৯ কেন্দ্র ছাড়া অনিয়ম কোথায়, প্রমাণ চান কাদের

প্রথম পাতা » গাজীপুর » ৯ কেন্দ্র ছাড়া অনিয়ম কোথায়, প্রমাণ চান কাদের
বুধবার, ২৭ জুন ২০১৮



---গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটে স্থগিত নয়টি কেন্দ্র ছাড়া কোথায় কোথায় অনিয়ম হয়েছে, বিএনপির কাছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ চেয়েছেন ওবায়দুল কাদের।

বুধবার সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক এই কথা বলেন।

মঙ্গলবার গাজীপুরের ভোটের ফলাফল নিয়ে দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য তুলে ধরতে গণমাধ্যমকর্মীদের ডাকেন কাদের।

আলোচিত এই ভোটে বিএনপিকে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। নৌকা প্রতীক নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম যেখানে চার লাখ ১১ ভোট পেয়েছেন, সেখানে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার পেয়েছেন এক লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট। অর্থাৎ বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ ভোট বেশি পেয়েছে দুই লাখ দুই হাজার ৩৯৯টি।

গাজীপুর এমনিতে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত। তবে ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্ল্যা খান বিএনপির এম এ মান্নানের কাছে এক লাখ ৫৩ হাজার ভোটে হেরে গিয়েছিলেন।

দলীয় প্রতীকে প্রথম ভোটে আগে যত ভোটে আওয়ামী লীগ হেরেছিল, এবার ব্যবধানটা তার চেয়ে বেশি হওয়ায় ক্ষমতাসীন দলে স্বস্তি ফিরেছে। যদিও বিএনপি অভিযোগ করছে, কারচুপি করে তাদের জয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এই ভোট বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেয়ারও দাবি করেছে দলটি।

ভোটের দিন কিছু কেন্দ্রে গোলযোগের খবর এসেছে গণমাধ্যমেই। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, মোট নয়টি কেন্দ্রে জাল ভোট, সিল মারার ঘটনা ঘটেছিল এবং প্রতিটিতেই তারা ভোট বন্ধ করে দিয়েছেন। বাকি ৪১৬টি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে নির্বিঘ্ন।

আর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে যে ছয়টি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে, সেখানেও আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে ব্যবধান ভোটের সামগ্রিক চিত্রের মতোই। এখানেও ধানের শীষের দ্বিগুণেরও বেশি ভোট পেয়েছে নৌকা।

কাদের বলেন, ‘অনিয়ম যেটা, আমরা সেটাকে অনিয়ম হিসেবে মেনে নিয়েছি। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে যে অহেতুক দ্বন্দ্ব, কিছু ঘটনার ঘটেছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য ৯টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত রাখা হয়েছে। এই ৯ কেন্দ্র ছাড়া কোথায় কোথায় অনিয়ম হয়েছে? তথ্য প্রমাণ নিয়ে বিএনপিকে এটা বলতে হবে। অন্ধকারে ঢিল ছুড়লে হবে না। এটা একটা স্পর্শকাতর বিষয়।’

কোথায় এজেন্ট বের করা হয়েছে?

বিএনপির অভিযোগ, তারা কেন্দ্রে যেসব এজেন্ট দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে একশরও বেশি জনকে বের করে দেয়া হয়েছে।

তবে বিএনপির এজেন্ট তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রতিটি বুথে তো দূরের কথা, প্রতিটি কেন্দ্রে কাউকে দায়িত্বই দেয়া হয়নি। একটি ওয়ার্ডে ছয়টি কেন্দ্রের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে একজন মাত্র নেতাকে।

কাদের বলেন, ‘আপনাদের কাগজপত্র যদি না থাকে, রিটার্নিং অফিসার যদি তাদের বের করে দেয় সেখানে আওয়ামী লীগের তো কোনো হাত নেই।’

বিএনপির অভিযোগের সমন্বয়হীনতা নিয়েও কথা বলেন কাদের। বলেন, ‘বিএনপি নেতারা কখনও নয়াপল্টন কার্যালয়ে,‌কখনও নির্বাচন কমিশনের অফিসে বসে ক্রমাগত মিথ্যাচার করেছে। তারা সকালে গাজীপুর থেকে বলে ১০টি, পরে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বলে ২১টি কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে। বিএনপি অফিস থেকে বলে একশটি কেন্দ্র থেকেম আবার সন্ধ্যা গড়াতে গড়াতে এই সংখ্যা দুইশতে। আবার গভীর রাতে বলে চারশত কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে। তাহলে বলুন কোনটা বিশ্বাস করবেন?’

‘আপনার বলুন, কোন এজেন্টকে বের করে দেখা হয়েছে? তথ্য প্রমাণসহ বলুন। তার সংখ্যা কত বলুন? দশ, ১০০, ২০০ নাকি ৪০০? কত?’

‘ইভিএমেও তো একই ব্যবধান’

গাজীপুরে ব্যালটে নেয়া ভোট কেন্দ্রের মতোই যন্ত্রে ভোট নেয়া কেন্দ্রের ফলাফলেরও কোনো পার্থক্য না থাকার বিষয়টিও তুলে ধরেন কাদের।

সার্বিকভাবে যেমন বিএনপির দ্বিগুণ ভোট পেয়েছে আওয়ামী লীগ, তেমনি ইভিএমের ছয় কেন্দ্রেও নৌকার পক্ষে ভোট পড়েছে ধানের শীষের দ্বিগুণের বেশি।

কাদের বলেন, ‘ইভিএম পদ্ধতির ভোটের মার্জিন গোটা নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে।

‘বিএনপির নেতারা বুঝতে পারেনি ভীতি সঞ্চার করে জনগণের মতামত পরিবর্তন করা যায় না।’

‘জনগণকে অসম্মান করেছে বিএনপি’

গাজীপুরে ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি গাজীপুরের জনগণের অধিকার, গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি চরম অসম্মান করেছে বলেও অভিযোগ করেন কাদের।

গাজীপুরবাসী আহসানউল্লা মাষ্টারের খুনিদের সমুচিত জবাব দিয়েছে বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতা। বলেন, ‘তাদের নালিশ গাজীপুরের মানুষ গ্রহণ করেনি। এখন গাজীপুর নিয়ে একটা আন্দোলন করুক না। দেখুক জনগণ সাড়া দেয় কি না।’

‘দেবে না। বাংলাদেশের মানুষ গাজীপুরের নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও প্রমাণ করেছে নেতিবাচক রাজনীতি দিন শেষ। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির দিন শেষ। বোমাবাজির-লুটপাটের রাজনীতির দিন শেষ।’

বিএনপির চক্রান্ত প্রকাশ হয়ে গেছে

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নেতা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সঙ্গে এক যুবদল নেতার কথিত টেলিফোনালাপের বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন কাদের। বলেন, ‘বিএনপি নৌকার ব্যাচ লাগিয়ে ভোট সন্ত্রাস করতে চেয়েছে, যা তাদের একজন কেন্দ্রীয় নেতা শিমুলিয়ার স্থানীয় নেতার ফোনালাপে বেড়িয়ে এসেছে। তা থেকে প্রমাণিত বিএনপি বরাবরের মত পরিকল্পিতভাবে অরাজকতা সন্ত্রাস, বিশৃঙ্খলা করার, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করেছে এবং তাদের ষড়যন্ত্র জাতীর সামনে উঠে এসেছে।’

‘বিএনপির কর্মীদের নৌকার ব্যাচ লাগিয়ে নির্দেশনা দিয়েছে সেটাও দেশবাসীর কাছে দিবালোকের মতো পরিষ্কার। বিএনপির নাশকতার অপরাজনীতি ধরা পরার পরও কি বিএনপি নেতাদের শুভ বুদ্ধি উদয় হবে না।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:১২:২৬   ৩১১ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

গাজীপুর’র আরও খবর


উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করতে আরো উন্নত জাতের ধান উদ্ভাবন করতে হবে - কৃষিমন্ত্রী
রাজধানীর আরব আমিরাত ভিসা সেন্টারে এসি বিস্ফোরণ, নিহত ১
কালিয়াকৈরে আগুনে পুড়ে নিহত চার, অর্ধ শতাধিক ঘর পুড়ে ছাই
মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ ২৬ মার্চ - মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী
গাজীপুরে অজ্ঞান পার্টির ৪ সদস্য ও ৩ ছিনতাইকারী আটক
কালিয়াকৈরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সরকারি সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী
মোটরসাইকেলে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় এসআই নিহত
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বাস-ট্রেন সংঘর্ষে নিহত ১
কালিয়াকৈরে ভুয়া র‌্যাব সদস্যসহ আটক ২
বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূর্ত প্রতীক - যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী

আর্কাইভ