নিউজটুনারায়ণগঞ্জঃ ৩২ বছর পর শিরোপার জয়ের প্রত্যাশায় পা রাখা আর্জেন্টিনার বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে নক আউট পর্বে যে পা রেখেছে ক্রোয়েশিয়া। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই উল্লাসে ফেটে পড়লো নিজনি নভগোরোদে স্টেডিয়াম। আর ২০০২ সালের পর আবারও গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়ের শঙ্কা ভর করেছে আর্জেন্টাইন শিবিরে।
বিশ্বকাপের আগে সর্বশেষ দু’দলের দেখা হয়েছিল ২০১৪ সালে। সেবার জিতেছিল আর্জেন্টিনাই। কিন্তু সেই ফলাফলের ভয়াবহতা যে এতটা নিষ্ঠুর হবে কে জানতো। এর আগে ক্রোয়েটরা নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে অর্থাৎ ১৯৯৮ এ আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয়ে সে ম্যাচে ১-০ গোলে পরাজিত হয়।
pran ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপের পর গ্রুপপর্বে এটাই আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় হার। দলটির শেষ ষোলর স্বপ্ন এখন সুঁতোর উপর ঝুলছে। আর্জেন্টিনাকে তাকিয়ে থাকতে হবে আগামীকালের আইসল্যান্ড ও নাইজেরিয়া ম্যাচের ওপর। সেই সঙ্গে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জয় পেতেই হবে। যদি আগামীকাল আইসল্যান্ড নাইজেরিয়াকে পরাজিত করে এবং ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ড্র করে তাহলে ক্রোয়েটদের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে নক আউট পর্ব নিশ্চিত করবে তারা। তখন আর্জেন্টিনা শেষ ম্যাচে জিতলেও কোনও কাজে আসবে না।
পক্ষান্তরে আইসল্যান্ড ও নাইজেরিয়ার ম্যাচ আগামীকাল ড্র হলে এবং আর্জেন্টিনা শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়াকে পরাজিত করলে ও ক্রোয়েশিয়া তাদের শেষ ম্যাচে আইসল্যান্ডকে পরাজিত করলে কিংবা তাদের সঙ্গে ড্র করলেই কেবল আর্জেন্টিনা নক আউট পর্বে উতরে যাবে।
নিজনি নভগোরোদে নিজেদের ডু অর ডাই ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। ম্যাচে শুরু থেকেই ছন্নছাড়া ছিল আলবেসিলেস্তেরা। পুরো ম্যাচে কখনোই তাদের দলীয়ভাবে দেখা যায়নি। আর্জেন্টিনাকে ক্রোয়েশিয়া আজকে ৫-৭ গোল দিলেও কিছু করার ছিল না। কারণ বার বার তাদের দূর্বল ডিফেন্স ভেঙে ঢুকে যাচ্ছিল। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা আর্জেন্টিনা গোলরক্ষকের অদূরদর্শিতা। প্রথম গোলটিতো তারই প্রমাণ।
প্রথমার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণ শানাতে থাকে ক্রোয়েশিয়া। সে হিসেবে ৪ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো তারা। কিন্তু পেরেসিচের বা পায়ের শট আঙুলের টোকায় রক্ষা করেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক কাবায়েরো। ১২ মিনিটে মেসিও সুযোগ পেয়েছিলেন গোলের। সতীর্থের মাথার উপর দিয়ে চিপ করা বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন এই বার্সা তারকা।
২১ মিনিটে লেফট উইং দিয়ে মার্কস আকুনিয়ার আচমকা বা পায়ের শট গোলবারে লেগে প্রতিহত হলে গোলবঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা। ৩০ মিনিটে আর্জেন্টিনার হয়ে গোলের সবচেয়ে সহজ সুযোগটি পেয়েছিলেন এনজো পেরেজ। মাত্র ছয় গজ দূর থেকে মেজার থেকে বল পেয়েও উন্মুক্ত গোলে বল না মেরে বাইরে পাঠান এই রিভার প্লেট তারকা।
আজও নিজের ছায়া হয়েছিলেন বিশ্বসেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত কোন দলই গোল না পাওয়ায় গোলশূন্য নিয়ে বিরতিতে যায় উভয় দল।
বিরতি থেকে ফিরেই হতাশায় ডুবতে হয় আর্জেন্টিনাকে। বিশেষ করে বলতে হয় দলকে পুরোটাই ডুবিয়ে দেন গোলরক্ষক কাবায়েরো। গোলরক্ষকের কাছে ব্যাক পাস দিয়েছিলেন মার্কাদো। গোলরক্ষক বলটি হাতে না নিয়ে শট দিয়ে ক্লিয়ার করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বলটি উপরে উঠে যায়। গোলের কাছাকাছি জায়গা থেকে ভলিতে বল জালে পাঠিয়ে দেন রেবিক।
ম্যাচের ৬৪ মিনিটে গোল পরিশোধের সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। ক্রোয়েশিয়ার গোলপোস্টের পাশের জটলা থেকে শট নিয়েছিলেন সুপারস্টার মেসি। কিন্তু তার বার্সেলোন সতীর্থ ইভান রাকিতিচ পা দিয়ে দারুণ দক্ষতায় বলটি আটকে গোলবঞ্চিত করেন আর্জেন্টিনা ও মেসিকে।
এরপর ম্যাচের ৮০ মিনিটে সেই জাদুকরী মুহূর্ত। ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডার ও অধিনায়ক মদ্রিচ আর্জেন্টিনার ডিবক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত শট নেন। তার বাঁকানো শটটি গোলরক্ষক কাবায়েরোর প্রচেষ্টাকে মাটি করে দিয়ে জড়িয়ে যায় জালে।
যোগ করা সময়ে তৃতীয় গোলটি করেন রাকিতিচ। কোভাসিচের পাস থেকে আয়েশি ভঙ্গিতে বল জালে জড়ান তিনি। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার পর বিমর্ষ মেসিরা মাঠ ছাড়েন। তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনেক আর্জেন্টাইন সমর্থক। কিংবদন্তি ম্যারাডোনার চোখেও জল। ম্যাচ শেষে সবার আগে টানেলে ঢুকলেন। মেসি মাঠেও এমন নিঃসঙ্গ।
যুগোস্লাভিয়ার কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৯৮ সালে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলেছিল ক্রোয়েশিয়া। সেবার জাদুকরী স্ট্রাইকার ডেভর সুকারের নৈপুণ্যে সেমিফাইনালে খেলেছিল দলটি। সেখানে হারলেও তৃতীয় হয়ে দেশে ফিরেছিল ক্রোয়াটরা। সেই বিশ্বকাপের পর আর গ্রুপপর্বের বাধা পেরোতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। তবে ২০ বছর পর রাশিয়ায় এসে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করে ফেলেছে দলটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৪:১৩ ৩০৯ বার পঠিত