বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক। তর্কসাপেক্ষে বা পরিসংখ্যানের বিচারে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তিনিই সর্বকালের সেরা অধিনায়ক। চলে এসেছেন ক্যারিয়ারের শেষপ্রান্তে, হয়তো খেলবেন আর গুটিকতক ম্যাচ।
সবশেষ বিশ্বকাপে ভালো করতে না পারায়, ক্রিকেটভক্তদের একাংশ হয়তো নাখোশ তার ওপর। তবে প্রায় ২০ বছরের খেলোয়াড়ি জীবনে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যা দিয়েছেন, তা তাকে পরিণত করেছে কোটি হৃদয়ের ভালোবাসায়।
২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পুনরায় অধিনায়কত্ব পেয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। তার অধীনে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে টাইগাররা, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পৌঁছেছে সেমিফাইনালে আর ২০১৬ সালের এশিয়া কাপে হয়েছিল রানার্সআপ।
এছাড়া চলতি বছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো কোনো বহুজাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপাও জিতেছেন তিনি। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলগুলোকে হারানো। শ্রীলঙ্কার মাটি থেকে কোনো সিরিজ না হেরে দেশে ফেরার সাফল্যের দেখাও মিলেছে মাশরাফির অধিনায়কত্বে। তবে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে মাত্র ৩ জয় পাওয়ায় মেটেনি প্রত্যাশা।
তবু ইতিহাস থেকে মুছে যায়নি গত পাঁচ বছরের অসাধারণ সব সাফল্যের গল্প। যেমনটা কখনোই দেশের ক্রিকেট ইতিহাস থেকে কখনোই মুছবে না মাশরাফি বিন মর্তুজার নাম। বাংলাদেশ ক্রিকেটার অনেক সাফল্যের রুপকার মাশরাফি হয়ে থাকবেন ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
অধিনায়কত্বের বাইরে খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারও বেশ সমৃদ্ধ মাশরাফির। এখনও পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। ২১৭ ম্যাচে তার শিকার ২৬৬ উইকেট, ৫ উইকেট নিয়েছেন একবার, ৪ উইকেট সাতবার। এছাড়া ব্যাট হাতেও ওয়ানডে ক্রিকেটে রয়েছে ১৭৮৬ রান।
২০০৯ সালের পর আর খেলতে পারেননি টেস্ট ক্রিকেট। প্রায় দশ বছর আগে সাদা পোশাকে শেষ টেস্ট খেললেও, দেশের পেসারদের মধ্যে তিনিই এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী। ৩৬ ম্যাচে তার ঝুলিতে রয়েছে ৭৮টি উইকেট। এ ফরম্যাটে তার রান সংখ্যা ৭৯৭। এছাড়া কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে ৫৪ ম্যাচে ৪২ উইকেটের সঙ্গে ৩৭৭ রান করেছেন মাশরাফি।
তার অধীনে বাংলাদেশ দল ৮৫টি ওয়ানডে খেলে জিতেছে ৪৭টিতে, যা কি না দেশের ইতিহাসে যেকোনো অধিনায়কদের মধ্যে সর্বোচ্চ। টি-টোয়েন্টিতে ২৮ ম্যাচে ১০ জয় নিয়েও বাংলাদেশের অন্যান্য অধিনায়কদের চেয়ে ওপরেই অবস্থান করছেন তিনি। এছাড়া ২০০৯ সালে টেস্ট ক্রিকেটে তার প্রথম অধিনায়কত্বের ম্যাচেও জিতেছিল বাংলাদেশ দল। সে ম্যাচের পর ইনজুরির কারণে আর সাদা পোশাকে খেলতে পারেননি দেশের ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা এ অধিনায়ক।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেক প্রথমের শুরু যার হাত ধরে, যিনি অনেক অনেক সাফল্যের রূপকার- সেই মাশরাফি বিন মর্তুজার আজ ৩৬তম জন্মদিন। একে একে ৩৬টি বসন্ত পার করে শুরু করলেন ৩৭তমটি। ১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর নড়াইলে জন্ম, বেড়ে ওঠা চিত্রা নদীর পাড়েই।
কাকতালীয় ব্যাপার হলো, ২০১৪ সালের একইদিনে অর্থাৎ ৫ অক্টোবর তারিখেই পৃথিবীর বুকে এসেছেন মাশরাফির দ্বিতীয় সন্তান পুত্র সাহিল মর্তুজা। ফলে আজ মাশরাফিপুত্র সাহিলের ৫ম জন্মদিন। নিউজটুনারায়ণগঞ্জ পক্ষ থেকে বাবা-পুত্রকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩২:৪০ ৩৯৯ বার পঠিত