তুগিজরা জাতিগতভাবে কট্টরপন্থার সমর্থন করেন না। তবে কনজারভেটিভ পর্তুগিজ পিপলস পার্টি সিডিএস এর নির্বাচনী ইশতেহার ও রাজনৈতিক অবস্থানের সমালোচনা করে পর্তুগিজ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এন্তোনিও কস্তা সিডিএস প্রধান অ্যাসুন্সাও ক্রিস্টা কে লেডি ডোনাল্ড ট্রাম্প হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচন ভোটে ভালো জয় পেয়েছিলো পিএস। পিএসডি কে পিছনে ফেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পর্তুগালের নেতৃত্বের ম্যান্ডেড পায় দলটি।

পর্তুগালের স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপপুঞ্জ মাদেইরাতে ইতিমধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। বরাবরের মতো বিরোধী পিএইচডি জিতেছে সর্বোচ্চ ২১টি আসন নিয়ে। তবে ইতিহাস করে পিএস এবার পেয়েছে সর্বোচ্চ ১৯ আসন। গেল বছর সেখানে তারা মোট ৬ আসন লাভ করে। এবার তাই এটি অনন্য ইতিহাস তাদের জন্য।

বিগত দিনে পর্তুগিজ স্যোশালিষ্ট পার্টি অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে, তাই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আবারও ক্ষমতায় আসতে ভোটারদের আহবান জানিয়েছে দলটি। আগের সরকারে বামদল ব্লক দ্য স্কেরদার সাথে জোট করে সরকার গঠন করলেও এবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের আশা করছে দলটি। তাই মিত্র ব্লক দ্য স্কেরদার সাথে এখনো কোনো আলোচনায় যায়নি দলটি। ক্যাটারিনা মার্টিন্সের নেতৃত্বে নির্বাচনে ব্লক এবারও ১০ভাগ পর্তুগিজ ভোট পাওয়ার হিসেব উঠেছে এসেছে জরিপে।

এবারের নির্বাচনে পরিবেশ আন্দোলন নিয়ে আন্দ্রে সিলভার দল উঠে এসেছে আলোচনায়। প্যান তার দলের নাম মানুষ-পশু-প্রকৃতি এই তিন দলের মূল রাজনৈতিক আলোচ্য। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নির্বাচনে তারা প্রথমবারের মতো আসন লাভ করে এবার। অনেকেই মনে করছেন বৈশ্বিক পরিবেশ প্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে দলটি ভালো করবে। প্যান এবার ভালো কিছু করতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। তবে অনেক পর্তুগিজদের ধারণা প্যান এখনো একটি দেশ পরিচালনার জন্য সমর্থ নয়। সেক্ষেত্রে নতুন দল এবং কম সংখ্যক কেন্দ্রীয় নেতার অন্তর্ভুক্তি অন্যতম কারণ।

ইউরোপের স্যোসালিস্টরা জনপ্রিয় না তবে পর্তুগালে ব্যতিক্রম। এখানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হচ্ছে স্যোশালিস্ট রাজনীতি। বিগত দিনে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে পর্তুগিজ স্যোসালিষ্ট। যদিও নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডায় বিভিন্ন কর্ম পরিবেশে বৈষম্য ফেরাতে বিগত দিনে তেমন সফল হয়নি দলটি। অভিবাসন বিষয়ে বেশ নমনীয় দলটি।

অন্যদিকে প্রধান বিরোধীদল পিএসডি জলবায়ু, পাবলিক হেলথ, অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বেশকিছু বিষয়কে সামনে রেখে তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছে। দলটির নির্বাচনী প্রচারের শ্লোগানে ছিলো পাবলিক হেলথে বর্তমান সরকারের ব্যার্থতার কথা। বর্তমান সরকারের আগে ক্ষমতায় ছিলো পিএসডি।

পর্তুগালে জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ আছে শুধুমাত্র নাগরিকদের।অভিবাসীদের মাঝে নাগরিকত্ব প্রাপ্তর ভোট প্রদানের সুযোগ পেয়ে থাকেন। পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়া বাংলাদেশিরা বেশিরভাগই বসবাস করেন ব্রিটেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। তাই সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে ভোটারদের উৎসাহী করতে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা।

পর্তুগিজসহ ইউরোপিয়ান বেশিরভাগ নাগরিকরা ভোটদানে বিরত থাকেন আগ্রহ নেই তরুণদের মাঝেও। তাই অভিবাসী কমিউনিটিগুলোর প্রতি বিশেষ নজর থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। তবে বিগত দিনে অভিবাসীদের জন্য স্যোসালিস্ট পার্টির সহনশীল ও ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। যার ফলে অভিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে স্যোশালিস্ট পার্টির গ্রহণযোগ্যতাও বেশী। এখন ৬ই অক্টোবর দেখার বিষয় সাও বেন্তোর এসাম্বলিয়া দ্য রিপাবলিকার নেতৃত্ব কারা লাভ করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:২৮:৪৯   ২৯০ বার পঠিত