নিউজ২নারায়ণগঞ্জঃ ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকের পর পক্ষাঘাতে (প্যারালাইসিস) আক্রান্ত হলে, কারও জন্মগত হৃদরোগ থাকলে চিকিৎসার জন্য সরকার ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিচ্ছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে এ সহযোগিতা চলছে ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকেই। এসব রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এর প্রচার কম হওয়ায় আবেদনের পরিমাণ এসব রোগের বিস্তারের তুলনায় খুব বেশি নয় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, এসব রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধপত্র কিনতে বিপুল পরিমাণ ব্যয় করতে হয়। গরিবদের পক্ষে এই টাকা যোগাড় করতে গিয়ে অনেক সময় সহায় সম্বল ব্যয় করতে হয়। এই দিক বিবেচনা করেই সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।
আবেদন করার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এবং ওয়েবসাইটে ফরম পাওয়া যায়। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেও সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মীরা কাজ করেন। সেখান থেকেও ফরম নিয়ে নির্ধারিত কাগজপত্র পূরণ করে আবেদন করতে হয়।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনের সহযোগিতায় প্রকৃত দুঃস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের শনাক্ত করেই তবে দেয়া হয় অনুদান।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) জুলিয়েট বেগম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের কাছে সব সময়ই আবেদন আসে। আর যাচাই বাছাই করে আমরা সহায়তা করে থাকি।’
তবে প্রতি বছরে কী পরিমাণ রোগীদেরকে সহযোগিতা করা হয় আর কত টাকা এই খাতে ব্যয় হয় সে ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, এই পাঁচটি রোগের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হলেও অন্য যেকোনো সমস্যাতেও সহায়তা পাওয়া যায় রোগীর সমস্যা অনুযায়ী।
আবেদনের নিয়মাবলী
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, যারা আবেদন করবেন, তাদেরকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। আর আবেদনকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ দুঃস্থ ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
আবেদনের সঙ্গে রোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত ফটোকপি এবং সদ্য তোলা তিন কপি সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হয়।
রোগীর বয়স আবেদনের তারিখে ১৮ বছরের কম অথবা মুমূর্ষু অবস্থায় থাকলে তার বৈধ অভিভাবক আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি প্রথম শ্রেণির গেজেটেড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে। সেই সঙ্গে জমা দিতে হবে সত্যায়িত তিন কপি ছবি।
কী কী জমা দিতে হবে?
আবেদনের সঙ্গে বেশ কিছু নথিপত্র যুক্ত করতে হয়। যেমন: নির্ধারিত ফরমে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের রোগের প্রত্যয়ন পত্রের মূলকপি সংযুক্ত করতে হবে।
রোগীকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট রোগের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ও পরীক্ষার প্রতিবেদন আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে হিস্ট্রোপ্যাথলজি, সাইটোপ্যাথলজি, ব্রোনম্যারো বা অন্যান্য পরীক্ষার প্রতিবেদন জমা দিতে হয়।
কিডনি রোগের ক্ষেত্রে একিউট রেন্টাল ফেইলিওর অথবা অথবা ক্রনিক্যাল রেন্টাল ফেইলিওর এ আক্রান্ত ডায়ালাইসিস সেবা নিচ্ছে, কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে অথবা কিডনি প্রতিস্থাপন করেছে এমন রোগীদেরকে প্রযোজ্য রিপোর্ট এবং রক্তে ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনের মাত্রার রিপোর্টও জমা দিতে হয়।
লিভার সিরোসিস রোগের ক্ষেত্রে লিভারের আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
স্ট্রোকে পক্ষাঘাতে আক্রান্তদের নিউরোলজিস্ট কর্তৃক প্রত্যায়িত হতে হবে এবং রেন্টাল ফেইলিয়র, এমআরআই এবং সিটিস্ক্যান রিপোর্ট জমা দিতে হয়।
জন্মগত হৃদরোগের ক্ষেত্রে ইকো কার্ডিওগ্রাম রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
অগ্রাধিকার পাবে যারা
আর্থিক অবস্থান বিবেচনায় শিশু, নিঃস্ব, উদ্বাস্তু ও ভূমিহীনকে ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
সামাজিক অবস্থার বিবেচনায় অগ্রাধিকার পান বয়োজ্যেষ্ঠ, বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা, বিপত্নীক, নিঃসস্তান এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিরা।
প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভূমিহীনকেও অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে বসতবাড়ি ব্যতীত কোনো ব্যক্তির জমির পরিমাণ ০.৫০ একর বা তার কম হলে তিনি ভূমিহীন বলে গণ্য হবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪০:৪৮ ৩০৯ বার পঠিত