সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কাউন্সিলর ময়নুল হক ওরফে মনজুকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর টিকাটুলির শহীদ নজরুল ইসলাম রোডের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় তার অফিস থেকে দুটি পিস্তল, মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও যৌন উত্তেজক সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। রাতে মনজুর বিরুদ্ধে ওয়ারী থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে আলাদা দুটি মামলা করেছে র্যাব।
মনজু গ্রেফতার হওয়ায় টিকাটুলির রাজধানী মার্কেটের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা আনন্দ মিছিল এবং মিষ্টি বিতরণ করেছেন।
জানা গেছে, রাজধানীর টিকাটুলি এলাকার রাজধানী সুপারমার্কেট ও নিউ রাজধানী সুপারমার্কেটের ‘স্বঘোষিত’ সভাপতি ছিলেন কাউন্সিলর মনজু।
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের আওতাধীন এই দুই মার্কেটের এক হাজার ৭৮৮টি দোকান থেকে প্রতি মাসে চাঁদা আদায় করতেন দোকানপ্রতি ৯৫০ টাকা। এর বাইরে ঈদে বা পূজায় দিতে হতো বাড়তি চাঁদা। জেনারেটর, বেয়ারসহ অন্যান্য খরচের নামেও দিতে হতো চাঁদা।
তার বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও দখলবাজির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও র্যাব সদর দফতরসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ, এমনকি মামলা করলেও পাননি প্রতিকার।
টানা আট বছর মনজু আর তার ক্যাডার বাহিনীর কাছে জিম্মি ছিলেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। অবৈধ টাকায় আঙুল ফুলে হয়েছেন বটগাছ।
দুই মার্কেট থেকে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকার চাঁদা তুলে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠাতেন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা পরিবারের কাছে। মাদক সেবন ও কারবারে জড়িত মনজু মাতাল অবস্থায় ব্যবসায়ীদের হুমকি দিতেন। তার কথার অবাধ্য হলে ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ধরে এনে টর্চার সেলে চালাতেন নির্যাতন।
প্রতিবাদ করায় হুমকি পেয়ে ব্যবসায়ী আজমল হোসেন, হাফিজুর রহমান, ফজলুল হক, সেন্টু চৌধুরী, আবু বকর ও মতিউর রহমান ওয়ারী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মার্কেটের সব দোকান থেকে বিদ্যুৎ বিল, জেনারেটর বিল এসব বাবদ মনজু চাঁদা নিতেন। এ ছাড়া টিকাটুলিতে শ্রীশ্রী স্বামী ভোলানন্দগিরি আশ্রম ট্রাস্টের সম্পত্তি দখলের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। ওই মামলার প্রধান আসামি ময়নুল হক মনজু।
চাঁদাবাজির ঘটনায় হাতেনাতে কয়েক দফায় তার লোকজন গ্রেফতারও হয়। কিন্তু কিছুতেই দাপট কমছিল না। শেষে র্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে তার নানা অপকর্মের ফিরিস্তি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব টিকাটুলির অফিসে অভিযান চালিয়ে কাউন্সিলর ময়নুল হক মনজুকে গ্রেফতার করে। পরে হাটখোলা রোডে তার বাসায় অভিযান চালায়।
এসব স্থান থেকে দুটি পিস্তল, মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। বাড়ি থেকে মনজুর গাড়িচালক সাজ্জাদকেও গ্রেফতার করে র্যাব।
মনজুকে গ্রেফতারের ব্যাপারে র্যাব-৩ অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, টিকাটুলির রাজধানী সুপারমার্কেট ও নিউ রাজধানী সুপারমার্কেটে চাঁদাবাজি, অবৈধ দখলদারির পাশাপাশি মাদকের কারবারের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
তিনি আরও বলেন, ‘মনজুর বৈধ কোনো আয় নেই। সন্ত্রাস আর চাঁদাবাজিই তার অর্থের উৎস। সেই টাকা তিনি হুন্ডির মাধ্যমে আমেরিকায় পাঠান বলেও অভিযোগ আছে। কী পরিমাণ অর্থ তিনি পাচার করেছেন এটি তদন্তের বিষয়।
কাউন্সিলর মনজু নিজেও একজন মাদকসেবী। তাকে গ্রেফতারের পর আরও অন্তত অর্ধশত অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার দায়ের হওয়া চাঁদাবাজির মামলাটি ছাড়াও আট কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে আরও দুটি মামলা রয়েছে এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৯:৪৫ ১৬৫ বার পঠিত